শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
সুস্বাস্থ্য

মলদ্বারে ফিস্টুলা!

‘ফিস্টুলা’ মলদ্বারের রোগগুলোর মাঝে বেশ পরিচিত। সাধারণত মানুষ এ রোগটিকে ‘ভগন্দর’ নামে চেনে।

মলদ্বারে ফিস্টুলা!

ছবি : ইন্টারনেট

ফিস্টুলা রোগ কী এবং কেন হয়?

মলদ্বারের আশপাশের চামড়া/ত্বকের সঙ্গে মলদ্বারের ভিতরের দিকে একটা অনাকাক্সিক্ষত নালি তৈরি হয়ে যাওয়া। রোগের শুরুটা সাধারণত মলদ্বারের ভিতরকার গ্রন্থি সংক্রমণ বা ইনফেকশনের মাধ্যমে হয়। যাতে মলদ্বারের আশপাশে প্রচন্ড ব্যথা হয় ও লাল হয়ে ফুলে যায়। যা অ্যাবসেস নামে পরিচিত। একসময় এই অ্যাবসেস ফেটে গিয়ে মলদ্বারের চারপাশের ত্বকের কোনো এক স্থানে ছিদ্র হয়ে পুঁজ বের হতে থাকে। পুঁজ বের হয়ে যাওয়ার পর সাধারণত ব্যথা কমে যায় কিন্তু এই যে এক বা একাধিক মুখসহ অনাকাক্সিক্ষত নালি তৈরি হয়, একেই ফিস্টুলা রোগ বলা হয়।

 

উপসর্গ মূলত তিনটি 

প্রথমত ফুলে যাওয়া, দ্বিতীয়ত ব্যথা হওয়া এবং তৃতীয়ত রোগীর অন্যতম প্রধান উপসর্গ থাকে মলদ্বারের আশপাশে এক বা একাধিক ছিদ্র দিয়ে সাধারণ পুঁজ, আঠালো রস বা অনেক ক্ষেত্রে রক্ত নিঃসরণ হয়। সাধারণত এই সমস্যা একটানা থাকে না, কিছুদিন পরপর উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। এতে অনেকেই ভাবেন যে, হয়তো রোগটি সেরে গেছে, আদতে এতে রোগটি বাড়তে থাকে।

 

প্রকারভেদ

সাধারণ ফিস্টুলা : এক্ষেত্রে নালিটি সাধারণত খুব বেশি গভীরে প্রবেশ করে না।

জটিল ফিস্টুলা : এক্ষেত্রে নালিটি মলদ্বারের মাংসের বেশ গভীরে প্রবেশ করে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে রোগটি শাখা বিস্তার করে রোগটির চিকিৎসা দুঃসাধ্য করে তোলে।

 

চিকিৎসা কী?

এ রোগে অপারেশন ভিন্ন অন্য কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। অপারেশনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক সংযোগটি/নালিটি কেটে ফেলতে হয়। তবে অপারেশনের আগে কিছু জিনিস নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

১. ফিস্টুলার প্রকৃতি

২. রেক্টাম/মলাশয়ের ক্যান্সার বা যক্ষ্মা অথবা বৃহদান্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ আছে কিনা।

 

তাই অপারেশন পূর্ববর্তী কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার হতে পারে। প্রক্টোস্কপি, সিগময়ভস্কপি, কোলনস্কপি, ফিস্টুলোগ্রাম এন্ডোরেকটাল, আলট্রাসাউন্ড (জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে), এমআরআই (জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে) ইত্যাদি। এ ছাড়াও অপারেশন করার সময় নালিটির সঠিক নির্ণয়ের জন্য  জানা কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়-

* মলদ্বারের পুঙ্খানুপুঙ্খ ফিজিক্যাল পরীক্ষা

* নালির ভিতর প্রোব পরীক্ষা

* ইনজেকশন পদ্ধতি (মিথাইলিন ব্লু/হাইড্রোজেন পার অক্সাইড)

* নালিটি টেনে ধরে পরীক্ষা করা ইত্যাদি।

 

ফিস্টুলা অপারেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে, তবে তিনটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়।

১. ফিস্টুলোটমি নালিটি কেটে ভিতরের পথটি খুলে দেওয়া।

২. ফিস্টুলেকটমি নালিটি পুরোটা কেটে ফেলা।

৩. সেটন-সাধারণত হাই ভেরাইটি/জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। কারণ নালি কাটতে গিয়ে মলদ্বারের চতুর্দিকের মাংসগুলো বেশি করে কেটে ফেললে মল ধারণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে অপারেশন ধাপে ধাপে করা হয়। দুটি ধাপের মধ্যে সাধারণত এক-দুই সপ্তাহ বিরতি দেওয়া হয়। ফিস্টুলা কাটার পর তা বায়োপসির জন্য পাঠানো উচিত এবং এক্ষেত্রে সাধারণত সেলাই দেওয়া হয় না, গর্তটি তলদেশ থেকে ধীরে ধীরে ভরে ওঠে। যতদিন পর্যন্ত ঘা না শুকায় প্রতিদিন দিনে কয়েকবার হিপ বাথ দেওয়া উচিত।

 

ফিস্টুলা অপারেশনের পর আবার হতে পারে?

এ রোগ অপারেশনের পর আবার হতে পারে। সাধারণত অপারেশন পরবর্তী ফিস্টুলা পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা ৫-১৫%, তবে জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে তা ৪০% পর্যন্ত হতে পারে।

 

লেখক

ডা. আফরিন সুলতানা

সার্জারি বিশেষজ্ঞ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর