রবিবার, ২ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

সিজোফ্রেনিয়ায় আশার কথা

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্রফেসর ডা. মো. আজিজুল ইসলাম

সিজোফ্রেনিয়ায় আশার কথা

সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল এবং গুরুতর মানসিক রোগ। মনোরোগের সুবিশাল ক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়া একটি ব্যাপক ও বিস্তৃত স্থান দখল করে আছে। সিজোফ্রেনিয়া নিয়ে কুসংস্কার আর ভ্রান্ত ধারণার শেষ নেই।  উপরি বাতাস, আলগা-লাগা, নজর-লাগা বা নজর-পড়া থেকে শুরু করে  ভর করার মতো ভ্রান্ত আর আজগুবি সব শ্রুতি/পুরা কথা প্রচলিত আছে এই রোগটি ঘিরে। ফলশ্রুতিতে ভুল চিকিৎসায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে আরও মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করা হয়, ঠেলে দেওয়া হয় রোগটিকে দীর্ঘ স্থায়িত্বের দিকে।

কিছু আশার কথা শোনাতে চাই  : প্রথম কথাটি হলো সিজোফ্রেনিয়া রোগের সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক কারণ ও ব্যাখ্যা রয়েছে। ব্রেনে নিউরো কেমিক্যালস/নিউরো ট্রান্সমিটারের ব্যত্যয়/অসামঞ্জস্যতার জন্য এই রোগ হয়। সুতরাং এসব কেমিক্যাল নিয়ন্ত্রণ/ প্রতিস্থাপন/সংযোজন-বিয়োজন করে এর প্রকৃত এবং বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা সম্ভব। মূল কথা হলো কঠিন হলেও এ রোগটি চিকিৎসাযোগ্য এবং এর সঠিক চিকিৎসা সম্ভব।  দ্বিতীয় আশার কথাটি হলো, এক চতুর্থাংশ থেকে এক তৃতীয়াংশ সিজোফ্রেনিয়া সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। অর্থাৎ ২৫%-৩০% রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে একেবারেই নিরাময় হবে, রোগটির আর পুনরাবৃত্তি নাও হতে পারে। এর বাইরে বাকি রোগীদের চিকিৎসার মাধ্যমে একটি অর্থপূর্ণ, সামাজিক, পারিবারিক এবং পেশাপূর্ণ জীবন নির্বাহ করতে সক্ষম হয়।  তৃতীয় কথাটি হলো, সিজোফ্রেনিয়া মানে শুধু হাসপাতালে ভর্তি থাকা নয়, অর্থহীন জীবন নয়, এসব ক্ষেত্রে প্রায় সব রোগীই চিকিৎসার মাধ্যমে উন্নতি লাভে সমর্থ হয় এবং প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। 

কিছু করণীয় : সিজোফ্রেনিয়া সমন্ধে কিছু জ্ঞান আহরণ করি, তার লক্ষণ/চিহ্নগুলো জেনে রাখি তাহলে পরিবার বা নিকটাত্মীয় কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে তা চোখে পড়বে। সিজোফ্রেনিয়ার কিছু লক্ষণ/চিহ্ন হলো-অনিদ্রা, একা থাকা, নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, সমাজ বিচ্ছিন্ন হওয়া, নিজের যত্ন না নেওয়া, সন্দেহ বাতিকতা, আগ্রাসী মনোভাব, বৈরিতা, আবোল-তাবোল, অর্থহীন, উদ্ভট কথা বলা, ভ্রান্ত বিশ্বাস (ডিলিউশন), অলীক প্রত্যক্ষণ (হেলোসিনেশন) ইত্যাদি। যত দ্রুত রোগীকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে তার ফলাফল ততই ভালো। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

লেখক : অধ্যাপক ও উপদেষ্টা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল

কলেজ ও সিএমএইচ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর