সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্নদের অধিকার

সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্নদের অধিকার

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আগামীকাল। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর সারাবিশ্বে এই দিবসটি অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিবসটি সার্বজনীন। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নয় বরং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত দিন। স্বভাবতই এর গুরুত্ব এবং গ্রহণযোগ্যতা সব দেশ, সব মানুষের কাছে।  প্রতি ৫৯ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (এ এস ডি) এ ভুগছে। ছেলেদের মধ্যে এর হার মেয়েদের চেয়ে কমপক্ষে চারগুণ বেশি। অটিজম সাধারণত শিশুর এক বছরের মধ্যেই নির্ণয় করা যায় এবং সচেতন হলে দুই বছরের মধ্যে তা নির্ণয় করা সম্ভব। সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সমাজ এবং শ্রেণিতে অটিজম দেখা যায়। অটিজম নির্ণয়, ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ, চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো অটিজম শিশুটিকে মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনা, মূল স্রোতধারার জন্য তৈরি করা। আর অটিজম সচেতনতার উদ্দেশ্য হলো- (ক) অটিজম শিশুটির জীবনের সকল পর্যায়ে তার সমস্যাসমূ হ চিহ্নিত করে সমাধান প্রদান ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে উন্নীত করা। (খ) অটিজম শিশু এবং তার অভিভাবক, পরিবার পরিজনকে সমর্থন ও সহয়তা প্রদান। (গ) অটিজমকে বুঝা, জানা এবং তাদেরকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করা।(ঘ) অটিজম সংক্রান্ত গবেষণা জোরদার করা এবং কি করে তাদের জীবনকে সহজ, সুন্দর  করা যায় তার চেষ্টা করা। এবারের অটিজম সচেতনতা দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার, অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্নদের অধিকার” (Assistive Technology, Active Participation)। আসলে উন্নত, উন্নয়নশীল সব মানুষের কাছেই প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, প্রযুক্তি মানুষের জীবনমানকে উন্নত করার পাশাপাশি সঠিক প্রযুক্তি শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণকে সহজতর করছে, কর্মক্ষেত্র এবং কর্মপরিধিকে বিস্তৃত করছে। অটিজম শিশুদের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই এই শিশুদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার অটিজমসম্পন্ন মানুষের সামাজিক অবস্থান, মৌলিক অধিকার এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবেই বিবেচনা করা যেতে পারে। সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার অটিজম শিশুদের সবার সঙ্গে সমান অংশগ্রহণের বাধাকে দূর করতে পারে বা সহজ করতে পারে। সহায়ক প্রযুক্তি হিসেবে ইন্টারনেট, অনলাইন যোগাযোগ, কম্পিউটারের সহায়তায় প্রশিক্ষণ, ভিডিও মডেলিং, ভিডিওর মাধ্যমে নির্দেশনা, কণ্ঠ/ ধ্বনির প্রয়োগ/ শিক্ষা, কম্পিউটার ট্রেনিং, কম্পিউটার খেলাধুলা ইত্যাদি হতে পারে। এসকল প্রযুক্তি ব্যবহারে অটিজম শিশুদের- অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, সামাজিক এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, দৈনন্দিন জীবনযাপন এবং অভিযোজন বা খাপ খাওয়ানো বৃদ্ধি পাবে, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাবে। একটা ছোট উদাহরণ দিই। একজন অটিজম শিশু টয়লেট ব্যবহার করতে চায় না, বারবার উপদেশ/নির্দেশ দিলেও সে তা করে না। অভিভাবক, পিতা-মাতা বিরক্ত হয়ে প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিচ্ছে, কিন্তু একটা অ্যাপস “See me go Potty” তাকে সুন্দর পটি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়ে দিতে পারে। এভাবে প্রযুক্তি ব্যবহারে শুশ্রুষাকারীর পরিশ্রম ও সময় কমে যাবে, শিশুর আগ্রহ বেড়ে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে শিশুরা নতুন কিছু দেখতে আগ্রহী, তারা মডেলিং পছন্দ করে, খেলার মাধ্যমে শিখে নিতে পারে সহজেই। এভাবেই সহায়ক প্রযুক্তি অটিজম শিশুদের সাহায্য করতে পারে। সুতরাং সহায়ক প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে। প্রশিক্ষণের জন্য দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরী করতে হবে, পাশাপাশি সহায়ক প্রযুক্তির সহজ প্রাপ্যতা, সহজ লভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তাই আমাদের সবাইকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আজিজুল ইসলাম,

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ, ঢাকা, উপদেষ্টা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সি এম এইচ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর