শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কৌশল

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কৌশল

♦ ছবি : ইন্টারনেট

বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। বছরে বাড়ছে আরও ১ লাখ। রোগী প্রায় সব বয়সীই। সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ দশম স্থানে।

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ছিল গতকাল। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে এ দিনটি। গত বছর আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের জন্য থিম নির্ধারণ করেছিল ‘পরিবার এবং ডায়াবেটিস’। এ বছরও তারা একই থিম রেখেছে। এ থেকেই অনুমান করা যায়, পরিবার এ রোগের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিবারের অন্য সদস্যদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জ্ঞানার্জন জরুরি বলে বিবেচিত হচ্ছে।

 

স্মরণ করা যেতে পারে, ডায়াবেটিস বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস (১৪ নভেম্বর) বহাল থাকলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হিসেবে তিন বছর আগে বেছে নেওয়া হয়েছিল ডায়াবেটিসকেই। এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের ফোকাস হিসেবে ডায়াবেটিসকে বেছে নেওয়ার পেছনে কাজ করেছিল তিনটি বিষয়।

 

এক. নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় ডায়াবেটিসের প্রকোপ বৃদ্ধি এবং মানব জীবনে রোগটির বড় বোঝা হয়ে ওঠা ও তার পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।

 

দুই. ডায়াবেটিস মোকাবিলার জন্য সুনির্দিষ্ট, কার্যকর ও সাশ্রয়ী উপায় নির্ধারণ; যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও যত্নে কাজে আসবে।

তিন. ডায়াবেটিসের ওপর প্রথম গ্লোবাল রিপোর্ট উপস্থাপন যা মানব জীবনে রোগটির বড় বোঝা হয়ে ওঠা ও তার পরিণতি সম্পর্কে জানাবে। স্বাস্থ্যরীতি উন্নয়নে নজরদারি নিশ্চিত করবে, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে এবং ডায়াবেটিসের কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবে।

 

আইডিএফের সর্বশেষ সমীক্ষা থেকে জানা যায়, বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৪২৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৪২ কোটির বেশি। তবে শঙ্কার বিষয় হলো, প্রতি দুজন প্রাপ্তবয়সী মানুষের মধ্যে একজন এখনো জানতে পারছে না যে তার ডায়াবেটিস রয়েছে। রোগ শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। অশনাক্ত থাকলে ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

 

বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে প্রায় ১ কোটি, বছরে বাড়ছে আরও ১ লাখ। সব বয়সের মানুষই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি বছরই দ্বিগুণ হারে বাড়ছে নতুন নতুন ডায়াবেটিস রোগী। সচেতনতার অভাবে অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম।

 

খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, নিয়মিত কায়িক পবিশ্রম এবং প্রয়োজনে ওষুধের ব্যবহার করতে হবে। একটা কথা ভুললে চলবে না, শুধু ওষুধের সাহায্যে কখনোই এ রোগ সারানো সম্ভব নয়। অন্য দুটি নিয়ম পালন করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফিজিক্যাল এক্সারসাইজের ব্যাপারটা বিশেষ করে মাথায় রাখা বিশেষ প্রয়োজন।

 

ডায়াবেটিস ডেকে আনতে বাড়তি স্ট্রেসের একটা প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে। গবেষণায় জানা গেছে, ডায়াবেটিসের একটা মেজর রিস্ক ফ্যাক্টর হলো স্ট্রেস। পাশাপাশি ধূমপান, মদপান করে বিপদ ডেকে আনবেন না। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে ব্যায়াম করুন, পাশাপাশি নিয়মিত হাঁটুন। ঘরে অফিসের কাজ নিয়ে আসবেন না। রাত জেগে টিভি দেখবেন না। মোবাইল অফ করে ঘুমাবেন। বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সুস্থজীবন যাপনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সুস্থজীবন যাপন মানে হচ্ছে, স্বাস্থ্যকর খ্যাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও মন সুস্থ রাখা। মন সুস্থ রাখতে হলে মনের ওপর চাপ নেওয়া যাবে না।

 

অন্যদিকে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য হলিস্টিক পদ্ধতি এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হলিস্টিক পদ্ধতি হলো আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রাচীন প্রাকৃতিক পদ্ধতির আশ্চর্য সমন্বয়। এই চিকিৎসার মূল চাবিকাঠি দুটি- স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম। প্রায় এক দশক যাবৎ এ চিকিৎসা পদ্ধতি হাজার হাজার ডায়াবেটিস রোগীর জীবনে সুবাতাস বয়ে এনেছে। এর ফলে একদিকে যেমন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে আসছে, অন্যদিকে তেমনি দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনে স্বস্তি নেমে এসেছে। বহু রোগী ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে চমৎকার জীবনযাপন করছেন। বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হলিস্টিক চিকিৎসা উপকারী বন্ধুর মতো কাজ করছে।  তাই ডায়াবেটিস নিয়ে আমাদের আরও সচেতন ও যতœবান হতে হবে। মনে রাখত হবে, এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

 

লেখক

অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস

হলিস্টিক হেলথ কেয়ার সেন্টার

পান্থপথ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর