শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রচ্ছদ

বিয়ের বাদ্যি বাজে

বিয়ে মানে মহাযজ্ঞ। বিয়েবাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে ডেকোরেশন, খাওয়া-দাওয়া, কেটারিং, আলোকসজ্জা, বিয়ের ফটোগ্রাফি- আয়োজন যে বিপুল। পাশাপাশি রয়েছে বর-কনে, আত্মীয়স্বজন এবং হবু শ্বশুরবাড়ির কেনাকাটা, তত্ত্ব সাজানো এবং নিমন্ত্রণ পর্ব। কেননা প্রিয় মানুষের বিয়ে বলে কথা!

ফেরদৌস আরা

বিয়ের বাদ্যি বাজে

বিয়ের কথা বললেই প্রথমে মাথায় আসে বরের শেরওয়ানি-পাগড়ি আর কনের শাড়ির সাবেকিয়ানা সাজের কথা। কিন্তু এসবের বাইরেও আজকাল নতুন নতুন ট্রেন্ডি সাজ দেখা যায়। ► মডেল : সজল নূর ও পূজা চেরি ► বরের পোশাক : লুবনান ► কনের পোশাক : গ্ল্যামার্স লাইফস্টাইল ► গয়না : স্পার্কেল ► সাজ : শোভন মেকওভার ► ছবি : নেওয়াজ রাহুল

শুভ বিবাহ। জীবনের নতুন অধ্যায়। প্রায় এক বছর আগে থেকে শুরু হয়ে যায় নতুন অধ্যায়ের প্রস্তুতি। হবেই বা না কেন? বিয়ে বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে ডেকোরেশন, খাওয়া-দাওয়া, কেটারিং, আলোকসজ্জা, বিয়ের ফটোগ্রাফি-সিনেগ্রাফির মতো আয়োজন যে বিপুল। পাশাপাশি রয়েছে বর-কনের প্রস্তুতি পর্ব; যেমনÑ বর-কনের কেনাকাটা, আত্মীয়স্বজন এবং হবু শ্বশুরবাড়ির কেনাকাটা, তত্ত্ব সাজানো এবং নিমন্ত্রণ পর্ব। বিশেষ এই দিনটিকে আনন্দমুখর করে তুলতে চান বাড়ির সবাই। আর সেজন্য বিয়ের বিস্তারিত আয়োজন নিয়ে হাজির আমরা। বরের সাজ-পোশাকের পাশাপাশি রইল বিয়ের ফটোগ্রাফির আদ্যোপান্ত।

 

বিয়ের অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশের বিয়ের মূল অনুষ্ঠান। যদিও আজকাল ট্রেন্ড অনেকটা বদলেছে। মেহেদি রাত, হলুদ সন্ধ্যা এবং রিসিপশনের মতো অনেক অনুষ্ঠানই আজকালকার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার অন্যতম অংশ। যেখানে বর এবং কনে পক্ষ আলাদা বা একসঙ্গে বিবাহবন্ধনের এসব আয়োজন করে থাকে। যার শুরুটা হয় বিয়ের কেনাকাটা পর্ব দিয়ে।

 

বরের সাজ-পোশাক

বিয়ের প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্য বরের পোশাক পরিকল্পনা আগেই করে নেওয়া ভালো। কনের পোশাকের রং ও নকশা মাথায় রেখেই তা বাছাই করা যেতে পারে। বরের পোশাকে ফুলেল নকশার সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে পশুপাখির নকশা। সেই ধারা মেনে বরের শেরওয়ানি, প্রিন্স কোট বা কটিতে এমন নকশা দেখা যাচ্ছে। কারুকাজ ছাড়া বা কম কাজের শেরওয়ানিও আছে এখনকার ট্রেন্ডি পোশাকে। ট্রেন্ডের হাত ধরে পাগড়ির উপস্থিতি থাকলেও হাতে বাঁধা পাগড়ি আজকাল ভীষণ জনপ্রিয়। সেই সঙ্গে নানা ঢঙের অ্যাকসেসরিজের ব্যবহার বরের ফ্যাশনে আনে বৈচিত্র্যতা। তবে একেক অনুষ্ঠানে বরের সাজপোশাক হতে পারে একেক রকম। বর পরিবার অথবা বন্ধুদের সহায়তায় বিয়ের নানা আনুষ্ঠানিকতার জন্য আলাদা পোশাক বেছে নিতে পারে।

 

আজকাল শপিংমল বা ফ্যাশন হাউসগুলো বরের সাজে নানা ট্রেন্ডি পোশাক তৈরি করে যাচ্ছে। যেসব পোশাক ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি ভীষণ ফ্যাশনেবল। বরের সাজে স্মার্ট লুক আনে মানানসই এক্সেসরিজ। ঘড়ি, পুঁতির মালা, পাথরের নেকলেস, ব্রোঞ্চ বরের সাজ-পোশাকে আনবে রাজকীয় লুক। আর একটু ভিন্ন দেখাতে কাঁধে ঝোলানো যেতে পারে মখমলের চাদর। আর বরের জুতোয় সেকেলে নাগড়ার চল নেই। এখন বাজারের নাগড়া স্টাইলের লোফার জুতো পাওয়া যায়; যা বরের লুকে আনে আমূল পরিবর্তন।

 

বরের মেকওভার

অবাক হচ্ছেন! আজকাল কনের মেকওভারের মতো বরের সাজেও রয়েছে মেকওভার। আর বিয়ের সাজে কসমোলজিস্টরা বরাবরই ছেলেদের মেকআপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে অবশ্য উপকার রয়েছে। বিয়ের ছবিগুলো ভালো আসে। বরের মেকআপ সাধারণত একেবারে লাইট হয়ে থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে মেকআপে যেন ন্যাচারাল লুক বজায় থাকে।

 

কনের সাজ পোশাক

বিয়েতে কনের পোশাকের কথা এলে প্রথমেই মাথায় আসে শাড়ির কথা। বিয়ের দিন লাল বেনারসির আবেদন যে চিরন্তন, এক কথায় মেনে নেন সবাই। লাল রঙের ছাড়াও গোলাপি, কমলা, মরচে, মেরুনের মতো রঙের দিকে আগ্রহ আধুনিক কনেদের। আধুনিক কনেরা বেছে নেন কাঞ্জিভরম, জামেভার বা পৈঠানিতে। কাতান সিল্কও বেশ জনপ্রিয়। বেশি ঝলমলে শাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করলে তসর শাড়ি তো আছেই! তবে শুধু শাড়ি হলেই তো আর হলো না। চাই মানানসই ব্লাউজও। আর যারা শাড়িতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না তাদের জন্য বিয়ের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় রয়েছে লেহেঙ্গা, গাউন, কুর্তা, ডিজাইনার গাউন, গর্জাস সালোয়ার-কামিজ। এক্সেসরিজের মধ্যে প্রথমেই আসি জুতার প্রসঙ্গে। বিয়ের দিন শাড়ির সঙ্গে পরার জন্য স্টোনের কাজ করা গোল্ডেন জুতো বেস্ট অপশন। তা ছাড়া লেহেঙ্গা পরলে তার সঙ্গে স্টাইলিশ স্টিলেটোও বেশ মানিয়ে যাবে। বিয়ের দিন কনের শাড়ি বা লেহেঙ্গার সঙ্গে মানানসই গোল্ডেন ক্যাচ বা রিচ ফেব্রিকের ওপর স্টোনের কাজের বটুয়া রাখা যেতে পারে। বিয়ের দিন সোনার গয়না তো থাকছেই। এসব ছাড়াও বিয়ের অন্যদিনের আনুষ্ঠানিকতায় কনের পোশাকের সঙ্গে পরার জন্য জাঙ্ক জুয়োলারিও রাখা যেতে পারে কালেকশনে।

 

কনের মেকওভার

বিয়ের সাজে আজকাল টানা চোখের সাজ বেশ প্রশংসিত। এক্ষেত্রে চোখে করা হয় ভারি মেকআপ। এ ছাড়া স্মোকি আইজ কনের সাজে রীতিমতো ট্রেন্ডি। লেহেঙ্গার সঙ্গে এ সাজ খুব মানাবে। লাল বেনারসি পরা কনেরা মেকআপে জোর দিচ্ছেন চোখের সাজে। ঠোঁটে থাকতে পারে হালকা লিপস্টিক। জেনে রাখা ভালো; বিয়ে মানেই গাঢ় লিপস্টিক- এ ট্রেন্ড ভেঙে বিয়ে বা রিসিপশনের দিনও হালকা বা নিউট্রাল শেড ব্যবহার হচ্ছে অহরহ। সব মিলিয়ে আধুনিক কনেরা এমন সাজ চান যাতে ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। এক্ষেত্রে বেস মেকআপের দিকে জোর দিতেই হয়। হেয়ারস্টাইল রাখা যেতে পারে সেমি ক্যাজুয়াল; অর্থাৎ হালকা বান বা সফট কার্ল। সাম্প্রতিক ওয়েডিংগুলো দেখলে এর স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

বিয়ের ফটো-সিনেগ্রাফি

বিয়ের মতো স্মরণীয় ঘটনার প্রতিটা মুহূর্ত সবার জন্য স্পেশ্যাল। তিন দিনের এত জাঁকজমক, হৈ-হুল্লোর-সাজগোজ, বিয়ের প্রতিটা খুঁটিনাটি বারবার ফিরে দেখার জন্য চাই ফটোগ্রাফি। তবে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি মানে যে শুধু বর-কনের সঙ্গে আত্মীয় স্বজনদের পোজ দেওয়া ছবি, তা নয়। এখন গুরুত্ব পাচ্ছে ক্যানডিড মোমেন্টও। কনের স্বতঃস্ফূর্ত হাসিঠাট্টা, সাজগোজের প্রস্তুতি, বরের সঙ্গে খুঁটিনাটি সব কিছুই ক্যামেরাবন্দী হচ্ছে। বিয়ের দিন ছবি তোলা হয় ডকুমেন্টরি মুডে। অর্থাৎ বিয়ের দিন সকালে গায়ে হলুদ দেওয়া থেকে শুরু করে সন্ধ্যাবেলা বিয়ের সময় পর্যন্ত সব কিছু ধরা থাকে অ্যালবামে। সঙ্গে ক্যামেরার ফোকাসে থাকছে নানা কারসাজি। থাকছে ড্রোন দিয়ে তোলা ছবি। এতে বিয়ের ছবি যে আলাদা মাত্রা পায় তা বলা বাহুল্য। অ্যালবামেও এসেছে নতুনত্ব। এখন আর সাদামাটা ছবির প্রিন্ট আউট নয়, বরং পুরো অ্যালবামের প্রতিটা পাতাই একটা ছবির মতো করে তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি পাতা একে অপরের থেকে আলাদা। কোনোটা কোলাজ আবার কোনোটায় শুধু বর-কনের ছবি। এ প্রসঙ্গে ভিডিওগ্রাফি বা সিনেগ্রাফির কথা না বললেই নয়। ছবির মতো ভিডিওগ্রাফিতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। এখন সবার হাতেই সময় কম। কেউই আর টানা দুই ঘণ্টার মতো ভিডিওগ্রাফিতে আগ্রহ পোষণ করে না। তাই ভিডিও হচ্ছে এখন স্বল্প দৈর্ঘের। অনেকে ভিডিওর সঙ্গে তৈরি করছেন ট্রেলার। কেউ বা আবার করছেন গান, মিউজিক ভিডিও, ক্যামেরার কারিকুরিতে ট্রেলার তৈরি করা হচ্ছে সিনেমার মতোই। ওয়েডিং ফটোগ্রাফিতে এখন বেশ জনপ্রিয় প্রি-ওয়েডিং ফটোগ্রাফি। বিয়ের আগে হবু বর-কনে নিজেদের কিছু একান্ত মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করছেন। অনেকে আবার প্রি-ওয়েডিংকে স্মরণীয় করে তোলার জন্য পাড়ি দিচ্ছেন ছোট্ট একটা ট্রিপে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর