সোমবার, ৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

গরমেও বাড়তে পারে শ্বাসকষ্ট

গরমেও বাড়তে পারে শ্বাসকষ্ট

এখন বৈশাখ মাস, রোদের তীব্রতা অনেক বেশি। আবহাওয়া প্রচন্ড গরম। এই গরমে হৃদরোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। এই সময়ে হৃদরোগীদের বুকের ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে, অত্যধিক ঘামের ফলে পানিশূন্যতা দেখা দিয়ে রক্তচাপ অত্যধিক কমে যেতে পারে। যেহেতু হৃদরোগীদের নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা প্রয়োজন, তাই এই সময়ে হাঁটতে যাওয়ার আগে ১-২ গ্লাস পানি পান করে নিতে হবে। খুব ভোরে অথবা সন্ধ্যার পর কিংবা রাতে যখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকে সে সময় হাঁটতে যাওয়া উচিত। অত্যধিক রোদে অথবা গরমে বাইরে হাঁটতে না যাওয়াই শ্রেয়। যদি হৃদরোগীরা এই গরমে অত্যধিক ঘেমে যান এবং ঘামের জন্য প্রচন্ড তৃষ্ণার্ত হয়ে যান সেক্ষেত্রে শুধু পানি পান না করে পরিমিত মাত্রায় অর্থাৎ ১-২ গ্লাস খাওয়ার স্যালাইন খেয়ে নেবেন। যারা এ সময়ে বাইরে কাজে বের হন তারা পানিশূন্যতা রোধে প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, ফলের রস, রসালো ফলমূল, যেমন : শসা-খিরা, তরমুজ-নাশপাতি, জামরুল এবং লেবুর শরবত, বেলের শরবত এ ধরনের খাদ্যবস্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করবেন। যে সব হৃদরোগীকে কাজের প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় তারা মাঝে মাঝে রক্তচাপ নির্ণয় করে উচ্চরক্তচাপের জন্য ব্যবহৃত মেডিসিন সমন্বয় করে নিবেন। সাধারণত এই গরমকালে রক্তচাপ কমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তাই প্রয়োজন মাফিক রক্তচাপের ওষুধের মাত্রা কমাতে হবে। যে সব হৃদরোগী Lasix, Fusid, Frusin, Urinide এই ধরনের ওষুধ গ্রহণ করছেন তারা অত্যধিক ঘর্মাক্ত পরিবেশে কাজ করলে এ ধরনের ওষুধের মাত্রা অর্ধেক করে গ্রহণ করবেন। তবে কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে কোনো ওষুধ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা যাবে না। গরমকালে অনেক হৃদরোগী ঘন ঘন বুকের ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারেন এবং বুকের ব্যথা প্রশমনের জন্য বারবার নাইট্রেট স্প্রে ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে শরীরে পানিশূন্যতা থাকলে নাইট্রেট স্প্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এ অবস্থায় প্রথমে পানিশূন্যতা রোধে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ করে নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই দাঁড়ানো অবস্থায় নাইট্রেট স্প্রে ব্যবহার করা যাবে না এতে হিতেবিপরীত হতে পারে। রোগী মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে। যে সব হৃদরোগী ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তারা মাঝে মাঝে অবশ্যই রক্তের সুগার পরীক্ষা করে নিবেন, কারণ এই গরমে রক্তের সুগার খুব বেশি ওঠানামা করে, ইনসুলিন এবং অন্যান্য ডায়াবেটিসের ওষুধের মাত্রা রক্তের সুগারের ওপর ভিত্তি করে কমানো-বাড়ানো যাবে, যে সব হৃদরোগী হার্ট ফেইলুরে ভুগছেন তারা গরমের প্রভাবে জ্ঞান হারাতে পারেন, হার্ট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন, শ্বাসকষ্ট ও বুকের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। তারা গরমে ঘেমে যেতে পারেন, এ ধরনের কাজ করতে যাবেন না। গরমের ফলে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো হৃদরোগীরাও সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট এবং পেটের পীড়ায় (ডায়রিয়া) আক্রান্ত হতে পারেন, এমতাবস্থায় দেরি না করে এসব অসুস্থতার জন্য রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় এবং ২-৪ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে না উঠলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, তবে যেসব হৃদরোগী হৃদরোগের জটিলতায় ভুগছেন এবং যাদের অসুস্থতার  মাত্রা অনেক বেশি তাদের এ ধরনের অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য সরাসরি আপনার চিকিৎসকের (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। সাধারণ অবস্থায় হৃদরোগীদের খাবার  স্যালাইন গ্রহণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে কেউ যদি ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হন অথবা অত্যধিক ঘেমে যান সেক্ষেত্রে সীমিত মাত্রায় খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যাবে তা না হলে পানিশূন্যতার ফলে হৃদরোগের তীব্রতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং হার্ট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, তাই ডায়রিয়া খুব তীব্র হলে এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে হৃদরোগীরা অবশ্যই হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন, এতে করে জটিল পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে পারবেন। সর্বোপরি, এ গরমকালে হৃদরোগীরা যথাসম্ভব উষ্ণ আবহাওয়ায় গরম থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সর্বোত্তম পন্থা অবলম্বন করে জীবনধারণ করবেন। এতে অনাকাক্সিক্ষত জটিল পরিস্থিতি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর