শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাতজ্বর নিয়ে বিভ্রান্তি

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

বাতজ্বর নিয়ে বিভ্রান্তি

ছোট বাচ্চার কিছুদিন যাবৎ জ্বর। ছোট-বড় গিঁটে গিঁটে ব্যথা। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর দেখা গেল রক্তের এএসও টাইটার স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি এমনকি ৭০০-৮০০। তাতেই মা-বাবা আঁতকে উঠছেন, মনে হয়েছে বাচ্চাটির বাতজ্বর হয়েছে এবং শুধু এএসও টাইটার বেশি হলেই ডাক্তারকে বাতজ্বরের চিকিৎসা দিতে অনুরোধ করেন। শুধু মা-বাবাই নন, কিছু কিছু চিকিৎসকও এএসও টাইটার বেড়ে গেলেই মাসের পর মাস প্রতিমাসে ইনজেকশন দিতে থাকেন। আসলে শুধু রক্তের এএসও টাইটার বেশি হলেই বাতজ্বর হয়েছে বলে মনে করার কারণ নেই। অর্থাৎ অনেকেই এমনকি অনেক চিকিৎসকেরও এ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। আর এভাবেই শুরু হয় অপচিকিৎসা বা অতি চিকিৎসা। হাত-পায়ের যে কোনো ব্যথা হলেই প্রায়ই দেখা যায় এএসও টাইটার নামক পরীক্ষা করা হয় এবং একটু বেশি হলেই পেনিসিলিন দিয়ে বাতজ্বরের চিকিৎসাও চলে। আসলে এটা ঠিক নয়। যে কোনো কারণে জ্বর হলেই গিঁটে ব্যথা হতে পারে, সাধারণ ভাইরাস জ্বরেও। সাধারণত  স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে এএসও টাইটার বৃদ্ধি পায়। শুধু এএসও টাইটার বাড়া মানেই বাতজ্বর, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। রোগীর ইতিহাস, বিভিন্ন উপসর্গ ও অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি এএসও টাইটার বাতজ্বর সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে মাত্র। এটি বাতজ্বর নির্ণয়ের কোনো সুনিশ্চিত পরীক্ষা নয়। বাতজ্বরের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট মুখ্য ও গৌণ লক্ষণ রয়েছে। মুখ্য লক্ষণ বা মেজর ক্রাইটেরিয়া পাঁচটি। যেমন : বড় অস্থিসন্ধির প্রদাহ যা এক সন্ধি হতে অন্যটিতে ছড়িয়ে যায়, হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ যাকে বলে কার্ডাইটিস, ত্বকের নিচে গোটা (সাব-কিউটেনিয়াস নডিউল), ত্বকের অংশবিশেষ লাল লাল (ইরাইথেমা মার্জিনেটাম) এবং স্নায়ুর সমস্যার কারণে মাংসপেশির নিয়ন্ত্রণহীন নড়াচড়া (যাকে বলে কোরিয়া)। গৌণ লক্ষণ বা মাইনর ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে আছে ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসা, অস্থিসন্ধির ব্যথা, ইসিজিতে পরিবর্তন, রক্তের ইএসআর বা সিআরপি বৃদ্ধি ইত্যাদি। বাতজ্বর হিসেবে শনাক্ত করার জন্য দুইটি মেজর অথবা একটি মেজর ও এর সঙ্গে দুইটি মাইনর ক্রাইটেরিয়া এবং স্ট্রেপটোকক্কাল ইনফেকশনের প্রমাণ থাকতে হবে যার জন্য এএসও টাইটার করা হয়। আমাদের প্রত্যেকের জানা উচিত শুধু রক্তের এএসও টাইটার বেশি হলেই বাতজ্বর হয়েছে বলে মনে করার কারণ নাই। যে কোনো সময় টনসিলের প্রদাহ কিংবা গলা ব্যথা বা অন্য প্রকারে স্ট্রেপটোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ইনফেকশন হলেই এএসও টাইটার বাড়তে পারে। অর্থাৎ এএসও টাইটার বৃদ্ধি পেলে শুধু স্ট্রেপটোকক্কাস ইনফেকশন প্রমাণ করে, বাতজ্বর নয়। আর জীবনে কখনো গলায় বা টনসিলে প্রদাহ হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই যে কোনো ব্যক্তির এএসও টাইটার পরীক্ষা করালে তা এমনিতেই একটু বেশি পাওয়া যেতে পারে। আসলে বাতজ্বর বা রিউমেটিক ফিভার ডায়াগনোসিস করার জন্য এএসও টাইটার খুব বেশি জরুরি নয়।

লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ

মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর