সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রয়োজন হাসপাতালেরই চিকিৎসা

রাহাত খান, বরিশাল

প্রয়োজন হাসপাতালেরই চিকিৎসা

পাঁচ বছর মেরামতের জন্য রেখে অচল ঘোষণা করা বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমআরআই মেশিন

নানা সমস্যায় জর্জরিত বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম)। প্রয়োজনের এক-চতুর্থাংশ জনবল নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে দক্ষিণের উন্নত চিকিৎসার ভরসাস্থল শেবাচিম হাসপাতাল। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকটের কারণে পুরো হাসপাতাল পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগারে। এখানে সব ধরনের রোগ পরীক্ষার উন্নত মানের যন্ত্রপাতি থাকলেও সেগুলো বিকল করে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর ধরে।

অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের ডাক্তার, টেকনোলজিস্ট এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির একটি অংশ ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়ায় সিন্ডিকেট করে সচল মেশিনগুলো অচল করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্য থাকলেও তাদের জন্য ডাক্তার ভিজিটের সময় বেঁধে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগে শেরেবাংলা মেডিকেলে গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকত ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ পর্যন্ত। করোনার কারণে রোগী কিছুটা কমেছে। শুক্রবার ভর্তি ছিল ১ হাজার ৬৬৮ জন। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হাসপাতালটি ৫০০ শয্যা থেকে হাজার শয্যায় উন্নীতকরণের ঘোষণা দিলেও সে অনুযায়ী জনবল কাঠামো পাস কিংবা নিয়োগ হয়নি এখনো। ৫০০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ী হাসপাতালে ২৩৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৯৮ জন। হাজার শয্যার হাসপাতালে প্রয়োজন ৪৭৬ জন চিকিৎসক। ৫০০ শয্যার হিসাবে সেবিকা কর্মরত আছেন ১ হাজার ২০০ জন। হাজার শয্যায় প্রয়োজন ২ হাজার নার্স। ৫০০ শয্যা হাসপাতালে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির ৩৬৫ পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ২৪০ জন। অথচ প্রয়োজন ৭৩০ জন কর্মচারী। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণির বেশির ভাগ কর্মচারী বয়সের কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম।

এ কারণে হাসপাতালের ২৭টি ওয়ার্ড, বাথরুম-টয়লেট, অপারেশন থিয়েটার, ডাক্তার কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হচ্ছে না ঠিকভাবে। ওয়ার্ডগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরা এবং দুর্গন্ধময়। প্রয়োজনের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ ডাক্তার থাকায় রোগীদের অভাব-অভিযোগ নিত্যদিনের।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নত চিকিৎসাসেবার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত রোগ পরীক্ষার ভারী যন্ত্রপাতিগুলো বিকল রয়েছে বছরের পর বছর ধরে। করোনাকালের শুরু থেকে হাসপাতালে রোগ পরীক্ষার যন্ত্রপাতিগুলো সচল করার জোরালো দাবি উঠলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। ক্যান্সার চিকিৎসার কোবাল্ট ৬০ মেশিন, এমআরআই, দুটি সিটিস্ক্যান মেশিন এবং এনজিওগ্রাম মেশিন দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বিকল। চারটি এক্স-রে মেশিনের দুটি সচল থাকলেও রোগীর চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। একটি মেশিনে প্রতিদিন ১০টি আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা হলেও চাহিদা থাকে ৫০ থেকে ৬০টি। মেশিনের সক্ষমতা কম থাকায় অন্য রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া উপযুক্ত মেশিন না থাকায় প্যাথলজি বিভাগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হয় না মেডিকেলে।

হাসপাতালের একশ্রেণির ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ কারণে তারা সচল মেশিন অচল করে রোগীদের নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্য রয়েছে মেডিকেলে। তবে তাদের জন্য দুপুর ১টার পর ডাক্তার ভিজিটের নির্দেশনা রয়েছে। এর আগে মেডিকেলে প্রবেশ করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে রয়েছে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, সব সংকট এবং সমস্যার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

সর্বশেষ খবর