শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
শেষ প্রচ্ছদ

পোশাকে প্রিয় একুশ

ফ্রাইডে ডেস্ক

পোশাকে প্রিয় একুশ

সাদা ও কালো। বিপরীত দুই রং যখন পাশাপাশি আসে, তখন তৈরি হয়ে যায় আধুনিকতা ও আভিজাত্য। ► মডেল : বৃষ্টি ও নিপা ► পোশাক : রঙ বাংলাদেশ ► মেকওভার : নজরুল ► ছবি : মুনতাকিম

১৯৫২ সাল। ২১ ফেব্রুয়ারি। সালাম, জব্বার, রফিক, বরকতের লাশ। ১৪৪ ধারা! ভাষা আন্দোলন এবং সবশেষে ভাষার স্বীকৃতি। এরপর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিতে গর্বিত বাঙালির এই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশের দিনে রক্তের দামে কেনা বর্ণমালার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নানা রঙে, নানা ঢঙে।

 

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৪৪ ধারা! ভাষা আন্দোলন এবং সবশেষে ভাষার স্বীকৃতি। এরপর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিতে গর্বিত বাঙালির অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালির এই অমর স্বীকৃতি এখন শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। একুশের দিনে রক্তের দামে কেনা বর্ণমালার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নানা রঙে, নানা ঢঙে। বাঙালিয়ানার সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে পড়েছে বাঁচার অনুপ্রেরণা হিসেবে। তাই তো বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস এবং বুটিকের প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের পোশাকের পসরায় একুশকে প্রতিপাদ্য করে তৈরি করছে নতুন ডিজাইনের পোশাক।

 

ইতিহাস ও ঐতিহ্য

২১, প্রতিটি বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা আমাদের মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা রক্ষার্থে প্রাণ দিয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য এরকমের আত্মত্যাগের নজির আর নেই। সেই থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি এই শহীদদের আত্মদান স্মরণ করা হয় পরম শ্রদ্ধাভরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে।

 

ভাষার প্রতি বাঙালির যে মমত্ববোধ, একুশের মাধ্যমে তা উঠে আসে লেখায়, রেখায় এবং দৈনন্দিন জীবন-যাপনে; এমনকি ফ্যাশনের ভুবনেও। একুশের ভাবনার সঙ্গে মিল রেখে পোশাকে বর্ণমালার ব্যবহার ব্যাপক জনপ্রিয়। আর পোশাকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একুশের গান, কবিতা, স্লোগান ও বাংলা ভাষায় রচিত বিভিন্ন পক্তিমালা। যেখানে ফুটে উঠেছে বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানা গৌরবগাথা। শহীদ মিনার, মানচিত্র, পতাকাসহ একুশের বিভিন্ন চিত্রের প্রকাশ ঘটেছে একুশের পোশাকে।

 

 মজার বিষয় হচ্ছে, এ দুটি রং যখন পাশাপাশি চলে আসে তখন এদের বৈপরীত্যেই যেন তৈরি হয়ে যায় নতুন অর্থ পোশাকে, ফ্যাশনে চলে আসে আধুনিক ও অভিজাত ভাব।

 

রঙে বৈচিত্র্য

নিষ্পাপ, সরল, বিশ্বাসযোগ্য- শুভ্রতার প্রতীক সাদা। অন্ধকার, শক্তি, ভয়, রহস্য, আনুষ্ঠানিক, প্রতিপত্তি, ভারি- নেতিবাচক শব্দই যেন বয়ে চলেছে কালো রং। আর বিপরীত মেরুর এই দুই রং মিলে তৈরি করে নতুন আবহ। পোশাকে ও ফ্যাশনে চলে আসে আধুনিকতা আর আভিজাত্যের ভাব। একুশের চেতনার সঙ্গে মিলিয়ে পোশাকের পসরাতে বিভিন্ন দোকান ও বুটিকগুলো তৈরি করছে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক। একুশ এখন আর দুটি রঙের মধ্যে আটকে নেই। রঙের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে শোকের কালো,

সূর্যের লাল, বিষন্ণতার ধূসর, সত্য ও পবিত্রতার প্রতীক সাদার সমতলকে। এছাড়া সবুজ, হলুদ, নীল, তামাটেসহ সব রঙেই সেজেছে একুশের পোশাক।

নকশা ও পোশাকের ধরন

একুশে পোশাকের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গর্বিত বর্ণমালার সাজ। সেলেব বা আমজনতা যাই হোন না কেন, এই দিনে বর্ণমালার পোশাক ব্যাপারটাই যেন গর্বের ব্যাপার। এবারের একুশের পোশাকের মোটিফে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে থাকছে- বর্ণ ও শব্দমালার বিন্যাস। পোশাকের অবয়ব অলঙ্করণে নানাভাবে বর্ণমালাকে মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্ণ ও শব্দমালার বিন্যাসে আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং অন্যান্য গর্বের বিষয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ফ্লোরাল মোটিফ, জ্যামিতিক নকশার সৃজনশীল অলঙ্করণে তৈরি হয়েছে সালোয়ার-কামিজ, কটি-কামিজ, কুর্তি, লং কুর্তি, সিঙ্গেল কামিজ, কটি-কুর্তি, শাড়ি, পাঞ্জাবি, শার্ট ইত্যাদি। এছাড়াও শিশুদের জন্যও রয়েছে সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি/টপস, পাঞ্জাবি, শার্ট ইত্যাদি। একুশের পোশাকের নকশায় বর্ণমালা, ভাষা ও ভাষাশহীদদের পাশাপাশি দেশজ চেতনা ও ঐতিহ্যের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই তো নকশিকাঁথা ফোঁড়, ব্লক, ¯ন্ডেপ্র-ব্লক, অ্যাপলিক, স্ক্রিন, হ্যান্ডপেইন্ট এবং অ্যামব্রয়ডারির কাজ চোখে পড়ার মতো। কাপড়ের ক্ষেত্রে সুতির প্রাধান্য থাকলেও তাঁত, মসলিন, সিল্ক প্রভৃতির ব্যবহারও কম নয়। প্রতিটি পোশাকে একুশের স্মারক হিসেবে রয়েছে বর্ণমালার প্রতি ভালোবাসা।

 

উপহারসামগ্রী

নতুন প্রজন্ম একুশকে কেবল চেতনায়ই ধরে রাখেনি, ছড়িয়ে দিয়েছে জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। বর্ণমালা ব্যবহারকে নতুনত্ব দিতে প্রতিটি শো-পিস ও গিফটহ্যাম্পারে আনা হয়েছে বর্ণমালার সাজ। একুশের পোশাকের পাশাপাশি মগ বা ক্ষুদ্র অনুষঙ্গেও যুক্ত করা হয়েছে বাঙালির ভালোবাসার ভাষা। ছোট্ট ছোট্ট চাবির রিংয়েও প্রিয় বর্ণমালা ধারণ করে করা হয়েছে অসাধারণ। বইমেলার বইয়ের ভালোবাসা তো বাঙালির জন্য পরম উপহার। একুশের এসব ছোট্ট উপহারের পসরা সাজিয়েছে আড়ং, অঞ্জন’স, হলমার্ট, আর্চিজ গ্যালারির মতো দোকান।

 

স্বদেশ প্রেম জাগুক প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ, বয়স্ক নির্বিশেষে সবাই মিলে মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করবেন। তাই তো বিশেষ এই দিনটি ঘিরে বাঙালির পোশাকে থাকছে বর্ণমালার প্রতি ভালোবাসার ছোঁয়া।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর