শিরোনাম
শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পেসমেকার : হৃৎপিণ্ডের চার্জার

পেসমেকার : হৃৎপিণ্ডের চার্জার

পেসমেকার এক ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র মানব দেহে প্রতিস্থাপন করে হৃৎপিণ্ডের অনিয়ন্ত্রিত গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এতে একটি মিনি কম্পিউটার ও একটি ব্যাটারি এবং হৃৎপিণ্ডে চার্জ সরবরাহের জন্য একটি লম্বা তার থাকে। ব্যাটারি ও কম্পিউটার বুকের ডান অথবা বাম পার্শ্বের উপরিভাগে মাংসের নিচে অপারেশনের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত তার রক্তনালির মধ্যদিয়ে হৃৎপিণ্ডের ভিতরে চার্জ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। হার্টের বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে।  পেসমেকারকে একটি কম্পিউটারের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কারণ কম্পিউটারে যে ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স সার্কিট ব্যবহার করা হয় সে একই ধরনের উপাদান দিয়ে পেসমেকার তৈরি। হার্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনবোধে পেসমেকার তাৎক্ষণিকভাবে বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে হার্টের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ স্বাভাবিক অবস্থায় আসলে পেসমেকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে হার্টকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে সাহায্য করে। পেসমেকার থাকাকালীন অবস্থায়ও হার্ট তার আপন গতিতে চলতে পারে এবং প্রয়োজনবোধে পেসমেকার হার্টকে চালাতে থাকে। অনেক ব্যক্তি পেসমেকারের মাধ্যমে হার্ট পরিচালিত হওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক শারীরিক অনুভূতি অনুভব করে থাকেন। এসব অনুভূতিগুলোকে এক কথায় পেসমেকার সিনড্রম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

পেসমেকার প্রতিস্থাপিত রোগীদের জন্য সতর্কতা :

বুকের যে পার্শ্বে পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে সে পাশের হাত দিয়ে ভারী কাজ করা নিষেধ। মোবাইল ফোন ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। বিমানবন্দর ও অন্যান্য জায়গায় স্কেনিং মেশিন এড়িয়ে চলতে হবে।

পেসমেকার সিনড্রম : বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে হার্টের প্রয়োজন অনুসারে পেসমেকার চালু হয়। এতে পেসমেকারে ব্যাটারি চার্জ দীর্ঘ সময় টিকে থাকে। যেহেতু অপারেশন ছাড়া ব্যাটারি পরিবর্তন সম্ভব নয় তাই ব্যাটারির চার্জ যতটা সম্ভব কম ব্যয় করা বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে আবার পেসমেকার বন্ধ থাকে। পেসমেকার চালু হওয়ার সময় রোগীর বুকে অস্বস্তি ভাব, হাত, পা, মাথায় গরম অনুভূত হওয়া এবং অস্থিরতা দেখা দেয়। রোগীর পেসমেকার চালু অবস্থায় বুকে অস্বস্তি অনুভূত হওয়া, হালকা ব্যথা অনুভূত হওয়া, সব সময় বুকের প্রতি সতর্ক অনুভূতি থাকা এ ধরনের সব সমস্যাকে পেসমেকার সিনড্রম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সময়ের আবর্তে অনেক রোগীদের এ ধরনের অনুভূতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে।  এ ধরনের অনুভূতিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। যদি কখনো বুকে চাপ অনুভূত হয়, গলা ফুলা অথবা গলা ভারী অনুভূত হয়, বুক ধড়ফড় করে, হাঁপিয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ হয়, মাথা হালকা অনুভূত হয়, কখনো কখনো অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, ক্ষেত্রবিশেষে হার্ট ফেইলুরের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, যেমন- শ্বাসকষ্ট হওয়া, হাত-পা-মুখ ফুলে যাওয়া।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা : পেসমেকারের কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য সময়ে সময়ে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। ইসিজি, কালার-ডপলার ইকোকার্ডিওগ্রাম, বুকের এক্স-রে, বিটিসিটি, সিরাম ইলেকট্রোলাইট, পেসমেকার এসেসমেন্ট, ম্যাগনেটিভ ইসিজি, চেস্ট-ফ্লরোস্কোকপি। এসব পরীক্ষা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট,

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং

মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী।

সর্বশেষ খবর