শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
সুস্বাস্থ্য

ডায়াবেটিসে মাড়ির সমস্যা

ডায়াবেটিসে মাড়ির সমস্যা

ইনফেকশন দাঁতের মাড়ি এমনকি হাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। এর ফলে দাঁত দুর্বল হয়ে নড়ে গিয়ে পড়ে যেতে পারে। আর আপনি একদিন হারাতে পারেন মূল্যবান দাঁত।

ডায়াবেটিস রোগের জন্য দাঁতের মাড়ি এবং হাড়ে (যা দাঁতকে যথাস্থানে রাখতে সাহায্য করে) ইনফেকশন হতে পারে। অন্যান্য ইনফেকশনের মতো রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে দাঁতের মাড়িও আক্রান্ত হতে পারে। এই সমস্যাকে প্রতিরোধ করার জন্য বছরে অন্তত দুইবার ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং অবশ্যই ডাক্তারকে আপনার ডায়াবেটিস সম্পর্কে অবহিত করা প্রয়োজন। দিনে দুইবার দাঁত ব্রাশ ও ডেন্টাল ফস দ্বারা পরিষ্কার করা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন। ডায়াবেটিস রোগীদের দাঁতের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার এটাই প্রধান উপায়।

 

লক্ষণসমূহ

* দাঁতের মাড়ি লাল হয়ে ফুলে যায়।

* দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে।

* দাঁতের গোড়া থেকে মাড়ি সরে যাওয়ার কারণে দাঁতকে অস্বাভাবিক অবস্থায় দেখা যায়।

* যদি দাঁত নড়ে যায় এবং সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।

* মুখে দুর্গন্ধ হয়।

* দাঁতের কামড় অস্বাভাবিক অনুভূত হয়।

* অকার্যকর ডেনচার (কৃত্রিম দাঁত) হয়।

এই ধরনের কোনো সমস্যায় ডেন্টিস্টের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করা প্রয়োজন।

 

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পরামর্শ

ডায়াবেটিস রোগীদের মাড়ির প্রদাহ বেশি হওয়ার কারণ হলো-

১। দেহে ইনসুলিন ঘাটতি হলে আমিষেরও ঘাটতি হয়। ফলে কোষকলার (ঞরংংঁবং) স্বাভাবিক বৃদ্ধি, সংস্কার ও উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাই মুখের কোনো স্থানে ঘা হলে ও প্রদাহ থাকলে শুকাতে বিঘœ ঘটে।

২। দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে আসে। ফলে দাঁতের গোড়ায় প্লাক জমা থাকলে সহজেই মাড়ির প্রদাহ শুরু হয়।

 

ডায়াবেটিস রোগীদের দন্ত বা ডেন্টাল ক্যারিজ রোগ হতে পারে। তার কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন।

ক) মুখের লালার সঙ্গে গ্লুকোজের বাড়তি সংযোজনের ফলে ওই গ্লুকোজ মুখে এক ধরনের অণুবীণিক জীবাণুর সঙ্গে মিলে অম্ল বা অ্যাসিড তৈরি করে। অ্যাসিড দাঁতের শক্ত আবরণ এনামেল ক্ষয় করতে থাকে এবং ধীরে ধীরে দাঁতের ভিতরে গর্তের সৃষ্টি করে।

খ) মুখের লালার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয় এবং পরিমাণ কমে যায়। ফলে মুখের অতিরিক্ত শুকনো পরিবেশে আহারের কণাগুলো ধুয়ে মুছে যেতে পারে না। এই খাদ্য কণাগুলো দীর্ঘদিন দাঁতের গায়ে ও মাড়ির ফাঁকে জমে থেকে দাঁতের ভিতরে গর্তের সৃষ্টি করে।

 

প্লাক : মুখে খাদ্যকণা জমে থেকে যে আবরণ সৃষ্টি হয় এর নাম ডেন্টাল প্লাক। এই প্লাক লাখ লাখ অণুবীণিক জীবাণুর সমষ্টি। মুখের দুই প্রধান রোগ ডেন্টাল ক্যারিজ ও মাড়ির প্রদাহে ডেন্টাল প্লাকই দায়ী। ডায়াবেটিস রোগীদের যেসব কারণে প্লাক বৃদ্ধি পেতে পারে সেগুলো হচ্ছে-

 

১। ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেওয়ার আগে যাদের মাড়ির প্রদাহ (এরহমরমরঃরবং) বা দন্তবরক প্রদাহ (চবৎরড়ফড়হঃরঃরং) থাকে তাদের প্রদাহ নিঃসৃত রস বৃদ্ধি পায়। ফলে ডেন্টাল প্লাকও বাড়তে থাকে। 

২। বৃহৎ ও ক্ষুদ্র লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস বৃদ্ধি পায় এবং তা খাদ্যকণার সঙ্গে মিসে প্লাক তৈরি করে।

৩। দাঁত দিয়ে খাদ্যদ্রব্য চিবানোর কর্মক্ষমতা যাদের কমে যায় (ডায়াবেটিস রোগীর মাড়ির সংক্রমণে) তাদের মুখেও প্লাকের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য নিয়ন্ত্রিত হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাড়ির ও দাঁতের ধারণশক্তি ও প্রতিরোধশক্তি কমে যায়। ফলে খাওয়ার সময় ব্যথা অনুভূত হয়, তাই চিবিয়ে খাওয়ার প্রবণতাও হ্রাস পায়। এসবের জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের প্লাক বৃদ্ধিও তাড়াতাড়ি হয়।

 

ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেমন তিনটি D মেনে চলতে হয় যথা-

D= Diet, D=Drug, D= Discipline তেমনি ডায়াবেটিস রোগীদের মুখের রোগ প্রতিরোধেও তিনটি D মেনে চলা প্রয়োজন।

খাদ্য (Diet) : প্রথমেই Diet বা খাদ্য নিয়ে আলোচনা করা যাক। বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, শর্করা বা চিনিজাতীয় খাদ্য গ্রহণের পর মুখ পরিষ্কার না হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই এক ধরনের অম্ল বা অ্যাসিড তৈরি হয় এবং তা দাঁতকে ক্ষয় করতে থাকে। এই ক্ষয় পদ্ধতির নামই ডেন্টাল ক্যারিজ। তাছাড়া খাদ্যকণা জমে থাকার যে আবরণ বা প্লাক সৃষ্টি হয় সেই প্লাক ধীরে ধীরে মাড়িকে আক্রমণ করে। ফলে মাড়ির প্রদাহ বা দন্তাবরক প্রদাহ শুরু হয়।

 

 

লেখক-

অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরী

সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টিস্ট্রি বারডেম হাসপাতাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর