শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সুস্থ ও সুন্দর ত্বক

ব্রণ, কালো দাগ এবং রোদে পোড়াভাব কাটাতে প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা। ক্লিনিক বা পারলারে দৌড়ঝাঁপ নয়, নিয়ম মেনে ঘরোয়া টোটকাই যথেষ্ট।

সুস্থ ও সুন্দর ত্বক

ছবি : ফারহান আহমেদ

সুন্দর, মসৃণ ত্বক সবারই কাম্য। কিন্তু ব্রণ, কালো দাগ, রোদে পোড়াভাব সব আয়োজন পন্ড করে দেয়। অনেকের আবার ফুসকুড়ি, ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস লেগেই থাকে। মনে রাখবেন, এসব সমস্যার প্রধান উৎস অনিয়ন্ত্রিত জীবনব্যবস্থা। যার মধ্যে রয়েছে দুশ্চিন্তা, নির্ঘুম রাত কাটানো, বাইরের ধুলো-ময়লা এবং রোদের তাপকে তোয়াক্কা না করা। আর এসব কিছু সামলে বাজারের চলতি পোডাক্টে ভরসা না করে ঘরোয়া তৈরি উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন।

 

ত্বক বুঝে নিয়মিত পরিচর্যা

রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মুখে ও গলায় নারিশিং ক্রিম ব্যবহার করুন। শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা নিয়মিত ক্রিম ব্যবহারে উপকার পাবেন। পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন বা দুই দিন ফেস মাস্ক ট্রাই করুন। মধু, সামান্য দুধ ও আমন্ড অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। অন্যদিকে যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তাদের সমস্যার কমতি নেই। ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস বা চামড়ার অস্বাভাবিকতা এমন ত্বকের সবচেয়ে বড় শত্রু। সপ্তাহে তিন দিন ফেশিয়াল স্ক্রাবার ব্যবহার করতে পারেন। এমন ত্বকের তেলতেলে ভাব কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন। এ ক্ষেত্রে মুলতানি মাটি খুব ভালো। মুলতানি মাটির সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। মুখের অতিরিক্ত তেলাভাব কমে আসবে। যাদের ত্বক প্রাণহীন নির্জীব, তারা সপ্তাহে দুই-তিন দিন ফেশিয়াল স্ক্রাবার ব্যবহার করুন। মধু, লেবুর রস এবং ডিমের সাদা অংশ মিশিয়েও ট্রাই করতে পারেন। ৫ মিনিট পর ভেজা হাতে হালকা ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন, ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরে এসেছে।

 

রোদে পোড়াভাব

কাজে হোক বা বেড়ানোয়, অতিরিক্ত রোদে থাকলে ত্বকে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়। রোদে পোড়াভাব কাটাতে পাতি লেবুর রস এবং পাকা পেঁপে বেশ উপকারী। উপকরণ দুটি একসঙ্গে মিশিয়ে দাগের ওপর লাগিয়ে নিন। আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। এসব ছাড়াও অ্যালোভেরা জেল, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ক্রিমও ট্রাই করতে পারেন। উপকার পাবেন।

 

চোখের নিচে কালো দাগ

সাধারণত অপুষ্টি, দুশ্চিন্তা, অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে চোখের নিচে কালো দাগ দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে বংশ পরিক্রমায় এমন সমস্যা দেখা দেয়। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, দুশ্চিন্তা না করা এবং পর্যাপ্ত ঘুমালে সমস্যা সমাধান হবে। কিন্তু যাদের বংশগতভাবে চোখের নিচে কালো দাগ হয়, তাদের ক্ষেত্রে এই দাগ সামান্য কমে। পুরোপুরি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম। সমপরিমাণ আলুর রস ও শসার রস মিশিয়ে চোখের নিচে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। উপকার পাবেন।

 

ব্রণ রোগ

নানা কারণে ব্রণ রোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যানড্রোজেন হরমোন বেড়ে গেলে ত্বকে তৈল্যগ্রন্থির সংখ্যা বেড়ে যায়, ফলে ব্রণ রোগ দেখা দেয়। অনেকের আবার বংশগত কারণেও হয়। এ সমস্যা সমাধানে ঠিক কী কারনে ব্রণ  হচ্ছে, তা আগে জানা দরকার। ঘরোয়া উপায়ে ব্রণের প্রবণতা কমিয়ে আনতে এক টেবিল চামচ সর পড়া দুধের সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে অ্যাকনের ওপর লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর ভেজা তুলো দিয়ে হালকা হাতে মুছে নিন। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মুখ পরিষ্কার করে নিন। তারপর চন্দনবাটা বা শঙ্খ পাউডার মুখে লাগিয়ে লাগিয়ে নিন। পরেরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। রোজকার নিয়ম মেনে চললে ব্রণ চিরদিনের জন্য বিদায় নেবে।

 

র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি

ত্বকে র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি সমস্যা সারাতে চন্দনবাটার চেয়ে আর ভালো কিছু নেই। সব ধরনের ত্বকের জন্য এটি উপযোগী। চন্দনগুঁড়োর সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে র‌্যাশের ওপর লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে উপকার পাবেন।

 

বলিরেখার সমস্যায়

বয়স বাড়লে এমনিতেই ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে উল্টোটা হয়। অল্প বয়সে অনিয়মিত জীবনযাপন অর্থাৎ যতেœর প্রাথমিক নিয়মগুলো মেনে না চলার কারণে ত্বক জৌলুসতা হারায়। পাশাপাশি বিলরেখার সমস্যা দেখা দেয়। দিনের বেলা বাইরে বেরোনোর আগে অবশ্যই মুখে, গলায় ও ঘাড়ে সানস্ক্রিন লাগাবেন। আর কখনই সাবান দিয়ে মুখ ধোবেন না। সাবানের পরিবর্তে ক্লেনজিং ক্রিম বা জেল ব্যবহার করুন। পাশাপাশি বাড়িতে কয়েকটা ফেস প্যাক ট্রাই করতে পারেন। শসা কুচি করে কেটে সঙ্গে আধা কাপ টক দই ও আধা কাপ ওটমিল ও সামান্য মধু ভালো করে মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

 

ব্ল্যাকহেডসের সমস্যায়

যাদের ব্ল্যাকহেডসের সমস্যা আছে তারা মাসে একবার পারলারে গিয়ে ব্ল্যাকহেডস রিমুভ করাতে পারেন। তবে, সময়ের অভাবে পারলারে যেতে না পারলে ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট নিন। বেকিং সোডা দিয়ে তৈরি স্ক্রাবার দারুণ কার্যকর। দুই চামচ বেকিং সোডা সামান্য পানিতে মিশিয়ে ব্ল্যাকহেডসের ওপর লাগিয়ে নিন। আধশুকনো হলে হালকা হাতে কিছুক্ষণ ঘষে নিন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

 

লিখেছেন : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর