শনিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

ব্রংকাইটিস থেকেও হৃদরোগ

ব্রংকাইটিস থেকেও হৃদরোগ

যারা খুব বেশি ধূমপান করেন বা খুব বেশি ধুলাময় পরিবেশে কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের প্রায়ই কাশিতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। কাশি দীর্ঘমেয়াদি হলে আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, ফলে ধীরে ধীরে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। কাশি যত বেশি সময় বিদ্যমান থাকে ফুসফুসও ততবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এ ধরনের অসুস্থতাকে ব্রংকাইটিস/COPD বলা হয়। সাধারণত মধ্যবয়স থেকে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় এবং প্রতিকার গ্রহণ না করলে খুব দ্রুত ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এক সময় কাশির পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা খুব বেশি হওয়ায় দিন দিন এ রোগে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি আমাদের দেশে সচরাচর পরিলক্ষিত অসুস্থতা। অ্যাজমা এমন এক ধরনের অসুস্থতা যার জন্য কমবেশি সারা জীবন চিকিৎসা গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়। বর্তমান সময় অ্যাজমার চিকিৎসার বেশ অগ্রগতি হয়েছে। ফলে সুচিকিৎসা গ্রহণ করলে রোগী প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। তবে দিন দিন আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসের প্রভূত ক্ষতিসাধিত হতে থাকে, যা এক সময় হৃৎপিণ্ডকে আক্রান্ত করে থাকে।

উলি্লখিত দু'ধরনের শ্বাসকষ্টই সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা এবং উভয় অসুস্থতার ফলে ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি সাধিত হতে থাকে। ফুসফুসের ক্ষতির

মাত্রা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পেঁৗছার ফলশ্রুতিতে রোগীর হার্ট বা হৃৎপিণ্ড অকেজো হতে থাকে। হার্টের ওপর এসব অসুস্থতার প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং রোগী হার্ট ফেইলুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

যেহেতু উভয় ধরনের অসুস্থতা নিরাময়যোগ্য নয়, তাই এ থেকে হার্ট ফেইলুর হওয়ার হার প্রায় শতভাগ, এর মানে এ ধরনের প্রায় সব রোগীই সময়ের আবর্তে হার্ট ফেইলুরে আক্রান্ত হবে এটা অবধারিত। এ সময় রোগীদের শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। রোগীকে প্রায়ই নেবুলাইজেশন নিতে হয় এবং অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে।

লক্ষণসমূহ : রোগী হার্ট ফেইলুরে আক্রান্ত হওয়ার ফলে শ্বাসকষ্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আগের চিকিৎসা (মেডিসিন) শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে ব্যর্থ হয়। কাজকর্ম করার যোগ্যতা কমতে থাকে। পরিশ্রমে সহজে হাঁপিয়ে যান। বুক ধড়ফড় করা, বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধির সময় এবং কায়িক শ্রম সম্পাদনের সময়। বিছানায় শুতে গেলে শ্বাসকষ্ট খুব বেশি প্রকট আকার ধারণ করে এবং তার সঙ্গে কাশির উদ্রেগ হয়। শরীর, হাত, পা ও মুখে পানি জমতে থাকে। পেটে পানি জমা হওয়ার ফলে পেট বড় হয়ে যায়, বদহজম দেখা দেয়, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। কারও কারও লিভার বড় হওয়ার জন্য পেটের উপরের অংশের ডানপাশ ও মাঝখানে চাকা ও ব্যথা অনুভূত হয়। হার্ট ফেইলুর আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে রোগীর শারীরিক যোগ্যতা কমতে থাক। রোগী সাধারণ কাজকর্ম করতে গেলে হাঁপিয়ে উঠেন। পরিশ্রম করতে গেলে শরীরে অত্যধিক ঘেমে যায়। রোগীর অনিদ্রা দেখা দেয়। এ অবস্থা অনেকে বুঝতে না পেরে শুধু শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নিতে থাকে। ফলে রোগী ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ সময় রোগীকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে হার্ট ফেইলুরের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। সঠিক পদ্ধতির চিকিৎসাই রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সক্ষম।

ডা. এম. শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

 

 

সর্বশেষ খবর