বুধবার, ১১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

জাতির পিতার স্বপ্ন ও আজকের বাংলাদেশ

জাতির পিতার স্বপ্ন ও আজকের বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে নিউজ টোয়েন্টিফোরের আয়োজনে গতকাল ইডব্লিউএমজিএল কনফারেন্স কক্ষে ‘জাতির পিতার স্বপ্ন ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। অনুষ্ঠানে অংশ নেন রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বৈঠক সঞ্চালনা করেন নিউজ টোয়েন্টিফোরের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান সামিয়া রহমান। আলোচনার চুম্বকাংশ তুলে ধরেছেন- রুহুল আমিন রাসেল, আকতারুজ্জামান, সাইফ ইমন ও আবদুল কাদের।  ছবি তুলেছেন : রোহেত রাজীব

 

 

গান্ধী-সুভাষ বসু ব্যর্থ

আমির হোসেন আমু

উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ন্যাপের অফিসে এক বৈঠকে আমাদের কাছে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বললেন, শেখ মুজিব পাকিস্তান হওয়ার পর থেকেই, পাকিস্তানে বিশ্বাসী ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমরা যখন কারাগারে ছিলাম, সেখানে বিভিন্ন দিবস পালন করতাম। একটি দিবসের আলোচনা সভায় কমরেড মণি সিংহ বলেছিলেন, শেখ মুজিব কোনো দিনও পাকিস্তানে বিশ্বাস করতেন না। আমাকে বলত দাদা, আপনারা কোনো দিনও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন না। আমাকে সাহায্য করেন, আমি দেশ স্বাধীন করে আপনাদের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। এই কথাগুলো অন্যদিক থেকে এসেছে।

অনেকে মনে করেন বঙ্গবন্ধু ছয় দফার মাধ্যমে স্বাধীনতার চিন্তা করেছেন। না। ১৯৬১ সালে বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, এবার যে আন্দোলনের সূচনা করব, তা হবে আমাদের মূল আন্দোলন। এজন্য তৈরি থেকো। আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামী কিংবা কমিউনিস্ট পার্টির মতো সংগঠন নয়। বহু স্তরের মানুষ এই পার্টিতে। এর নেতৃত্বে ছিল নিম্নশ্রেণি, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত লোক। সেই ধরনের সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা কোন ইতিহাসে আছে? এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সুচিন্তিত। তিনি বলতেন, প্রগতি মানে হঠকারিতা নয়। সারা জীবন কৌশলের ভিত্তিতে রাজনীতি করে ৭ মার্চের ভাষণ দেন। ৭ থেকে ২৫ মার্চ ছিল অসহযোগ আন্দোলন। তারপর জাতি সশস্ত্র আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কলকাতার নেতারা বলতেন, আমাদের দুই নেতার চেয়ে বড় তোমাদের নেতা। মহাত্ম গান্ধী অসহযোগ আন্দোলনের স্রষ্টা। কিন্তু তাঁর অসহযোগ আন্দোলন সফল হয়নি। সুভাষ বসু রক্ত চেয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন। অথচ বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে হাই কোর্ট পর্যন্ত সফল হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ভাষণে বললেন, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সবকিছু তিনি বলে গেলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাঁর সবকিছু গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।

 

 

বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করলে দেশ, জাতি, সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যক্তি সবারই কল্যাণ সাধিত হয়

শেখ শহীদুল ইসলাম

সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় পার্টি-জেপি

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ স্বার্থকভাবে পালন করা উচিত আমাদের নিজেদের স্বার্থেই, যাতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারি আমরা। আর সে আদর্শকে ধারণ করে আগামী দিনে আমাদের দেশের নেতৃত্ব দিতে পারে তারা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার পরিচয় আজন্ম। দীর্ঘদিন আমরা একই ছাদের নিচে ছিলাম। খুব কাছ থেকে জাতির জনককে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন মহামানব, যাকে অনুসরণ করা যায়। যাকে অনুসরণ করলে দেশ, জাতি, সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যক্তি সবারই কল্যাণ সাধিত হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বারা অনেকটা প্রভাবিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধুর মধ্যে এ তিনজনের চরিত্রের বাস্তব সমন্বয় ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু একদিকে ছিলেন কৃষক, শ্রমিকের প্রাণপ্রিয়। অন্যদিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো ছিলেন দক্ষ সংগঠক।

 

বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা নন তিনি একজন বিশ্বনেতা

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি, অতি প্রত্যুষে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে গিয়ে পৌঁছেছিলেন। সে সময়ের যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ ছিলেন স্কটল্যান্ডে। বঙ্গবন্ধুর আগমনের খবর পেয়ে দ্রুত লন্ডনে ফিরে এলেন। সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি আপনার স্কটল্যান্ডের অফিশিয়াল ভ্রমণ বাতিল করে লন্ডনে কেন ফিরে এলেন? জবাবে এডওয়ার্ড বলেছিলেন, একজন যুগস্রষ্টা বিশ্বনেতা যখন আমার বাড়িতে এসেছেন, তখন আমি কী করে বাড়ির বাইরে থাকি। কথাটি বলার উদ্দেশ্য হলো- বিশ্ব নেত্রীবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে কত ওপরে স্থান দিতেন। বিশ্বনেতারা মেনে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি একজন বিশ্বনেতা। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। এটাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। স্বাধীনতাবিরোধীরা যদি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করত, আজ বাংলাদেশ যে অবস্থানে এসেছে ৪০ বছর আগেই সে অবস্থানে থাকত।

 

সমতা প্রসারিত হলেই বঙ্গবন্ধুকে প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে

ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী

সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক চেয়ারম্যান, ইউজিসি

হালকা কথা বলে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। এই পর্বতসমান মানুষটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন ছোটবেলা থেকে। জীবনের শেষ দিন যখন গুলি করতে এসেছে, তখনো বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেছেন- তোরা কী চাস? শতবর্ষ উদযাপনে অন্যায়ের প্রতিবাদ যারা করবেন, তারাই বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত অনুসারী। তিনি আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। পতাকা দিয়েছেন। আত্মমর্যাদা দিয়েছেন। তিনি অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে একটা রাষ্ট্রকে প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। বিশ্বের অগণিত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বঙ্গবন্ধু। সে প্রতিনিধিত্ব তিনি আজও করবেন এবং অনন্তকাল পর্যন্ত করবেন। আজকে আমাদের অনেক অর্জন হয়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই প্রশংসার দাবিদার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সমতার ক্ষেত্র প্রসারিত করলেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

 

বাঙালির প্রতিরোধের প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু

আবুল হাসান চৌধুরী

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধুকে একসঙ্গে অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়েছে। সবকিছুকে সমন্বয় করে তিনি ১৮ মিনিটের যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেটা এখন পৃথিবীর অনন্য স্বীকৃত ভাষণ। বাঙালির প্রতিরোধের প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি ছিলেন প্রত্যয়দৃপ্ত ব্যক্তি। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে দেওয়া নেতৃত্বগুণে মুগ্ধ তখনকার কলকাতার মানুষ আদর করে বলতেন, মুজিব ছিলেন তরুণ বাংলার সুভাষ বোস। বঙ্গবন্ধু শুধু নিজের নন, সমগ্র দেশকে নিয়ে তিনি এগিয়ে যেতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে হলে লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষের কথা বুঝতে হবে। বাংলার ইতিহাস বুঝতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে হলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি নজরুল ইসলাম, আমদের জারি-সারি ও ভাটিয়ালি গান বুঝতে হবে। মৃত্যুকে যারা বুক পেতে নেয়, তারাই বাঁচতে জানে।

 

বঙ্গবন্ধু পুরো জাতিকে সংঘবদ্ধ করেছিলেন

শরীফ নুরুল আম্বিয়া

সভাপতি, বাংলাদেশ জাসদ

বঙ্গবন্ধুর মন এবং মানস নিয়ে গবেষণা করার অনেক কিছু থাকতে পারে। আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধু মহাত্মা গান্ধী এবং নেতাজি সুভাষ বোস, এই দুজনের মন ও মানস নিজের মাঝে লালন করতে পেরেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে দেশের মানুষের ভালোবাসায় একজন শেখ মুজিব থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বঙ্গবন্ধু পুরো জাতিকে সংঘবদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভালোবেসে সুইজারল্যান্ডের মতো একটি দেশ উপহার দিতে চেয়েছিলেন। আর আজকের বাংলাদেশ খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। আমরা রাজনীতি করছি, কিন্তু ভালো একটা নির্বাচনে যেতে পারছি না। আমাদের একটা সুষ্ঠু নির্বাচনে ফিরতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে আস্থা নিয়ে এসেছেন। স্বাধীনতার পর যা অন্য কোনো সরকার পারেনি।

 

বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শনই ছিল বাঙালির মুক্তি, মানুষের মুক্তি

অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক

সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জাতির পিতার স্বপ্নই আমাদের বাংলাদেশ। আইনের শাসন এবং আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরে এলে দেশ এগিয়ে যাবে। এই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা চলছিল। বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শনই ছিল বাঙালির মুক্তি, মানুষের মুক্তি। তিনি যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন ৭ মার্চ ১৯৭১-এ, ওই ভাষণে তিনি শেষে এসে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই বক্তব্যই ছিল আমাদের প্রেরণা। আসলে এটি ভাষণ নয়, এটি ছিল সেদিন মানুষের সঙ্গে কথোপকথন। ১০ লাখ বাঙালির যে জনসমুদ্র সেদিন হয়েছিল, তা বিস্ময়কর। তিনি সেই জনগণের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ভাষণের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। তিনি আরও বলেছিলেন, বাঙালি মুক্তি চায়। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ আমরা মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলে জানতে পারব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন কী ছিল। তাঁর স্বপ্ন পূরণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

 

বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভিশন ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করা

অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ

অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম নেতা

বাঙালি জাতি-রাষ্ট্রের পিতা বঙ্গবন্ধু। তাঁকে অনেকের সঙ্গে তুলনা করার প্রয়োজন নেই। তিনি আপন মহিমায় উজ্জ্বল। প্রতিটি মানুষেরই স্বপ্ন থাকে। বঙ্গবন্ধুরও স্বপ্ন ছিল। তাঁর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলার। সোনার বাংলার রূপটাও দেখিয়েছেন। সোনার বাংলা হবে শোষণমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী উজ্জীবিত একটা দেশ। বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে পরিচিত করার জন্য তিনি সোনার বাংলা নাম দিয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে রাষ্ট্রপত্তন করেছেন। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে আমরা পেয়েছি জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা ও রাষ্ট্রের অবয়ব (৫৪ হাজার বর্গমাইল)। বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভিশন ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করা। জাতির পিতাকে হত্যার পর যে ধূসর, অন্ধকার একটা যুগ ছিল, তাকে অপসারণ করে আসতে আসতে আজকের বাংলাদেশের অবস্থান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। আমাদের সবাইকে মিলে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। বাধা পেরিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এই বাধা অতিক্রম করতে গেলে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য।

 

বঙ্গবন্ধু সবসময় দেশকে নিয়ে ভেবেছেন সাধারণ মানুষের কথা ভেবেছেন

ইমদাদুল হক মিলন

সম্পাদক, কালের কণ্ঠ

আমাদের মহামানব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি শুরুতেই। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় অনুযায়ী আগে দেখতে হবে যে জাতির জনকের স্বপ্নটা আসলে কী ছিল? একটি কথা বললেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তিনি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এখানে আপনারা যারা আছেন সবাই বিজ্ঞজন, সবাই জানেন কী করলে একটি দেশ সোনার বাংলা হয়ে ওঠে। জাতির জনক সাধারণ মানুষের কথা ভেবেছেন, মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে চেয়েছেন। এই দেশের চেহারা তিনি বদলে দিতে চেয়েছেন। ১৯৭২ সালে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সেদিন তাঁকে ফুলে ফুলে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠ মানুষকে তিনি বলেছিলেন যে, ‘আমাকে এখন ফুল দিয়ে ঢেকে দেবার দরকার নেই। সবাই জন্মদিন পালন করছে সেটি ঠিক আছে, কিন্তু এখন আমাদের সবাইকে মিলে আমাদের দেশটিকে গড়ে তোলা দরকার।’ এই একটি ঘটনার মধ্য দিয়েই আমরা বুঝতে পারি তিনি সবসময় দেশকে নিয়ে ভেবেছেন।

 

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল শোষণ, বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা

ইকবাল সোবহান চৌধুরী

সম্পাদক, অবজারভার ও চেয়ারম্যান, ডিবিসি

জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তাঁদের জীবদ্দশায় এ ধরনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। পরবর্তীতে যখন তিনি জাতির পিতা হিসেবে দেশে এলেন তখন তাঁর স্বপ্ন ছিল শোষণ, বঞ্চনামুক্ত একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। এ স্বপ্ন যখন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করলেন তখনই তাঁর জীবনের ওপর আঘাত হানা হলো। তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হলো এবং তাঁকে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হলো না। কিন্তু সৌভাগ্যবশত সে স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছেন, দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ যদি তিনি প্রধানমন্ত্রী না থাকতেন, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না থাকত তাহলে দেশ আজ কী হতো? মুজিববর্ষ আজ কোথায় যেত? পঁচাত্তর থেকে ছিয়ানব্বই পর্যন্ত যে বাংলাদেশ ছিল সে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধারা চাননি, শহীদরা চাননি, জাতির জনকও চাননি। সৌভাগ্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের বাংলাদেশ দেখছি আমরা।

 

পঁচাত্তরে নিষ্ঠুর অধ্যায়ের সৃষ্টি না হলে অনেক আগেই সুখী, সমৃদ্ধশালী হতো বাংলাদেশ

 নঈম নিজাম

সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও প্রধান নির্বাহী

নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করেছেন বলেই আজ বাংলাদেশের নতুন যাত্রা, নতুন অবস্থান সৃষ্টি, নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সারা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে নতুনভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হচ্ছি আমরা। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ-তিতিক্ষা, কারাগারে অন্তরীণ থাকা, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা, বেকার হোস্টেল থেকে যাত্রা শুরু করে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি ফেরত আসা হিসাব করলে তিনি শেখ মুজিব; শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির জনক, রাষ্ট্রনায়ক। বঙ্গবন্ধু যদি ধারাবাহিকভাবে দেশ রক্ষা করতে পারতেন, পঁচাত্তরে যদি নিষ্ঠুর অধ্যায় তৈরি না হতো, হয়তো অনেক আগেই দেশকে সুখী, সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে দেখতে পেতাম, যা তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের যাত্রাটুকু তাঁর মেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন জায়গা তৈরি করলেন সারা পৃথিবীর বুকে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের জায়গাটি ধরে রাখতে হলে আইনের শাসন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

বঙ্গবন্ধু সারা বিশ্বের মানুষের কাছে স্বাধীনতার প্রেরণা

 সামিয়া রহমান

সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নন, দেশের নন। তিনি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে স্বাধীনতার প্রেরণা। তাঁর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পেয়েছিল একটি দেশ, পেয়েছিল বিশ্বের বুকে একটি মানচিত্র। কিন্তু হতভাগা, অকৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি আমরা, সেই নেতা জাতির জনককে হত্যা করা হয়েছে। তিনি নেই, কিন্তু আছে তাঁর স্বপ্ন, আছে তাঁর গড়ে দেওয়া বাংলাদেশ।

করোনাভাইরাস দেশে শনাক্ত হওয়ার কারণে তাঁর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন শুধু উৎসবের মধ্য দিয়ে নয়, তিনি আছেন, থাকবেন স্মৃতিতে, শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় বাঙালির অন্তরজুড়ে।

 

সবাইকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করতে হবে

এনামুল হক চৌধুরী

সম্পাদক, ডেইলি সান

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাইবেলের মতো। প্রত্যেকটা লাইন একেকটা কোটেশন। প্রতিটা বাক্য, প্রতিটা শব্দ অসাধারণ। কোনো অসঙ্গতি ছিল না। ক্রনলজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট ছিল পুরো বক্তব্যে।

এটা একটা দর্শন ছিল। আজকে আমি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি আজকে বাংলাদেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা সবাই বিশ্বাস করি তিনি পারবেন। আর যারা বিশ্বাস করেন না তাদের সবটাতেই অবিশ্বাস। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন আর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সি ইজ দ্য ইঞ্জিনিয়ার অব ডেভেলপমেন্ট অ্যাট প্রেজেন্ট। উনি না থাকলে আমরা আজ এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না। আমাদের সবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করতে হবে।

 

 

সর্বশেষ খবর