শনিবার, ২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোষ্ঠকাঠিন্য ও এনাল ফিসারের সম্পর্ক

অধ্যাপক ডা. এস এম এ এরফান

কোষ্ঠকাঠিন্য ও এনাল ফিসারের সম্পর্ক

রমজান মাসে রোগবালাই সম্পর্কে সচেতন থাকা একান্ত আবশ্যক। কারণ শরীর যেন এবাদত বন্দেগিতে কোনোরকম বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে। এ ছাড়া খাওয়া দাওয়া ও জীবন যাপনে কিছুটা পরিবর্তন আসায় সতর্ক থাকতে হয় কিছু রোগ বালাই নিয়ে। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে পায়ুপথের রোগ এনাল ফিসার। এনাল ফিসারকে সংক্ষেপে বলা যেতে পারে, পায়ুপথ ছিঁড়ে যাওয়া। মল কোষ্ঠ হলে বা অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মলত্যাগ করতে হলে এমন কি অনেক সময় ডায়রিয়া হলেও এনাল ফিসার হতে পারে। এনাল ফিসার হলে মলত্যাগের সময় মলদ্বারে তীব্র ব্যথা হয়। এই ব্যথা কয়েক ঘণ্টা এমন কি সারা দিন থাকতে পারে। রোগী মলত্যাগ করতে ভয় পায়, ফলে মল আরও কষা হয়, এবং চক্রাকারে এই প্রক্রিয়া চলতে পারে। মলের সঙ্গে রক্ত যায়, তবে অল্প। ক্রমান্বয়ে মলদ্বার সংকুচিত হয়ে মলত্যাগ সবসময়ের জন্য কঠিন হতে পারে।

এনাল ফিসারের সঙ্গে রমজানের সম্পর্ক কি? রমজানে আমরা সারা দিন সিয়াম সাধনার পর ইফতারের সময় খাই ভাজাভুজি ও মাছ মাংস সংবলিত উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার। যেহেতু সারা দিন পানাহার বন্ধ থাকে সেহেতু ইফতারের সময় উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারই কাম্য, সাহরির সময়ও একই ধরনের খাবারই আমাদের খেতে হয়। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি জোগান দেয় সত্য, কিন্তু অবধারিতভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। যখন এই শক্ত কোষ্ঠ পরিষ্কার করতে হয় তখন প্রায় দেখা দেয় বিপত্তি। যাদের আগে থেকে মলদ্বারে এনাল ফিসার আছে বা মলদ্বার বংশগতভাবে একটু সরু, তাদের এই সময়ে এনাল ফিসারের প্রকোপ নতুন করে দেখা দেয়, সরু হয় ব্যথা আর মাঝে মাঝে রক্ত যাওয়া। প্রচণ্ড ব্যথার কারণে রোগী রোজা রাখতে পারেন না। এনাল ফিসারের কারণে রমজানের নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যাদের এনাল ফিসার বা এ জাতীয় পায়ুপথের সমস্যা আছে তাদের রমজানের আগেই এর চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া একান্ত আবশ্যক। আর যাদের নেই কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যের ভাব আছে, তারা রমজানের সময় একটু শাক ও ফলমূল খেলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। আর যাদের তাতেও কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় না, তারা ইসবগুলের ভুসি বা মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। আর যাদের তাতেও হয় না, তারা কোলোরেক্টাল সার্জনের শরণাপন্ন হয়ে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিতে পারেন। 

লেখক : কোলোরেক্টাল সার্জন, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর