শিরোনাম
বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

এনাল ফিসার কি এবং কেন হয়?

অধ্যাপক ডা. এসএমএ এরফান

এনাল ফিসার কি এবং কেন হয়?

জামান সাহেব (ছদ্ম নাম) অফিসে এসেই খুব সমস্যায় পড়েছেন। এ সমস্যার কথা তিনি না কাউকে বলতে পারছেন, না সহ্য করতে পারছেন। সেটি হচ্ছে তার পায়ুপথের ব্যথা। বেশ কিছুদিন ধরে তার কোষ্ঠকাঠিন্য হলেই মলত্যাগের পর তার পায়ুপথে তীব্র ব্যথা শুরু হয়, আর এ ব্যথা থাকে সারাদিন। এর সঙ্গে যায় মলে রক্ত, এতে তিনি না কাজে মন দিতে পারেন, না পারেন ঠিকমতো বসতে। অথচ বিষয়টি এমন যে কারও সঙ্গে আলোচনাও করা যায় না। আর এভাবে ঐশীর রোগ আরও বাড়তে থাকে। জামান সাহেবের পায়ুপথের যে সমস্যা হয়েছে এর নাম হচ্ছে এনাল ফিসার, সহজ বাংলায় গেজ। এ এনাল ফিসার কী? খুব সহজ ভাষায় এনাল ফিসার হচ্ছে পায়ুপথ ছিঁড়ে যাওয়া, কোষ্ঠ অস্বাভাবিক কঠিন হলে, তাড়াহুড়া করে টয়লেট করতে গেলে কিংবা টয়লেটের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে পায়ুপথ ছিঁড়ে যেতে পারে। পায়ুপথের মিউকোসা বা আবরণী অতি সংবেদনশীল হওয়ায় পায়ুপথ ছিঁড়ে যাওয়ার পর ব্যথা হয়। এ ব্যাথা কারও তীব্র কারও হালকা হয়। এ ব্যথা পিনের খোঁচার মতো, ব্লেড দিয়ে কাটার মতো হয়। মলের সঙ্গে রক্ত যায়। আবার কারও পায়ুপথে জ্বালা করতে থাকে। কখনো কখনো চুলকানি হয়, মনে হয় কৃমি হয়েছে। এ ব্যথার জন্য রোগী টয়লেট করতে ভয় পান। ফলে কোষ্ঠ আরও বেড়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে টয়লেট করতে গেলে আবার তীব্র ব্যথা ও রক্তপাত হয়। চক্রাকারে এ সমস্যা চলতে থাকে। ক্রমান্বয়ে পায়ুপথ বেশ সংকুচিত হয়ে যায়, তখন মলত্যাগের সময় তেমন আর ব্যথা করে না, কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক বেড়ে যায়, অনেকক্ষণ টয়লেটে বসে থাকতে হয় আর কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় না। এ ‘টয়লেট বিড়ম্বনার’ কারণে অনেকের চাকরিতে পর্যন্ত সমস্যার তৈরি হয়। বিয়েবাড়িতে দাওয়াত ইত্যাদি এড়ানোর চেষ্টা করেন। আসলে এ রোগ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি শরীরের অন্য একটি সাধারণ রোগের মতোই একটি রোগ। আমাদের যেমন জ্বর সর্দি হতে পারে তেমনি পায়ুপথের রোগও হতে পারে। এনাল ফিসার রোগের চমৎকার চিকিৎসা আছে এবং সেই চিকিৎসা নিয়ে সারাজীবন সুস্থ থাকা যায়। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু স্থানিক ওষুধ বা মলম জাতীয় ওষুধ দিয়ে এ রোগ ভালো করা যায়। আর রোগ যদি অগ্রসর হয়ে যায় বা পুরনো হয়ে যায় তাহলে একটি অপারেশন করতে হয়। এখানে অপারেশন শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বর্তমানে এ অপারেশন এত সহজ হয়ে গেছে যে রোগী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাসায় ফিরে যান, স্বাভাবিক কাজকর্ম করেন এবং একদম স্বাভাবিক ভালো টয়লেট করেন। তাই যথাসময়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ থাকা সব রোগীর জন্য জরুরি। কারণ  ‘সময়ের এক ফোঁড় আর অসময়ের দশ ফোঁড়’?

লেখক : কোলোরেক্টাল সার্জন, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল। ফোন: ০১৮৬৫৫৫৫৫১১।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর