শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রিয় ভ্যালেনটাইন

তানিয়া তুষ্টি

প্রিয় ভ্যালেনটাইন

যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে আসার ছুতো খোঁজে সবাই। তাই ভ্যালেনটাইনসের মতো বিশেষ দিনের প্রাধান্য বেশি। ♦ মডেল : অপূর্ব ও মেহজাবিন ♦ ছবি : মোহসীন আহমেদ

ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেনটাইনস ডে- যে নামেই ডাকুন, দিনটি এলেই বিশ্ব মাতে তারুণ্যময় এক উন্মাদনায়। ১৪ ফেব্রুয়ারি এখন শুধু একটি তারিখ নয়, দিনটির সঙ্গে মিশে গেছে সবার ভালোলাগা, ভালোবাসা, আবেগ-অনুভূতি। বিশ্বময় দোলায়িত হয় ভালোবাসার অকৃত্রিম অনুভূতিতে। প্রিয়জনরা একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের প্রয়াস পায়।

 

বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের চারপাশে শুরু হয়েছে সাজ সাজ রব। বিশেষ পোশাক, মিল রেখে সাজসজ্জা, পছন্দের কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা, খাবার দাবার আয়োজন, বাহারি রঙে সেজেছে গিফট কর্নার এমনকি বিশেষ দিন উপলক্ষে কারও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। পুঁজিবাদের এই যুগে ভ্যালেনটাইনস ডে ব্যবসায়িক সিজন বটে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের আর দোষ কী বলুন, পাগল প্রেমিক-প্রেমিকা যখন প্রিয় মানুষটির জন্য স্পেশাল কিছু উপহার দিতে চায়। ভিন্ন আমেজের পরিবেশে প্রিয় মানুষের মন রাঙিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন তো ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতেই হয়। এ উপলক্ষে রেস্টুরেন্ট, পার্ক, রিসোর্ট সবখানেই লাগে উৎসবের ছোঁয়া। জানেন তো, সাংস্কৃতিক আয়োজন ছাড়া যে কোনো উৎসব লবণ ছাড়া তরকারির মতো। তাই এই দিন উপলক্ষে থাকে নানা রকম সাংস্কৃতিক আয়োজন। হাসি, গান, আড্ডা, ঘোরাঘুরি, প্রিয়জনকে বিশেষভাবে সময় দেওয়া, গিফট দেওয়া এমনকি কারও কারও বিয়ে এনগেজমেন্টও হয়ে থাকে।

ভালোবাসা দিবসে সবার মনে বয়ে যায় আবেগিক জোয়ার। তাৎপর্যময় এই দিনের ইতিহাস সাক্ষী দেয়  প্রেমিক-প্রেমিকার অনন্য ভালোবাসাকে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের মূল নায়ক-নায়িকাকে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে ভোলে না এ যুগের প্রেমিকযুগল। আর তাইতো কত শত আয়োজন।

একটি আবেগধর্মী শর্তে মোড়া ভালোবাসার সম্পর্ক। এর গভীরতা যেমন অতলস্পর্শী তেমনি দায়-দায়িত্বও অনেক। হাজার মানুষের ভিড়ে বিশেষ কারও জন্য নিজের সামর্থ্য, আবেগ, অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার এ এক দারুণ সুযোগ। প্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষতায় আমরা সব সময়ই প্রিয়জনের খোঁজ পাই। কিন্তু তা নিতান্তই হয় ভার্চুয়ালভাবে। হয়তো এ জন্য দুজনের দূরত্বের বিরহ কিছুটা ঘোচে কিন্তু তারপরও বিশেষ দিন এলে বাস্তবে কাছে আসার আকাক্সক্ষা একে অপরকে পাগল করে তোলে। বেশ কয়েকদিন আগ থেকে আমাদের মাঝে শুরু হয় নানা পরিকল্পনা। হাজার ব্যস্ততার মাঝে এই দিনে একটু সময় বের করা। প্রিয়জনের জন্য পছন্দসই উপহার কেনা। কোথাও ঘুরতে যাওয়া। এই বাহানায় দুজনের কিছু প্রিয় সময় কাটানো। দিন যত যাচ্ছে, ভালোবাসা দিবসের গুরুত্ব বাড়ছে তত বেশি। যদি অন্যভাবে বলা যায়, আমরা যতই ব্যস্ত থাকি না কেন, প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে আসার ছুঁতা খুঁজি সবাই। তাই ব্যস্ততা ফুরসত না দিলেও বিশেষ দিন উপলক্ষে ঠিকই সময় বের করে নিচ্ছি।

 

প্রিয় মানুষটিকে চমকে দিতে বিশেষ কোনো স্থানে করতে পারেন আনন্দ আয়োজন। সে জায়গাটি সাজাতে পারেন ভালোবাসাময় স্বর্গরাজ্যে। পাশ থেকে ভেসে আসতে পারে সুমধুর গান। আর মজার সব খাবার তো থাকতেই পারে। কিছু না জানিয়ে আপনার এই আয়োজন তাকে অভিভূত করবেই।

 

দিনে দিনে ভালোবাসা দিবসের গুরুত্ব বাড়ছে সবার কাছে। আপনিও নিশ্চয় এর ব্যতিক্রম নন। এরই মধ্যে পরিকল্পনা করে ফেলেছেন পছন্দের মানুষটির জন্য আপনি কী করবেন। প্রথমত তার খুশিতে এমন কোনো কিছু করতে চান যা দুজনকেই আবেগাপ্লুত করে, দৃঢ়তা পায় সম্পর্কের। সেসব কাজের মধ্যে প্রধানত কিছু উপহার দেওয়া আর তার সামনে সুন্দরভাবে উপস্থিত হওয়া। কারও কাছে এসব আয়োজন কিছুটা বাড়াবাড়ি। অথচ বিশেষ দিনে বিশেষ মানুষটির জন্য কিছু করার আবেদন বিফলে যায় না- এটি আপনাকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে, চারপাশের আয়োজন দেখে আপনার প্রিয় মানুষটির মনেও কিছুটা গুরুত্ব প্রাপ্তির আকাক্সক্ষা জন্মাতে পারে। তাই আপনার সামান্য আয়োজন দিয়ে একটু হলেও দোলায়িত করুন প্রিয় মানুষের হৃদয় কোণে জমে থাকা তরল ভালোবাসাকে। চাইলে এই দিনে অন্যভাবে চমকে দিতে পারেন আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে। দেখবেন প্রিয় মানুষটি পুরো বিষয়টি দারুণ উপভোগ করছে। তাকে আনন্দিত করে আপনিও কম তৃপ্ত হবেন না নিশ্চয়।

বিশেষ এই দিনে প্রিয় মানুষটির সান্নিধ্যে যেতে প্রথমেই যে বিষয়টি আসে তা হলো পোশাক নির্বাচন। তার সামনে কীভাবে উপস্থিত হবেন? দিনের বিশিষ্টতায় কী রঙের পোশাক মানানসই। এসব নিয়ে হয়তো ভেবেছেন কিংবা কিছুই ভাবেননি। প্রেমে আস্থা থাকায় ভাবছেন তার সামনে আলাদা করে উপস্থিত হওয়ার কী আছে? কিন্তু এই বিশেষ দিনে বিশেষভাবে তৈরি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকেই যায়। অনেক যুগল আবার একই রঙের পোশাক কিনে নেন আগেভাগেই। তারপর দুজনের একই পোশাকে উপস্থিতি আলাদা ভাবার্থ সৃষ্টি করবে।

ভালোবাসার সঙ্গে গোলাপি রঙের জোর সম্পর্ক থাকায় পোশাকটি বেছে নিতে পারেন এই রঙে। ইদানীং লাল রংকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে সবাই। প্রিয় মানুষটির পছন্দের কোনো রং থাকলে সেটিকেও প্রাধান্য দিতে পারেন। এই দিনে মেয়েরা পরতে পারেন শাড়ি, সালোয়ার কামিজ অথবা ট্রেন্ডি কোনো পোশাক। ছেলেদের জন্য শার্ট, পাঞ্জাবি বেশ মানানসই। তবে সবটাই বেছে নিতে হবে নিজের গড়ন ও অভ্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। ঝলমলে রোদ, হালকা শীত, বসন্ত-  সর্বোপরি ভালোবাসার ভ্যালেন্টাইনকে ভাবনায় রেখে নিজেকে উপস্থাপন করা শ্রেয়।

 

ঘুরে আসি অজানাতে

পছন্দের মানুষটি নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন যে কোনো দিন। কিন্তু বিশেষ দিনে ঘোরাঘুরি তৈরি করবে নতুন ভাবার্থ। অবশ্য কাছের মানুষটি সঙ্গে থাকলে সবই ভালো লাগে। তবুও তার পছন্দের কোনো জায়গায় ঘুরতে গেলে ভালোলাগা আরও বাড়বে। যতক্ষণ আপনি তার সামনে থাকছেন মনোযোগটি থাকুক তার প্রতিই। একজনের সঙ্গে অপরের আত্মিক টান সৃষ্টির মোক্ষম সুযোগ হতে পারে। বিশেষ অথবা ঐতিহ্যবাহী কোনো যানবাহনে ঘোরা হতে পারে আপনাদের জন্য স্মৃতিময়।

 

ভালোবাসা অনিঃশেষ

এই অমোঘ সত্যকে ধারণ করে বিশেষ দিনে ভালোবাসাকেও করতে পারেন সংজ্ঞায়িত। এ দিনে দুজনে মিলে শপথ নিতে পারেন নতুনভাবে পথচলার। একে অন্যকে সম্মানের স্থানে রেখে ভালোবাসা আরও মজবুত করার। এতে আগামী দিনগুলো হবে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। অনেক কথা মুখে বলা হয়ে ওঠে না। আজকের এই বিশেষ দিনে মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে ফেলুন চিঠি। সেকেলে রীতিতে ভালোবাসার এই প্রকাশ কিছুটা হাসির খোরাকও জোগাতে পারে দুজনের। কিন্তু এটাই হতে পারে প্রিয় মানুষটির জন্য চমক। অল্প কথায় সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা চিঠিটি দিতে পারেন সুন্দর একটি খামে। নিজ হাতে তৈরি করলে তার গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে যাবে। অনেকে হয়তো ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষকে প্রথম না বলা কথা বলবে। তাদের উত্তেজনা অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই। সেজন্য রোমান্টিক রাতের খাবারের পরিকল্পনা দারুণ কাজে দেবে। এ ছাড়াও প্রেমিকযুগল বা নবদম্পতিদের জন্যও ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের উপযোগিতা কিন্তু কম নয়। তবে একেবারেই যদি এত আনুষ্ঠানিকতা না করতে চান মনোরম পরিবেশের কোনো রেস্টুরেন্টে বসতে পারেন মনের মানুষটির সঙ্গে। প্রিয় মানুষটিকে চমকে দিতে বিশেষ কোনো স্থানে করতে পারেন আনন্দ আয়োজন। সে জায়গাটি সাজাতে পারেন ভালোবাসাময় স্বর্গরাজ্যে। পাশ থেকে ভেসে আসতে পারে সুমধুর গান। আর মজার সব খাবার তো থাকতেই পারে। কিছু না জানিয়ে আপনার এই আয়োজন তাকে অভিভূত করবেই। ভৌগোলিক দূরত্ব মনের টানের কাছে কিছুই না। এমন দিনে যারা নিতান্তই দূরে অবস্থান করবেন তাদের জন্য ভরসা হতে পারে ফোন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ভালোবাসা দিবসের এই আনন্দকে বহাল রাখতে মাঝে মাঝেই হতে পারে এমন কিছু সারপ্রাইজিং ট্যুর। এভাবেই রচিত হবে আপনাদের কাছে আসার গল্প।

 

যত্ন নিন মনের

বিশেষ দিবসে ভালোবাসার এত এত গল্পের ভিড়েও ঘটে যায় অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। ভ্যালেন্টাইন উপলক্ষে প্রিয় মানুষটির কাছে যতটা গুরুত্ব আশা করা হয় তার কিছু ঘাটতি থাকলেই বেধে যায় গোল।  এত এত আয়োজনের ভিড়ে কারও মনে জাগতে পারে কাল্পনিক কোনো চাওয়া। কিন্তু মনে রাখা উচিত, নানা আনুষ্ঠানিকতার ধাক্কায় না পড়ে গুরুত্ব দিতে হবে প্রিয় মানুষটির বাস্তবিক অবস্থানের প্রতি। নিতে হবে পছন্দের মানুষের মনের যতœ। তার ব্যস্ততা, সামর্থ্য আর সুযোগের দিকে খেয়াল রেখে আপনার প্রত্যাশা রাখা হবে প্রকৃত ভালোবাসার উদাহরণ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর