শনিবার, ১০ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা

গর্ভেই বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়

ডা. রেজাউল করিম কাজল

গর্ভেই বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়

আমাদের দেশে থ্যালাসেমিয়া একটি মারাত্দক বংশগত বা জেনেটিক রক্তরোগ। বাবা-মা উভয়েই এ রোগের বাহক হলে তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মাতে পারে। থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহকের সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না বলে তারা বিষয়টি জানতে পারেন না। গত ৮ মে পালিত হলো বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই দিবসটি পালন করা হয়। আমাদের দেশে প্রায় ১০ ভাগ নারী-পুরুষ নিজেদের অজান্তে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। প্রতিদিন গড়ে ২০টি শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মায়। সাধারণত শিশুর বয়স এক বছর পার হলে রোগটি ধরা পড়ে। আর বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়ার পরই বাবা-মা জানতে পারেন, তারা এ রোগের বাহক, তখন নেমে আসে হতাশা। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের অন্যের রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। এভাবে এরা খুব বেশি দিন চলতে পারে না, একদিন বাবা-মায়ের সামনে অনেকেরই জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন থ্যালাসেমিয়া রোগের একমাত্র চিকিৎসা। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ ছাড়া সব সময় সফলও হয় না। যেসব সমাজে আত্দীয়স্বজনের মধ্যে বিয়ে-শাদি বেশি প্রচলিত, সেসব সমাজে থ্যালাসেমিয়ার মতো বংশগত রোগ-বালাই বেশি। পৃথিবীর অনেক দেশ বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী বা সন্তান নেওয়ার আগে স্বামী-স্ত্রী থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক কি না তা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে থ্যালাসেমিয়া রোগকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। অন্যদিকে সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশে দিন দিন এ রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যে সমস্ত বাবা-মায়ের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত সন্তান আছে তারা সাধারণত ভীত হয়ে আর বাচ্চা নিতে চান না। মাতৃজঠরে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় তাদের একমাত্র ভরসা।

কীভাবে করা হয় : গর্ভাবস্থার ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক গর্ভফুল হতে কোষকলা সংগ্রহ (Chorionic Villus Sampling) বা ১৫ সপ্তাহের পরে গর্ভের বাচ্চার চারপাশের পানি সংগ্রহের (Amnioc entesis) মাধ্যমে বাচ্চার ডিএনএ নমুনা পাওয়া যায়। আর এই ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা করে গর্ভের বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া রোগ আছে কিনা তা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়। এ সময় বাচ্চার আকার থাকে দেড় হতে দুই ইঞ্চির মতো। কাজেই সুস্থ বাচ্চা পাওয়া না পাওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বাবা-মা গর্ভাবস্থা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এতদিন এই পরীক্ষার জন্য গর্ভবতী মাকে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক বা নয়াদিলি্ল যেতে হতো আর শুধু সামর্থ্যবান বাবা-মা-ই যেতে পারত। এখনআমাদের দেশেই মায়ের গর্ভে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে। তাই প্রয়োজন শুধু সচেতনতা।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ

বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা। ফোন : ০১৯৭৯-০০০০১১

 

সর্বশেষ খবর