শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় করণীয়

দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় করণীয়

ছবি : ইন্টারনেট

কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে শরীরের নানা অংশের ব্যথায় ভুগে থাকেন। দীর্ঘমেয়াদি এসব ব্যথার অন্যতম কারণ ডিজেনারেটিভ ডিজিজ বা বয়সজনিত হাড় ক্ষয়।

 

 

স্পনডাইলোসিস

এটি মেরুদন্ডের কশেরুকা গুলির ক্ষয়জনিত রোগ। এখানে কশেরুকাগুলির ক্ষয় হয় পাশাপাশি কিছু ছোট ছোট নতুন হাড়ের বৃদ্ধিও হয় যাকে মেডিকেলের ভাষায় অস্টিওফাইট বলা হয়। স্পনডাইলোসিস এ দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী স্পেস বা গ্যাপ কমে যায়, ফলে  নার্ভ রুটের ওপর চাপ পড়ে এবং রোগী নার্ভের ডিস্ট্রিবিউশন অনুযায়ী ব্যথা অনুভব করে, যখন এটি মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশে হয়, তাকে মেডিকেলের ভাষায় সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস এবং যখন মেরুদন্ডের কোমরের অংশে হয় তখন এটাকে লাম্বার স্পনডাইলোসিস বলা হয়।

 

অস্টিওআর্থ্রাইটিস

এটিও একটি ডিজেনারেটিভ ডিজিজ বা বয়সজনিত জয়েন্টের অভ্যন্তরীণ গঠনের ক্ষয় রোগ। এই রোগে জয়েন্টের ভিতরে অবস্থানরত কার্টিলেজগুলি ও জয়েন্ট সারফেছের ক্ষয় হতে থাকে, জয়েন্টের অভ্যন্তরীণ সাইনোভিয়াল ফ্লুইডগুলিও কমে যায়, ফলে জয়েন্টের ভিতরের স্পেস কমে যায়। তখন আক্রান্ত রোগীর জয়েন্ট নাড়াতে কষ্ট হয়। যদি তার হাঁটুতে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয়, তাহলে রোগী নিচে বসতে পারে না, নামাজের মতো বসতে না পারা, টয়লেটে বসতে কষ্ট হওয়া, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা ইত্যাদি করতে পারে না।

 

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস

এটি একটি অটো-ইম্যুন ডিজিজ যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এই রোগে আমাদের হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলো আক্রান্ত হয়ে থাকে। জয়েন্টগুলো ব্যথা করে, ফুলে যায়, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় রোগীর ব্যথা অনেক বেড়ে যায় খানিকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে কিছুটা কমে আসে।

 

অ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস

এটিও একটি মেরুদন্ডের বাত রোগ যা প্রথমে মেরুদন্ডের নিচের অংশে আক্রমণ করে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মেরুদন্ডের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগটির সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এটি মেরুদন্ডের স্বাভাবিক আকৃতি নষ্ট করে মেরুদন্ডকে  শক্ত করে ফেলে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিটি মেরুদন্ডের ঘাড় ও কোমরের অংশ ঘুরাতে পারে না, সামনের দিকে ঝুঁকতে পারে না ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

 

উপরোক্ত রোগ সমূহের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর উপসর্গ, চিকিৎসকের ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশনের পাশাপাশি কিছু কিছু প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল টেস্ট করানোর প্রয়োজন পড়ে, যেমন- স্পনডাইলোসিস ও অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানের এক্স-রে করতে হয় এরং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও অ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিসের ক্ষেত্রে এক্স-রের পাশাপাশি কিছু স্পেশাল টেস্ট করতে হয়। যেমন, আর এ টেস্ট, সি আর পি, এন্টি সিসিপি, এইচ এল এ বি ২৭ ((HLAB ২৭) ইত্যাদি।

 

চিকিৎসায় করণীয়

স্পনডাইলোসিস বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলো বয়সজনিত হাড়ের ক্ষয় রোগ। এটাকে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব নয় তবে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর কষ্ট কমানো সম্ভব পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চলা ও কিছু ব্যায়াম করলে রোগী ভালো থাকবেন। তেমনিভাবে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও অ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস রোগে দুটিও একেবারে নিরামযোগ্য রোগ নয়। এ ক্ষেত্রেও রোগীকে ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও নির্দিষ্ট কিছু থেরাপিটিক এক্সারসাইজ গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু রোগগুলো দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে তাই এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যাবে না। কারণ দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের ফলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ¦প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাই সঠিক সমাধান। তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ বা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে।

 

লেখক-

ডা. এম ইয়াছিন আলী

বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি বিভাগ, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল।

সর্বশেষ খবর