বুধবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সর্বনাশা কিডনি রোগ

ডা. সহেলী আহমেদ সুইটি

সর্বনাশা কিডনি রোগ

নুষের জীবনে অনেক সময় অনেক অনাঙ্কিত ঘটনা ঘটে যা কারও জানা থাকে না, অর্থাৎ সে প্রস্তুত থাকে না। তবুও জীবন বিচিত্র, আর তাইতো কখনো কারও জীবন কোনো কিছুর জন্য থেমে থাকে না আপন গতিতে চলে, চলতে হয়। ঠিক তেমনি অনাকাক্সিক্ষত কিছু সেভাবে জীবনের স্বাভাবিক গতি স্তিমিত করে। কিডনি রোগের মতো সর্বনাশা ঘাতক রোগ যখন কারও জীবনে হঠাৎ করে আসে তখন সে নিরুপায় হয়ে যায়। দু'ধরনের কিডনি বিকল হয়। ধীরগতিতে কিডনি বিকল ও আকস্মিক কিডনি বিকল। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ডায়াবেটিসই ধীরগতিতে কিডনি বিকলের প্রথম ও প্রধান কারণ হলেও আমাদের দেশে কিডনির ইনফেকশন অর্থাৎ Glomerulonephritis ধীরগতিতে কিডনি বিকলের প্রথম ও প্রধান কারণ। তবে ডায়াবেটিস ধীরগতিতে কিডনি বিকলের আমাদের দেশে দ্বিতীয়তম কারণ হলেও যেভাবে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, অতিদ্রুত এটিও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো ধীরগতিতে কিডনি বিকলের প্রথম ও প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তৃতীয় প্রধান কারণ হচ্ছে উচ্চরক্তচাপ। এ ছাড়া কিডনির পাথর বা অন্যান্য কারণে যেমন পুরুষদের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হওয়া কিংবা ক্যান্সার। মহিলাদের জরায়ু বা ব্লাডার ক্যান্সারসহ যে কোনো Obstruction এর জন্য Obstructive Uropathy অথবা দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ খেলে ধীরগতিতে কিডনি বিকল হতে পারে। এ ছাড়া জন্মগত কিছু কারণ যেমন ADPhD (Adult Polycystic kidney Disease) সহ নানা ধরনের কারণেই ধীরগতিতে কিডনি বিকল হতে পারে। ধীরগতিতে কিডনি বিকল প্রতিরোধের উপায় : ১. ধীরগতিতে কিডনি বিকল (CKD) প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অবশ্যই ব্লাড সুগার দেখে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ২. সাধারণত বয়স, হৃদরোগসহ অন্যান্য ঘাতক যা কিডনি রোগকে বাড়িয়ে দেয় এ রকম কিছু কারণসহ, ডায়াবেটিস এবং ডায়াবেটিস নেই এমন রোগীদের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যাদের ২৪ ঘণ্টায় প্রস্রাবে ৩০ মিলিগ্রামের কম এলবুমিন নির্গত হয় তাদের উচ্চরক্তচাপ ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে ব্লাডপ্রেসারে 140 mm Hg Systolic এবং ৯০ এর নিচে Diastolic Blood Pressure রাখতে হবে। ২. যে সব রোগীর দৈনিক ৩০ মিলিগ্রামের বেশি এলবুমিন প্রস্রাবের সঙ্গে যায় একইভাবে ডায়াবেটিক অথবা ননডায়াবেটিক রোগীদের ব্লাড প্রেসার ১৩০ mm Hg ৮০ এর নিচে ১৩০ mm Hg ৮০ এবং ৮০ অথবা ৯০-এর নিচে Diastolic Blood pressure  নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ৩. কিডনির ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই সবাই নিউ মোকক্কাল এবং হেপাটাইটিস-বি (vaccination) দিতে হবে। ৪. দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ অর্থাৎ Pain killer  খেলেও ধীরগতিতে কিডনি বিকল হতে পারে তাই অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। ৫. যাদের পরিবারের বাবা-মা, ভাই বোনের কিডনি রোগ আছে তাদের অবশ্যই কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে কিডনি পরীক্ষা করতে হবে। ৬. Obstruction যেমন কিডনির পাথরসহ পুরুষদের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হলে বা মহিলাদের জরায়ুর ক্যান্সারসহ যে কোনো Obstruction এর প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিতে হবে। মনে রাখবেন কিডনি রোগ সর্বনাশা-জীবননাশা। প্রতিরোধই তার বাঁচার আশা। তই অবহেলা না করে এসব বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, কিডনি বিভাগ,

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর