শনিবার, ৪ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ক্ষণিকের ব্যথা এনজিনা

ক্ষণিকের ব্যথা এনজিনা

আপনার বয়স কি ৪০-এর উপরে। কিছুদিন যাবৎ খেয়াল করছেন, কাজকর্ম করতে গেলে আগের চেয়ে বেশি হাঁপিয়ে উঠছেন। যাচাই করার জন্য আগের মতো পরিশ্রম করার চেষ্টা করলে আরও বেশি হাঁপিয়ে যাচ্ছেন এবং শরীর বেশি ঘেমে যাচ্ছে। অত্যধিক গরম অনুভব করতে থাকেন, ফলে অনেক সময়ই গায়ের কাপড় ভিজে যাচ্ছে, মাথা ঘেমে চুল ভিজে চপচপে হয়ে যাচ্ছে, এক সময় আপনি বিশ্রাম নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আগের মতো দ্রুত হাঁটতে পারছেন না। যদি একটু তাড়াহুড়া করে হাঁটতে বা অন্য কোনো কর্ম সম্পাদন করতে যান তাহলে আপনার বুকে চাপ দেওয়ার মতো ব্যথা অনুভব করছেন, কখনো কখনো বুকে চাপ এত বেশি হচ্ছে যে, আপনি তাত্ক্ষণিক কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক সময় পেট থেকে ঢেঁকুর তুলে গ্যাস বের করলে বা পানি পান করলে চাপ কমে গিয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছেন। কারও কারও বুকে চাপ অনুভূত না হয়ে বুকের মাঝখানে বা ডানে-বামে ব্যথা অনুভূত হয়। কখনো কখনো এসব উপসর্গের সঙ্গে মাথাঘোরা বা চোখে অন্ধকার দেখা বা চোখে শর্ষেফুল দেখার মতো অনুভূূতি হতে পারে। তবে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই পানি খেলে, গ্যাসের ওষুধ খেলে বা গ্যাস বের করলে বা শুধু বিশ্রাম নিলেই এ ধরনের অসুবিধাগুলো সম্পূর্ণভাবে উপশম হচ্ছে এবং পরবর্তীতে আবার পরিশ্রম করতে গেলে আগের মতো একই ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। তবে কখনো কখনো একই মাত্রার পরিশ্রম অনায়াসেই করতে পারছেন কোনোরূপ উপসর্গ ছাড়াই, আবার কখনো তা পারছেন না। এসব কিছু বিবেচনা করে অনেকেই এর জন্য পেটের গ্যাসকে দায়ী করে দীর্ঘসময় ধরে গ্যাসের মেডিসিন গ্রহণ করছেন। উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলোকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এনজিনা বলা হয়। যার উদ্ভব এবং নিরাময় খুবই তাত্ক্ষণিক হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি এ নিয়ে অনেক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকেন এবং বিভিন্নজন এর কারণকে  বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করে থাকে। তাত্ক্ষণিক উদ্ভব ও তাত্ক্ষণিক নিরাময় হওয়ার জন্য বেশিরভাগ মানুষই একে গ্যাসের উত্পত্তিকে দায়ী করে থাকেন। অল্প সময়ের মাঝেই আরোগ্য লাভ করার ফলে মানুষের ধারণা আরও পাকাপোক্ত হয় যে, এটা গ্যাসের জন্যই হচ্ছে এবং গ্যাসের ওষুধ নিয়মিত সেবন করতে থাকেন। কিন্তু গ্যাসের ওষুধ সেবন করেও এর

থেকে মুক্তি পান না।  হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ফলে পরিশ্রমকালীন বা তাড়াহুড়া করে স্বাভাবিক কর্ম সম্পাদনের সময়ে হৃৎপিণ্ড প্রয়োজনীয় পরিমাণে রক্ত সরবরাহ না পাওয়ার ফলে এনজিনার অনুভূতির উপলব্ধি হয়ে থাকে এবং কাজ বন্ধ করলে বা বিশ্রাম গ্রহণ করলে হৃৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহের চাহিদা কমে যাওয়ায় এনজিনার ব্যথা দূরীভূত হয়ে যায়। আপনি গ্যাস বের করেন অথবা না করেন, গ্যাসের ওষুধ সেবন করেন বা না করেন, আপনি পানি পান করেন অথবা না করেন তাতে কিছু যায় আসে না, আপনি বিশ্রাম গ্রহণ করলে কাজ বন্ধ করে দিলে অতি দ্রুত এ ব্যথা বা অস্বস্তি দূরীভূত হবে এটাই এনজিনার স্বাভাবিক আচরণ। এই এনজিনা হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ। তাই এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এ ক্ষেত্রে অবহেলা করা ঠিক নয়। অন্যথায় হিতে বিপরীত হওযার আশঙ্কা থাকে। মনে রাখতে হবে এসবক্ষেত্রে প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট,

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর