বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাইলস অপারেশনের সাতকাহন

পাইলস অপারেশনের সাতকাহন

কোনো কোনো রোগী বলেন পাইলস অপারেশন করলে ভালো হয় না, আরও খারাপ হয়, কেউ কেউ বলেন পাইলসের অপারেশন একবার করলে বার বার করতে হয়। কেউ বলেন পাইলস অপারেশন করলে পায়ুপথ নষ্ট হয়ে যায়, পায়খানা করা যায় না, আবার এমন রোগী বলেছেন পাইলস অপারেশন করলে ক্যান্সার হয়ে যায়, তার পরিচিত এক রোগীর হয়েছে।

— এসব বক্তব্য সত্য আবার প্রকৃতপক্ষে রোগীদের বক্তব্য আংশিক সত্য। আংশিক সত্য এ কারণে যে, কোনো কোনো পাইলস রোগী (বা পায়ুপথের অন্য রোগ) কখনো কখনো অপচিকিৎসার শিকার হন। সাদেক সাহেব (ছদ্মনাম) এর ‘পাইলস’ হয়েছিল। বয়স ৮০ বছর হয়ে যাওয়ায় তার আরও নানা রোগ ছিল। ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিসের কারণে কিডনি রোগ ও ব্লাড প্রেসার। এসব রোগীকে আমরা বলি হাই রিস্ক গ্রুপ। দীর্ঘদিন নানাভাবে তিনি চেষ্টা করলেন অপারেশন না করানোর জন্য। এটা খান, ওটা খান ইত্যাদি। কিন্তু শেষ বয়সে এসে আর তিনি পারছিলেন না। বারবার শরীর রক্তশূন্য হয়ে যাচ্ছিল রক্ত যাওয়ার জন্য। মলত্যাগের সমস্যার জন্য খাওয়া-দাওয়াও করতে পারছিলেন না। সে এক ভয়াবহ অবস্থা। মনে হচ্ছে এত রিস্ক এতে?

এদের চিকিৎসা কে করবে? আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে ভালো একজন কোলোরেকটাল সার্জনকে দেখানো হলো। তিনি দেখে বললেন, বয়স এবং বিভিন্ন রোগের কারণে তার  অপারেশন করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু রোগী তো এ রক্তপাত নিয়ে বাঁচতে পারেন না। কিডনি রোগের কারণে তাকে রক্ত দেওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। অগ্যতা তারা অত্যন্ত হতোদ্যম হয়ে দেশে ফিরে এলেন। সাদেক সাহেব দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে লাগলেন। অবশেষে দেশের চিকিৎসকের স্মরণাপণ্য হলেন। চিকিৎসক দেখলেন, তিনি রক্তশূন্য, আর পায়ুপথের অবস্থা হচ্ছে পাইলস বা Hemorrhoids চতুর্থ  স্টেজের সঙ্গে Anal Stenosis অর্থাৎ পায়ুপথ অত্যন্ত সরু। ফলে  টয়লেটে গেলে তার মল বের হয় না। মল বের করার জন্য চাপ দিলেই রক্ত যায়। অনেকক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সম্পৃক্ত কাগজপত্র দেখার পর চিকিৎসক বললেন অপারেশন করলে তিনি ভালো হয়ে যাবেন। তবে জানতে হবে যে তিনি High Risk Patient অর্থাৎ উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগী, সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে এবং অপারেশনের সব প্রস্তুতি নিতে হবে সেভাবে। তার অপারেশনে কোলোরেক্টাল সার্জনকে সাহায্য করলেন এনেস্তিটিস্ট, কার্ডিওলজি এবং সার্জারির বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ একটি দল। এসব রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশনের চেয়েও অপারেশন পরবর্তী সময়ই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে ওই সময়টা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চলতে হয় চিকিৎসক-নার্সদের। রোগী বা তার আত্মীয়স্বজন মনে করেন রোগী তো ভালো হয়ে গেছেন কিন্তু বাস্তবে তা নয়। কিন্তু তখনই যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যাই হোক, অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে অপারেশন পরবর্তী সময়ও কেটে যায়। আমাদের দেশের অনেক চিকিৎসকেরই এ অভিজ্ঞতা আছে। তারা সফলভাবে অপারেশন করছেন। মূলত এ ধরনের  High Risk Patient কে সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা করতে হবে। বিশেষ করে অপারেশন পরবর্তী আরও সচেতন থাকতে হবে। আসলে এসব ক্ষেত্রে অসংখ্যরকম জটিলতা যেমন পায়ুপথ সরু হয়ে যাওয়া, পায়ুপথে মল ধরে রাখতে না পারা, তাদের মাধ্যমে বার বার অপারেশন করা ইত্যাদি খুব কমন। বর্তমানে লংগো মেশিনের সাহায্যে যে অপারেশন করা হয় তাতে রোগী অতি দ্রুত প্রায় ব্যথাহীনভাবে সুস্থ হয়ে উঠছেন। পায়ুপথ স্থানটি অতি স্পর্শকাতর হওয়ায় যথাযথ অপারেশন না করলে বিভিন্ন সমস্যা হতেই পারে। সবচেয়ে বড় কথা এসব রোগের ক্ষেত্রে সচেতনতা খুব জরুরি। এছাড়া মনে রাখতে হবে, প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম। আসলে প্রাথমিক অবস্থায় এসব রোগের চিকিৎসা নিলে আরোগ্য সহজ হয়। অন্যথায় জটিলতা বাড়তে পারে।

অধ্যাপক ডা. এসএমএ এরফান, কোলোরেক্টাল সার্জন, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল,  ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর