রেশমা (ছদ্মনাম) অনেকক্ষণ ধরেই বিছানায় শুয়ে আছে। মা, রাবেয়া খাতুন (ছদ্মনাম) বেশ কিছুক্ষণ ধরেই ডাকছে। সকাল ৮টা, দেয়ালের ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকালো রেশমা। ৯টায় স্কুলের বাস। রেশমা ক্লাস ফাইভে পড়ে, বয়স ১১ বছর। ইদানীং মাঝে মাঝেই দেরিতে বিছানা ছাড়ে। ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই কেমন যেন খারাপ লাগে, লজ্জা লাগে কিন্তু মাকে কিছুই বলতে পারে না। না বলতে পারলে হবে, বিছানা ছাড়ার পরই মা ঠিক-ই বুঝতে পারেন, রেশমা বিছানায় প্রস্রাব করেছে । মা, রাবেয়া খাতুন প্রতিদিন রাতে তাকে প্রস্রাবের তাগিদ দেয়। কিন্তু রেশমা কিছুতেই বিছানায় প্রস াব করা বন্ধ করতে পারে না। সকালে রীতিমতো মার বকাবকি খায় এবং ওর বড় ভাই লজ্জা দেয়। ঘটনাটি আমাদের গ্রামেগঞ্জের ও শহরের একটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। এটা একটি রোগ, একে এনুরেসিস্ (Enuresis) বলে। ১.১ ফটোচিত্র : এনুরেসিস্ (Enuresis) শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াই পাঁচ বছরের উপরের শিশুদের অনিচ্ছাকৃত কাপড়ে প্রস্রাব করাকে এনুরেসিস্ (Enuresis) বলে। এটা দিনে বা রাতে হতে পারে। রাতে বিছানায় প্রস্রাব হওয়াকে Nocturnal enuresis বলে। এনুরেসিস্ (Enuresis) দুই প্রকার। যেমন : ১) প্রাইমারি ও ২) সেকেন্ডারি। যে ক্ষেত্রে জন্মের পর কখনই প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ আসেনি তাকে প্রাইমারি এনুরেসিস্ (Primary Enuresis) বলে। যে ক্ষেত্রে জন্মের পর প্রস াবের নিয়ন্ত্রণ ছিল কিন্তু বর্তমানে নাই তাকে সেকেন্ডারি এনুরেসিস্ বলে।
কারণ : (Etiology) ১) শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতা, যেমন : প্রস্রাবের নালিতে ইনফেকশন, ডাইবেটিস, স্নায়ুজনিত রোগ (যেমন-খিঁচুনি, স্পাইনা বিফিডা অকালটা) ইত্যাদি।
১.২ প্রস্রাবের থলি ও নালীর ডায়গ্রাম ।২) যাদের পরিবারে বিশেষ করে বাবার এ রোগ থাকে, সে সব ক্ষেত্রে সন্তানের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ৩) শিশুর বিকাশ ধীরগতিতে হলে (Delayed mile stone of development) এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ৪) যে সব শিশু দেরিতে অথবা বিশৃঙ্খলাপূর্ণ (Toilet training) হয় তাদের দেরীতে প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা আসে।
৫) এসব শিশুর বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ ও আবেগের সমস্যা থাকতে পারে।
ডা . মো. রশিদুল হক, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ
রেজিস্ট্রার, মানসিক রোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।