শনিবার, ৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে

কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে

ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বা কফমিশ্রিত রক্ত, শুধুু রক্ত, পরিমাণ কম বা বেশি যা থাক না কেন তাকে মেডিকেলের ভাষায় হেমোপটাইসিস বলে। কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে তার সঠিক ইতিহাস জানা এবং কারণ বের করা প্রয়োজন।  কাশির সঙ্গে রক্ত দেখা দিলে কখনো কখনো ফুসফুসের জটিল রোগ সন্দেহ করা হয়। যেমন : ফুসফুসে ক্যান্সার। দ্রুত রোগ নির্ণয় করে সঠিক মাত্রায় ওষুধ সেবন করে বেশির ভাগ রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল/ভালো করা সম্ভব। যেমন যক্ষ্মা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ছয় মাসের ওষুধ খেলে যক্ষ্মা ভালো হয়। যেসব কারণে কাশির সঙ্গে রক্ত যায়- ব্রঙ্কাইটিস (শ্বাসনালির প্রদাহ), ফুসফুসে ক্যান্সার যক্ষ্মা, ব্রংকিয়েক্টেসিস (স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্বাসনালি), ফুসফুসে ফোঁড়াহার্টের বাল্বের সমস্যা যেমন- মাইট্রাল স্টেনোসিস, হার্ট ফেইলার। এছাড়া অন্যান্য কারণ যেমন : বুকের আঘাতজনিত কারণে বিভিন্ন ধরনের ভাসকুলাইটিস যেমন পালমোনারি ধমনী-শিরা প্রদাহজনিত জটিলতা বিভিন্ন ধরনের রক্তের রোগ যেমন- ব্লাড ক্যান্সার। ওষুধজনিত কারণে ওয়ারফেরিন, ব্যথানাশক ওষুধ ইত্যাদি।

কিছু বিরল কারণে যেমন মহিলাদের প্রতিমাসে ঋতু স্রাবের সময় কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে ক্যাটামেনিয়াল হেমোপটাইসিস। প্রথমে কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া সন্দেহ করলেও অনেক সময় কাশির সঙ্গে কিংবা নাকের ক্ষতজনিত কারণে রক্ত যেতে পারে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীর ইতিহাস জানা প্রয়োজন।

উৎস : কোন জায়গা থেকে  রক্ত বের হচ্ছে তার ইতিহাস থেকে রোগ নির্ণয় করা যায়। যেমন নাক দিয়ে রক্ত আসা, গলা ফ্যাসফ্যাসে হয়ে যাওয়া, মুখে ঘা থাকলে শ্বাসনালির উপরিভাগ ইনফেকশন সন্দেহ করা হয়। কালচে লাল রং, নোনতা লাগা, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, আগে জন্ডিস থাকলে বমির সঙ্গে রক্ত এসেছে বলে ধারণা করা হয়। যার উৎস খাদ্যনালি বা লিভারজনিত জটিলতার কারণে। তাই এন্ডোসকপি জাতীয় পরীক্ষা প্রয়োজন। কাশির সঙ্গে রক্তের রং দিয়ে বিভিন্ন অসুখ আলাদা করা যায়। যেমন- ফেনাযুক্ত কাশি, পরিষ্কার লাল রং শ্বাসনালিজনিত বা লিভারজনিত কারণে। কাশির সঙ্গে রক্তের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করেও রোগ আলাদা করা যায়। যেমন- বেশি পরিমাণে রক্ত গেলে ফুসফুসে ক্যান্সার, যক্ষ্মা, ফুসফুসে ফোঁড়া, স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্বাসনালি। কাশির সঙ্গে অল্প পরিমাণ রক্ত গেলে ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, হৃদরোগের জটিলতা সন্দেহ করা হয়। হঠাৎ করে কারও কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া শুরু হলে হৃদরোগজনিত জটিলতার কারণে হতে পারে। ক্রমাগত কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, মাঝে মাঝে রক্ত যাওয়া ফুসফুসে ক্যান্সার সন্দেহ করা হয়। তাই প্রাথমিক অবস্থা থেকেই এসব রোগের চিকিৎসা নিতে হবে। এছাড়া এসব ক্ষেত্রে কখনো অবহেলা করা ঠিক নয়। কোনো রকম উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশ পেলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। একটা কথা মনে রাখতে হবে, কথায় আছে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম। প্রাথমিক অবস্থা থেকে চিকিৎসা নিলে রোগের ক্ষেত্রে জটিলতা অনেকাংশে কমে আসে।

অধ্যাপক ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ

মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর