শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ সেবন ঠিক নয়

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ সেবন ঠিক নয়

যে কোনো মানুষ অসুখ হলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার রোগীর ইতিহাস শুনে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওষুধের প্রেসক্রিপশন দেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার যে ওষুধের নাম লিখে দেন, ওগুলোই সেলসম্যান বা ফার্মাসিস্টের সরবরাহ করা উচিত। ওষুধ বিক্রেতা আর ক্রেতা, দুপক্ষেরই উপলব্ধি করা দরকার যে, ওষুধ কোনো ভোগ্য পণ্য নয়। বরং বলা যায়, ওষুধ এক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে যেমন জীবন বাঁচাতে পারে, তেমনি অপব্যবহারে মারাত্মক বিষে পরিণত হতে পারে, এমনকি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠতে পারে। প্রায় সময়ই দেখা যায়, সাধারণ রোগ এমনকি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিও ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ওষুধ বিক্রেতা বা ফার্মাসিস্টের কাছ থেকেই ওষুধ ক্রয় করেন। তারাও বুঝে না বুঝে বিভিন্ন রকমের ওষুধ বিক্রি করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। রোগ আর ওষুধের সঙ্গে মানুষের বাঁচা-মরার সম্পর্ক। যে কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা জটিলতা থাকতেই পারে, যা কেবল একজন ডাক্তারই বলতে পারবেন। যে ব্যক্তির ওষুধ ও রোগ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক কোনোরকম ধারণাই নেই, তারাই এ ধরনের জীবন-মরণ খেলায় মেতে উঠতে পারে। ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া ওষুধ খেয়ে রোগীদের রোগ ভালো না হয়ে বরং তা আরও জটিল হতে পারে। এমনকি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির ঘটনাও নিত্যনৈমিত্তিক হচ্ছে। এভাবে অবাধে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে ওষুধ বিক্রি অব্যাহত থাকলে দেশের জনস্বাস্থ্য চরম হুমকির মধ্যে পড়বে, এমনকি এক রোগের ওষুধ খেতে গিয়ে অন্য আরেকটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও অস্বাভাবিক নয়। নিয়মমাফিক ওষুধ না খেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। অনেক সময় দেখা যায়, ভুল ওষুধ সেবন করে ভুক্তভোগীর কিডনি, হার্ট, পাকস্থলী, ব্রেন এমনকি অন্য যে কোনো অঙ্গহানির মতো জটিল সমস্যাও হতে পারে। ওষুধ একটি জীবন রক্ষাকারী বস্তু, তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগটাই বেশি জরুরি। প্রেসক্রিপশন ছাড়া যাতে কোনো ওষুধ বিক্রি না করা হয়, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ওষুধ বিক্রি সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আইন লঙ্ঘনকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কোনো চিকিৎসকের ত্রুটির কারণে রোগী মারা গেলে হৈচৈ হয়। কিন্তু দোকানের ওষুধ বিক্রেতার ওষুধ ব্যবহার করে যে কতজন রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে তার কি কোনো হিসাব আছে? ওষুধ বিক্রেতাদেরও মনে রাখতে হবে, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া শুধু ব্যবসার স্বার্থে ওষুধ বিক্রি করা কোনোক্রমেই উচিত নয়, এভাবে প্রেসক্রিপশনবহির্ভূত ওষুধ বিক্রি অবৈধ বা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইনসিদ্ধ নয়। একথা ঠিক যে, কিছু কিছু সাধারণ ওষুধ পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রেসক্রিপশনবহির্ভূতভাবে ক্রয়-বিক্রয় করা যায়, এ জাতীয় ওষুধগুলোকে বলে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি ড্রাগ। শুধু ওই জাতীয় ওষুধগুলোই তারা বিক্রি করতে পারেন। সুস্বাস্থ্যের জন্য মেডিকেল প্রফেশনের বাইরে অন্য কারও পরামর্শ অনুযায়ী নয়, শুধু ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।

লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ

মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর