বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

এনজিনা নিয়ে দোটানা

এনজিনা নিয়ে দোটানা

বয়স ৪০ পার হয়ে গেছে, আপনি হাই ব্লাডপ্রেসার বা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন, মাঝেমধ্যে বুকের মাঝখানে অথবা বামপাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষ করে জোরে হাঁটতে গেলে বা ভরাপেটে হাঁটতে গেলে অথবা তাড়াহুড়া করে কোনো কাজ করতে গেলে। এমন হলে আপনি কোনো গ্যাসের ওষুধ খান এবং অল্প সময়ের মধ্যে আপনার ব্যথা নিরাময় হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিত যে এটা গ্যাসের ব্যথা তাই সব সময় গ্যাসের ওষুধ সঙ্গে রাখেন বা নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ সেবন করেন। এ অবস্থা হলে আপনি গ্যাসের ওষুধ না খেয়ে একটু চুপ করে বসে পড়ুন বা এক গ্লাস পানি পান করে বিশ্রাম গ্রহণ করুন। যদি এতে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে আপনার বুকের ব্যথা বা উপরি পেটের ব্যথা কমে যায় তবে আপনার এ ব্যথা যে গ্যাসের ব্যথা নয় তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত হলে মানুষ এক ধরনের ব্যথা অনুভব করে যা প্রায় সময়ই তীব্র ধরনের হয়ে থাকে, যাকে চিকিৎসকরা এনজিনা বলে অভিহিত করে থাকেন। সাধারণভাবে এ ব্যথা বুকের মাঝখানে অনুভূত হয়, তবে ব্যক্তিভেদে তা বুকের বামপাশ বা ডানপাশ বা উপরিপেটে অথবা সারা বুকে অনুভূত হয়ে থাকে। ব্যথা তীব্র হলে তা গলা, চোয়াল, হাত, পিঠ, কাঁধ অথবা পেটের উপরের অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় এনজিনার ব্যথা শুধু পরিশ্রমের সময়ই দেখা দেয়। তবে চরম পর্যায়ে বিশ্রামের সময়ও তা অনুভূত হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে একটু বিশ্রাম নিলে খুব তাড়াতাড়ি ব্যথা দূরীভূত হয়ে যায়, তবে চরম পর্যায়ে তা সহজে দূরীভূত হয় না। এনজিনার ব্যথার সঙ্গে বুক ধড়ফড় করা বা শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভূত হয়ে থাকে। কাজের অত্যধিক চাপ, টেনশন, মানসিক অশান্তি, দুঃসংবাদ শোনা বা ভয়ার্ত কোনো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা বা বর্ণনা শোনা, নিকটাত্মীয় কারও মৃত্যুর সংবাদ বা কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া ইত্যাদি কারণে এনজিনার ব্যথার প্রকোপ ও তীব্রতা দুটোই বৃদ্ধি পেতে পারে। সাধারণত মানুষ পেপটিক আলসার ডিজিজকে গ্যাস্ট্রিক বলে আখ্যায়িত করে থাকে যা নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে এন্টাসিডজাতীয় বড়ি, তরল এন্টাসিড, রেনিটিডিন জাতীয় বড়ি বা ওমিপ্রাজলজাতীয় বড়ি বা ক্যাপসুল ইত্যাদি সেবন করে। পাকস্থলিতে উৎপাদিত এসিডের প্রভাবে এ রোগ সৃষ্টি হয় বলে এসিডের উৎপাদন ও প্রতিক্রিয়া রোধের জন্য উপরউল্লেখিত ওষুধগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গ্যাসের ব্যথা সাধারণত মধ্যমমেয়াদি ব্যথা যা নিরাময় হতে এক বা একাধিক ঘণ্টা সময় লাগে এবং এনজিনার ব্যথা স্বল্পমেয়াদি ব্যথা যা আরোগ্য হতে দুই-চার মিনিট বা সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট সময় লাগতে পারে। গ্যাসের ব্যথা ঘণ্টায় সারে আর এনজিনার ব্যথা মিনিটে সারে এবং এনজিনার ব্যথা হৃদরোগের সতর্কবার্তা।

ডা. এম শমশের আলী

সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ঢাকা মেডিকেল

কলেজ ও হাসপাতাল। ফোন: ০১৯৭১৫৬৫৭৬১

 

 

সর্বশেষ খবর