শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
শেষ প্রচ্ছদ

বর্ণিল লেদার জ্যাকেট

বর্ণিল লেদার জ্যাকেট

শুধু কালো, বেজ রঙে নয়, লেদারের জামাকাপড় লাল, মেরুন, হলুদ, সবুজ, অ্যাশ সব রঙেই হয়। ♦ মডেল : নিবির আদনান ও নাহিদ খান ♦ পোশাক : ইজি ♦ ছবি : চন্দন রায় চৌধুরী

শীত মানেই রঙিন ফ্যাশন। হিম শীত থেকে রেহাই পেতে পোশাক-আশাকে এসেছে পরিবর্তন। যেহেতু শীতের প্রকোপ বেশি তাই লেদারের পোশাক হতে পারে ফ্যাশনিস্তাদের সঠিক স্ট্রিটওয়্যার! শুধু কালো নয়, লেদারের জামাকাপড় লাল, হলুদ, সবুজ সব রঙেই হয়। তাতে বর্ণিল দেখায় লেদারের জমিন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন- এ কে রাসেল

 

শীত মানে হিমেল সকাল, মিঠে রোদের খেলা। সন্ধ্যা নামলেই একই শীত হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। বেড়ানো, হৈ-হুল্লোড় আর পার্টি ইত্যাদি আনন্দে মেতে থাকে সবাই। আর তাই তো শীতের পোশাক-আশাক নিয়ে ভাবতেই হয়। সেসব দিক বিবেচনায় তারুণ্যের শীত পোশাকের প্রথমেই থাকে লেদারের পোশাক। আর হবেই না কেন! লেদারের পোশাক-আশাক যে এখন বিশ্বে সবার কাছে জনপ্রিয়। আবার লেদারের আউটফিটে পুরনো ম্যাড় ম্যাড়ে রং এখন আর চলে না। উজ্জ্বল রংয়ের লেদারের শীত পোশাক এখন ফ্যাশনে ভীষণভাবে ইন।

 

স্থায়িত্ব ও মানের কারণে লেদারের পোশাকের কদর একটু বেশি। লেদারের জ্যাকেটের প্রতিও ফ্যাশনপ্রেমীদের আগ্রহের কমতি নেই। সাধারণত শীতে লেদারের জ্যাকেট আরামদায়ক হওয়ায় এর কদর বেশি। লেদারের জ্যাকেটে ফুটে ওঠে ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্য। ফ্যাশন ব্র্যান্ড ইজির ডিরেক্টর এবং ডিজাইনার তৌহিদ চৌধুরী জানান, ‘ফ্যাশন তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তাতে সমকালীন রুচির প্রকাশ ঘটে। এ কারণেই দেশি ব্র্যান্ডগুলো পাশ্চাত্যের অনুসরণ করে তৈরি করছে লেদারের আউটফিট।’

 

মাঘ মাস এসেছে। বৈচিত্র্যময় রঙিন শীত পোশাকের দেখা মিলছে আজকালের তারুণ্যের পোশাকি ক্যানভাসে। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ট্রেন্ড থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিবছরই আবার এসব পোশাকে চলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও। তাতে বেরিয়ে আসে নতুন ডিজাইন, নতুন প্যাটার্ন। লেদারের পোশাকের ক্ষেত্রেও তেমনি লেগেছে নতুন ডিজাইন আর প্যাটার্নের ছোঁয়া। ডিজাইনাররা লেদারের জ্যাকেট, প্যান্ট ইত্যাদি বানাচ্ছেন আজকাল। প্রিমিয়ার হোক বা পার্টি, সবখানেই চলতে পারে লেদারের পোশাক। লেদারের পোশাক কখনো অফ ফ্যাশন ছিল না। এখনো নয়। বরং সময়ের স্রোতে তা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

 

এদিকে ট্যানারি মালিকরা জানান, ‘গরুর চামড়ার তৈরি লেদারের জনপ্রিয়তা বেশি। তবে, ভেড়ার চামড়ায় তৈরি লেদারের কদরও কম নয়। আরামদায়ক এবং দামেও চওড়া। বাজারে রেক্সিনের লেদারের জনপ্রিয়তাও কম নয়। দামেও সহজলভ্য। বাজারে সিনথেটিক লেদার দেখতে অবিকল হলেও অরিজিনাল পাওয়াটা মুশকিল। আসল চামড়ার জ্যাকেটের দাম কিছুটা বেশি।

 

লেদারের জ্যাকেট  শুধু কালো রঙে নয়, অ্যাশ, লাল, মেরুন, হলুদ, সবুজ সব রঙেই হয়। লেদারের পোশাক বরাবরই  আত্মবিশ্বাসী দেখায়। ঠিকমতো যত্ন নিতে পারলে লেদারের জিনিস বহু বছর টিকে যায়। এ দিয়ে তৈরি ফ্যাশনওয়্যার সম্ভ্রান্ত সংগ্রহ হয়ে থাকে আপনার ওয়ার্ড্রোবে দীর্ঘকাল। শুধু তাই নয় লেদারের জ্যাকেট ‘মেনটেন’ করা খুব সহজ। নোংরা হলে ভেজা টিস্যু পেপারের মতো স্পেশাল হোয়াইপস পাওয়া যায়, যা দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলা যায়। ডেনমের তৈরি পোশাকের মতো লেদারের পোশাকও বেশি ব্যবহার করা যায়। তরল পদার্থের মতোই নরম এই লেদার। খুব সুন্দর ‘মুভমেন্ট’ আছে এর।

 

বাজারে কয়েক ধরনের লেদারের জ্যাকেট বা প্যান্ট পাওয়া যায়। প্রাণীর চামড়া দিয়ে তৈরি পোশাক পরতে না চাইলে, সিনথেটিক লেদারের পোশাক পরতে পারেন। অনেক ডিজাইনারই এখন সিনথেটিক লেদারের পোশাক ব্যবহার করছেন। ফ্যাশন ব্র্যান্ড ইজির ডিরেক্টর এবং ডিজাইনার তৌহিদ চৌধুরী জানান, ‘লেদার চিরকালই আভিজাত্যের প্রতীক। তবে এখন প্রাণীহত্যা না করেও বিকল্প চামড়া দিয়ে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরি করা যায়। নন অ্যানিমেল সিন্থেটিক লেদার এখন ফ্যাশন পাড়ায় বেশ ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে সাপের চামড়া, কুমিরের চামড়ার ফ্যাশনওয়্যার খুবই বিলাসবহুল। আজকাল এসবেরও নকল পাওয়া যায়। প্রাণীহত্যা না করেই তার চামড়ার সৌন্দর্য তুলে ধরা হচ্ছে পোশাকে।’

 

আজকাল অনেক সেলিব্রেটিও ব্যবহার করছেন সিনথেটিক লেদারের পোশাক। আমাদের দেশের আবহাওয়াও এমন যে, সব সময় চামড়ার লেদারের পোশাক পরা যায় না। কিন্তু ঠিকভাবে স্টাইলিং করলে, বুঝেসুঝে ব্যবহার করলে লেদারওয়্যার সারা বছরই পরা যায়। অফিস ওয়্যার থেকে পার্টি ওয়্যার সব অনুষ্ঠানেই লেদার চলনসই।

 

পাতলা লেদারের জ্যাকেট আর সাদা শার্ট পরে অফিসে যেমন যেতে পারেন, তেমনি এর সঙ্গে খানিকটা পরিবর্তন যেমন- জুতা বদলে সেটাকেই পার্টি বা গেট টুগেদারে জমিয়ে তুলতে পারেন।

 

লেদারের পোশাক এমন এক সাজ যা পুরনো হোক বা নতুন, আপনি যখন তখন আলমারি থেকে বের করে পরতে পরেন। এ হলো ঐতিহ্যের সংগ্রহ। যা কখনই পুরনো হবার নয়। শুধু এর সঠিক যতœ করা জানতে পারলেই হলো। জেনে নিন লেদারের পোশাকের যতœ সর্ম্পকে।

 

লেদারের পোশাক বা লেদারের এক্সেসরিজ নিজ হাতে পরিষ্কার করা ভালো। তবে যদি ওয়াশিং মেশিনে পরিষ্কার করেন তবে আগে এর গায়ে লেখা নির্দেশাবলি ভালো করে পড়ে নিন। লেদারের আউটফিট ধোয়ার ক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। সাবান হিসেবে বেছে নিন মাইল্ড শ্যাম্পু। লেদারের আউটফিট কাঁচার আগে বেশ কিছুক্ষণ শ্যাম্পু মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। এক্ষেত্রে কাপড় কাঁচার ব্রাশ ব্যবহার না করে হাত দিয়ে ঘষুন। কাচার পর পোশাক না চিপে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখুন। এতে পানি ঝরে যাবে।

 

লেদারের আউটফিট রোদে শুকাবেন না। ড্রাই করার জন্য আবার হেয়ার ড্রায়ারও ব্যবহার করা উচিত নয়। ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায় শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। লেদারের আউটফিটে চেন, বোতাম, বকলেস ইত্যাদি শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন। লেদারের আউটফিট দীর্ঘদিন তুলে রাখলে ফাঙ্গাস পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এমন সমস্যা এড়াতে লেদারের আউটফিট বা এক্সেসরিজ অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক লিকুইড দিয়ে লেদার  শুকনো করে মুছে নিন। এরপর লেদার কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন।

 

লেদারের আউটফিট সবসময় হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখুন। সারা বছরই যে কোনো সময় বা মাঝে মাঝে লেদারের আউটফিট বের করে মেলে দিন। লেদার ভালো থাকবে। লেদারের আউটফিট, ব্যাগ বা জুতা যাই হোক, নিয়মিত ব্যবহারে ধুলা পড়ে আবার তুলে রাখলেও ধুলা পড়ে। তাই লেদারের পণ্য পরিষ্কারের জন্য ব্রাশ ব্যবহার করুন। লেদারের অনুষঙ্গ বছরে অন্তত দুইবার ক্লিন করিয়ে নিতে পারলে ভালো। সারা বছরই লেদারের জুতা বা ব্যাগের ভিতর খবরের কাগজ ভরে রাখুন। এতে কাগজ ময়েশ্চার শুষে নেবে। লেদার ভালো থাকবে। লেদারের পণ্যে বেশি ময়লা ধরলে প্রফেশনাল ক্লিনারের কাছ থেকে ক্লিন করিয়ে নিন। যে কোনো  মৌসুমে লেদার ভালো রাখার জন্য পলিশ প্রয়োজন। সারা বছর লিক্যুইড বেসড পলিশ ব্যবহার করলেও বর্ষা মৌসুমে ওয়াক্স বেসড পলিশ লেদারের জন্য ভালো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর