শিরোনাম
সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

সংকটে ময়মনসিংহের উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

সংকটে ময়মনসিংহের উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা

প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের সেবার বাতিঘর ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অথচ এই সেবাঙ্গনের অস্ত্রোপচার কক্ষ এখন গোডাউন! এখানে সব সুবিধা থাকলে চিকিৎসক সংকটে হয় না অপারেশন। এমনকি  লেবার ওয়ার্ডে প্রসব-পরবর্তী রুমে নেই কোনো বৈদ্যুতিক আলো ও পাখা। সারা হাসপাতাল অপরিষ্কারের কারণে এখানে সেবা নেওয়াই দায়। অকেজো হয়ে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্সটিও। শুধু ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই নয়, জেলার ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নানা সংকটে সেবাদান দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০০৮ সালে প্রসূতি রোগীদের জন্য অস্ত্রোপচার শুরু হয়। কিন্তু মাত্র দুই বছরের মাথায় চিকিৎসক সংকট ও প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে বন্ধ হয়ে যায় অস্ত্রোপচার। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অচল থাকায় এখন বিকল যন্ত্রপাতি। অপরদিকে অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞের অভাবে এক যুগেও চালু হয়নি মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্ত্রোপচার কক্ষ। ভালুকার মতো শিল্পাঞ্চলে ট্রমা সেন্টার ও জরুরি প্রসূতি সেবা বিভাগ নিজেই অসুস্থ। তিনটি বিভাগে প্রয়োজনীয় জনবল নেই। আল্ট্রাসনোগ্রামের মেশিন বিকল। এমনকি সব সুবিধা থাকলেও জনবলের অভাবে প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে অস্ত্রোপচার।

জানা যায়, ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ রয়েছে ১০টি। কিন্তু এই ১০টি পদই শূন্য! এমনকি সদর উপজেলায়ও ওই পদে দুইজন থাকার কথা থাকলেও পূরণ হয়নি পদগুলো। সবমিলিয়ে জেলার ১২ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৮৪ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু রয়েছেন মাত্র ১৮ জন। ৬২টি পদই শূন্য। অপরদিকে মেডিকেল অফিসার পদে ১৮৬টি পদ রয়েছে। এখানেও সংকট ২৬ জন চিকিসৎকের। এমন পরিসংখ্যান জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম।

সূত্র বলছে, মুক্তাগাছায় দুই, ধোবাউড়া ও ফুলবাড়িয়ায় চার, গৌরীপুরে তিন, হালুয়াঘাটে পাঁচ, গফরগাঁও ও ঈশ্বরগঞ্জে আটজন করে, ত্রিশাল, ভালুকা এবং নান্দাইলে নয়জন করে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ ফাঁকা রয়েছে। জনসংখ্যার হিসাবে প্রতি একজন চিকিৎসক ২০০৮ জনের জন্য ১২ উপজেলায় নিয়োজিত আছেন। এদিকে চিকিৎসক সংকট থাকার পাশাপাশি সংকট রয়েছে নার্সেরও। প্রতি উপজেলায় ৩০ জন করে সিনিয়র স্টাফ নার্স, চারজন করে সুপারভাইজার ও আটজন করে মিডওয়াইফারি থাকার কথা। কিন্তু ১২ উপজেলায় এর সংখ্যা মাত্র ৩২০ জন। চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। সিভিল সার্জন অফিসের নার্সিং সুপারভাইজার নজীফা খাতুন বলেন, সাত উপজেলায় পাঁচজন নার্সিং সুপারভাইজার রয়েছেন।  জানা যায়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতেও রয়েছে লোকবল সংকট। তৃতীয় শ্রেণির ১ হাজার ৫৪৫টি পদ থাকলেও শূন্য পদ রয়েছে ১ হাজার ২৭২টি। আর ২৯১টি চতুর্থ শ্রেণির পদের স্থানে ১৮৭টি পদে লোকবল রয়েছে। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবাও ধুঁকে ধুঁকে চলছে। জেলায় ৫৯২টি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকার কথা, সেখানে রয়েছে ৫৩২টি। এর মধ্যে জরাজীর্ণ অবস্থায় কোনোমতে টিকে আছে ১১৪টি। এ ছাড়াও ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যার হলেও ৫০ শয্যা চালু রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। ৩১ শয্যা হাসপাতালের লোকবল সংকট থাকলেও তা নিয়েই কোনোমতে সেবা দিচ্ছে সেসব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো।

সর্বশেষ খবর