শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সারা দিন স্বস্তি

তানিয়া তুষ্টি

সারা দিন স্বস্তি

প্রকৃতিতে এখনো রয়েছে শীতের হালকা আমেজ। তাই পোশাকেও সামান্য গরমিল থেকে যায়। ► মডেল : সুমি সাবাহ ► পোশাক : ইয়াংকে ► মেকআপ : শোভন মেকওভার ► ছবি : নেওয়াজ রাহুল

ঋতু বদলে প্রকৃতি বদলাবে এটি যেমন স্বাভাবিক, তেমন ঋতুর সঙ্গে পোশাক-আশাকে পরিবর্তন আসবে এও স্বাভাবিক। আর ফ্যাশন এক্সপেরিমেন্টের প্রথম শর্তই পোশাক। রং,  কাটিং, প্যাটার্নে আধুনিকতা আর আভিজাত্য না থাকলে যেন ফ্যাশনে পূর্ণতা আসে না। আবার প্রতিদিনের স্বস্তির দিকে তাকালে সর্বদা বেছে নিতে হবে সময়োপযোগী রূপচর্চাও।

জমকালো পোশাকে সবসময় স্বস্তির আশা করা যায় না। অপরদিকে ফ্যাশনেবল পোশাকে যে আরাম বা স্বস্তির পুরোটা মিলবে তাও নয়। আর তাই আরামের কথা চিন্তা করতে গেলে ফ্যাশন ঠিক থাকবে তো? যদিও আধুনিক যুগের ফ্যাশন নিয়ে এমন চিন্তার অবসান ঘটেছে বহু আগেই। আজকাল ফ্যাশন ডিজাইনাররাও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে আনছেন সময়োপযোগী পোশাক।

আসলে ঋতুতে পরিবর্তন আসবে বিষয়টি যেমন স্বাভাবিক, তেমনি ঋতুর সঙ্গে পোশাকেও পরিবর্তন আসবে এটাও স্বাভাবিক। ফ্যাশনে এক্সপেরিমেন্ট চালাতে গেলে প্রথমেই হাতে আসে দৈনন্দিনের পোশাক। রংটা গাঢ় বা হালকা, কাটিংয়ে একটু বৈচিত্র্য অথবা কাপড়ের মেটেরিয়ালসে ভিন্নতা। পরিবর্তন বলতে আমরা কেবল এটাই বুঝি। কিন্তু যেহেতু সময় এখন বসন্তের। আর বসন্তের হাত ধরেই হাজির হয় গরমের মৌসুম। তবুও প্রকৃতিতে এখনো শীতের হালকা আমেজ রয়েই গেছে। তাই বলাই যায় পোশাকের পরিবর্তনের তালিকায় একটু গরমিল রয়েই গেছে।

পোশাক নির্বাচনে সচেতনতা

শীতের কয়েক মাস বেশ জমিয়ে ফ্যাশন করেছেন। কিন্তু সময় তো এখন বসন্তের দখলে। হালকা গরম আর হালকা ঠান্ডা বিরাজ করছে প্রকৃতিতে। এমন সময় কেমন পোশাক চাই? সহজ উত্তরটি হলো- সময়োপযোগী পোশাক। ফাল্গুনের দিনে পোশাকে থাকবে রঙের বিচিত্রতা। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া, ফ্রক যে যাই পরুক না কেন তাতে থাকা চাই একটু হলুদ, বাসন্তী কিংবা লাল রঙের ছোঁয়া। তা ছাড়া এখন দুপুরে গরম আর সন্ধ্যার পর হালকা ঠান্ডা পড়তে শুরু করে। তাই ক্ষেত্র বিশেষে এমন পোশাক পরবেন যা দিনের শেষ ভাগে আপনার বিরক্তের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। আজকাল সব বয়সীই পোশাক-সাজ নিয়ে বেশ সচেতন। তাদের এ সচেতনতাকে কেন্দ্র করে দিন দিন গড়ে উঠছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস। ভিন্ন ভিন্ন রুচির কথা মাথায় রেখেই তৈরি হচ্ছে নানা রঙের, নানা ডিজাইনের পোশাক।

পোশাকের ধরন

ক্ষেত্র বিশেষে আমরা একেক জায়গায় একেক ধরনের পোশাক পরে থাকি। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় বা চাকরির ক্ষেত্রে সালোয়ার-কামিজকে বেছে নেই। আবার আড্ডা বা পার্টিতে বেছে নেই শাড়ি, কুর্তি-কামিজ, টপস বা ফতুয়ার মতো পোশাক। তবে পোশাক যাই পরুন না কেন বৈচিত্র্যতা থাকলে বদলে যাবে আবহ। যেমন- কুর্তি বা কামিজের কাটিংয়ে থাকতে পারে ভিন্নতা। আর অহরহ সালোয়ারের পরিবর্তন তো আমাদের দৈনন্দিন ট্রেন্ড। লং কামিজের চল গত বছর যেমন ছিল এ বছরও তেমনি রয়েছে। তবে লেস বা সার্টিন কাপড়ের বর্ডার এখন আর চোখে পড়ছে না। সুতি বা লিলেন কাপড় দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন সময়োপযোগী আপনার পছন্দের লং কামিজটি। শাড়ি পরার ক্ষেত্রে সুতি অথবা সিল্ককে বেছে নিতে পারেন। হাফ সিল্কও জায়গা করে নিতে পারে আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের পোশাকে। তবে থ্রি-কোয়ার্টার বা ফুল স্লিভের ব্লাউজ এড়িয়ে চলুন।

পরিবর্তন আনুন কাপড়ে

স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গাটি একান্ত আপনার। আপনার পছন্দ অনুযায়ী পোশাকটি জায়গা করে নেবে আপনার শেলফে। এখন একেবারে যে সুতি কাপড়ই পরতে হবে, ব্যাপারটা আসলে এ রকম না। আপনি চাইলে খাদি কাপড় পরতে পারেন। যা দুপুরের রোদে শরীরকে ঠান্ডা রাখবে আর রাতে শীত থেকে দেবে মুক্তি। হাফ সিল্ক আর সিল্ক দুটোই তার আগের জায়গা ধরে রেখেছে। যা শীত-গরম দুই ঋতুতেই গ্রহণযোগ্য। এবারের শীতে মকমল কাপড়ের বেশ চল ছিল। কিন্তু এই সময়টাতে এ ধরনের ট্রেন্ড ধরে রাখলে চলবে না। মকমল, জর্জেট এ ধরনের কাপড় একটু এড়িয়ে চলুন। এগুলো আপনার শরীরে এখন অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে সুতি ও লিলেন পরেই আপনি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।

রঙের আধিক্যতা

হালকা রং দিয়ে আপনিই শুরু করে দিতে পারেন এ সময়ের ট্রেন্ড। তবে নিজের সঙ্গে মানানসই এমন রং-ই বেছে নেওয়া ভালো। কালো রং  যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। কারণ এ সময় রোদের তীব্রতা বেশি থাকে।  ফলে এই রঙের পোশাক পরলে গরমের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। যতটা সম্ভব হালকা রং যেমন ধরুন- গোলাপি, আকাশি, হালকা সবুজ, হলুদ, ফিরোজা, লাল এ ধরনের রং বেছে নিতে পারেন।

নজর রাখুন অনুষঙ্গে

পোশাকের সঙ্গে অনুষঙ্গ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গরমে পোশাকের সঙ্গে মানানসই হালকা চটি বেশ আরামদায়ক। হাতে কাঠের বালা বা সুতোর চুড়ি পরতে পারেন। কানে পরতে পারেন পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে ছোট দুল। গরমে ধাতুর তৈরি গয়না না পরাই ভালো। এর বিকল্প হিসেবে পরতে পারেন প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি দুল, চুড়ি বা বড় মালা। ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ঝোলা ধরনের ব্যাগ। তার ভিতরে রাখতে পারেন একটি রোদ-চশমা।

ফাল্গুনের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসতে থাকে। এলোমেলো হাওয়ার সঙ্গে উড়তে থাকে ধুলোবালি। তাই ত্বকের বিশেষ যতœ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ত্বক ভালো থাকলেই সাজগোজ করে আনন্দ পাওয়া যায়। তাই সারাদিনের স্বস্তির জন্য প্রয়োজন রূপচর্চাও।

নতুন ত্বককে স্বাগত

যতœ নেওয়ার মাধ্যমেই স্বাগত জানাতে হবে নতুন ত্বক বা চামড়াকে। মিশ্র আবহাওয়া থাকার কারণে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় বলে জানান শারমিন কচি। ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) আর গোলাপজল এই সমস্যার সমাধান দেবে অনেকাংশে। তবে অ্যালোভেরা কখনোই সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না। ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ভিতরের অংশটুকু বের করে ডিপ ফ্রিজে রাখতে পারেন। ব্যবহারের আগে জেল বের করে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। গোলাপজল মিশিয়ে মুখে মালিশ করুন সপ্তাহে এক দিন। অ্যালার্জির পাশাপাশি ব্রণ, র‌্যাশ, ঘামাচির সমস্যা কমে যাবে। ত্বক উজ্জ্বল করবে না, এই মিশ্রণ ব্যবহারে ত্বক সুস্থ থাকবে।

স্বাভাবিক তাপমাত্রা

ত্বকের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখা জরুরি এ সময়। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ত্বক কালো হয়ে যায়, ব্রণ হয়, র‌্যাশ ও অ্যালার্জি হবে। প্রতিদিন বরফ থেরাপি দরকার এ কারণেই। সমপরিমাণ গোলাপজল ও পানি মিশিয়ে বরফ তৈরি করুন। তবে কাপড়ের ওপর বরফ রেখে মুখে ঘষবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতি হবে। বরফের পেছন দিকটা মোটা কাপড় দিয়ে ধরে নিতে পারেন। ত্বকের ওপর বরফের ঠান্ডা পরশ সরাসরি লাগাতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর