শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ত্বক থাকুক তকতকে

তানিয়া তুষ্টি

ত্বক থাকুক তকতকে

শীতের বৈরী আবহাওয়া ত্বকের জন্য বয়ে আনে নানা ধরনের সমস্যা। পাশাপাশি অনেক সময় ত্বকে হতে পারে বিভিন্ন রোগও। তাই এ সময় প্রয়োজন ত্বকের বিশেষ যত্ন ► মডেল : জারিন জারা খান ► পোশাক : সেইলর ► সাজ : তানজিনা আহমেদ জিনিয়া ► ছবি : রাফিয়া আহমেদ

শীতের হাওয়া উড়িয়ে দেয় আর্দ্রতা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শুষ্কতা। তার প্রভাব এড়ায় না আমাদের ত্বক। ফলে তকতকে ত্বকও হয়ে যায় রুক্ষ-শুষ্ক। কিন্তু এমন ত্বক নিশ্চয় কারোরই কাম্য নয়। বিরূপ এমন হাওয়াতেও চাইবেন ত্বক থাকুক তকতকে। সৌন্দর্য বজায় থাকুক আগের মতোই। তীব্র শীত আর শুষ্কতার এই সময়টায় ত্বকের যত্নের সাতসতেরো নিয়েই এই ফিচার।

 

 

দিন দিন বাড়ছে শীতের দাপট। এত শীতে আপনার অবস্থা যেখানে নাজেহাল সেখানে ত্বকচর্চার সুযোগ কোথায়? কিন্তু এই সুযোগে তৈরি হচ্ছে নানারকম সমস্যা। নিয়মিত শীতের ক্রিম মেখেও ত্বক ফাটা, ত্বকে ছোপ ছোপ কালো দাগ, ফাঙ্গাশ পড়া, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়াসহ আরও অনেক বিরক্তিকর উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যে কারও মন ভেঙে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই এমন সমস্যায় কী করবেন, ভাবনা এখন সেটিই।

 

শীতের রোদে আলট্রাভায়োলেট বেশি থাকে। ত্বকের প্রথম যত্ন হিসেবে বেছে নিতে হবে সানস্ক্রিন লোশন। প্রতিদিন বাসা থেকে বের হওয়ার আগে অবশ্যই ত্বক ভালো করে ধুয়ে তাতে শীত উপযোগী ক্রিম মেখে নিতে হবে। তারপর সানস্ক্রিন লোশন ভালোভাবে ব্লেন্ড করে লাগাতে হবে। লোশনটি ত্বকে মিশে যেতে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে সানস্ক্রিনে এসপিএফ কমপক্ষে ৪০ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, অবশ্যই ৩-৪ ঘণ্টা পর ভালো করে ত্বক ধুয়ে আবার সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।

 

আবহাওয়ার ঠিক এমন সময় অনেকের গলা ও ঘাড় কালো হয়ে যায়। এই সমস্যায় মুক্তি পেতে সপ্তাহে অন্তত চার থেকে পাঁচ দিন অ্যালোভেরা জেল গলা আর ঘাড়ের উন্মুক্ত স্থানে ঘষে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হবে। অ্যালোভেরা লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এরপর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। এবার আসা যাক ত্বকচর্চার বিষয়ে। ত্বকে ফুসকুড়ি, ব্রণ, র‌্যাশের ঝামেলা বেড়ে যায় শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে। এই সমস্যা সমাধানে কমলা, টমেটোর রস খুব উপকারী। নিয়ম করে ত্বকে লাগাতে পারেন। ত্বকের যত্নে বাড়তি কিছু চাইলে আপনাকে ভিন্ন চিন্তা করতে হবে। আধা চামচ শসার রসের সঙ্গে আধা চামচ দুধ ও আধা চামচ মধু মিশিয়ে ফ্রিজে রাখুন। ঠান্ডা হলে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

 

এই প্যাকটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তবে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য শুধু শসার রস বা শসা কুচি ব্যবহার করুন। যাদের ত্বক খুব তৈলাক্ত বা ব্রণের সমস্যা আছে, তারা আনারসের সঙ্গে সমপরিমাণ গোলাপজল মিলিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে এর সঙ্গে বেসন দিতে পারেন, তবে এটি ২০ মিনিটের বেশি ব্যবহার করবেন না। মুখ পরিষ্কার করার জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যবহারে ত্বকে রোদের পোড়া ভাব চলে যাবে।

 

এ সময় বাতাসে প্রচন্ড পরিমাণ ধুলোবালি উড়তে থাকে। তাই ত্বকে ময়লা জমে বেশি। ত্বকের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সপ্তাহে একদিন অন্তত স্ক্রাবিং করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি স্ক্রাবই বেশি ভালো। শসা বা মাল্টার রসের সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিন। ত্বক স্বাভাবিক বা শুষ্ক হলে দুধ আর মধু মেশাতে পারেন। বেশি শুষ্ক ত্বক হলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিতে হবে। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল দিলে ভালো। এবার নিজের হাতে তৈরি করা স্ক্রাবটি শুধু মুখে নয়, আপনার হাত, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। যাদের ত্বক সেনসেটিভ, তারা টক দই দিয়ে স্ক্রাবিংয়ের কাজটা সেরে নিতে পারেন।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে দুধের সরও খুব উপকারী। প্রতিদিন কাজের ফাঁকে ১০ মিনিট সময় নিয়ে ১ চামচ দুধের সঙ্গে ময়দা বা বেসন মিশিয়ে মুখ, গলা আর হাতে লাগাতে পারেন। ১০ মিনিট পর উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শীতের প্রভাবে ত্বকের সমস্যা হলো ফাঙ্গাসের সংক্রমণ। এ সময়ে প্রকৃতির শুষ্কতার প্রভাব পড়ে ত্বকে। তা ছাড়া চার দিকের ধুলোবালি ত্বকে জমার ফলে নানা ধরনের সংক্রমণ হয়। তাই প্রতিদিন কয়েকবার করে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। নিজের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা মেকআপ কিটস, টাওয়েল, চিরুনি ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ সময় প্রতিবার ত্বক পরিষ্কারের পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। যাদের হাতে কালো দাগ পড়েছে, তারা একটি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এক টেবিল চামচ দারুচিনি গুঁড়া, এক টেবিল চামচ জায়ফলের গুঁড়া ও দুটি ডিমের কুসুম ভালো করে মিশিয়ে নিন। এতে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে ২০ মিনিট পুরো হাতে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি হাতের কালো দাগ, পোড়া ভাব ও আঙুলের ভাঁজের কালো দাগ তুলতে সহায়তা করবে।

যাদের বেশিরভাগ সময় বাড়িতে থাকতে হয়, তারা প্রতিদিনের কাজ শেষে এক টুকরো লেবু ঘষে হাত পরিষ্কার করে নেবেন। দিনের কোনো এক সময়ে হাত দুটো লেবু লাগিয়ে কুসুম গরম পানিতে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এর পর পুরো হাতে লোশন লাগাতে হবে। এতে আপনার হাত পায়ের ত্বক সুন্দর ও মসৃণ থাকবে।

 

হালকা শীতে ত্বক সজীব রাখতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। তেলে ভাজা খাবার পরিহার করে মৌসুমি ফল, সবজি, সালাদ ও স্যুপ রাখতে হবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম আর বিশ্রামের ফলে ত্বক সজীব থাকবে। নিয়মিত যত্নে  শীতের আগের এ সময় আপনার ত্বক থাকবে প্রাণবন্ত।

 

টিপস

► শীত এলেই মুখে ব্যবহার্য ফেসওয়াশটি পরিবর্তন করতে হবে।

► খাদ্যাভ্যাসে প্রচুর পরিমাণে সবজি ও দেশি ফল রাখুন।

► এ সময় মুখের ত্বকে ব্যবহারের জন্য একটি ভালো মানের সান কন্ট্রোল অথবা সানস্ক্রিন লোশন বেছে নিন।

► শীতের রোদ মিষ্টি লাগায় অনেকে ছাতা বা স্কার্ফ ব্যবহার ছেড়ে দেন। এটি ত্বকের জন্য মারাত্মক ভুল। বাইরে চলার  সময় অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর