মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঈদের দিনের পুষ্টি ভাবনা

ঈদের দিনের পুষ্টি ভাবনা

এক মাস সিয়াম সাধনার কারণে দৈনিক রুটিনের পরিবর্তন হয়। তাই অনেক সময় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। যেমন : বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি বা গ্যাস, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি। তাই ঈদের মেন্যুতে সবারই উচিত পুষ্টি ও স্বাদের সমন্বয় করা। আমরা মজার খাবার খেতে গিয়ে ভুলে যাই স্বাস্থ্য খারাপ করছি কিনা। খাবারে বাড়তি স্বাদ আনতে ব্যবহার করি অতিরিক্ত তেল আর মসলা। যেহেতু এ গুরুপাক খাবারগুলোতে আমাদের পাকস্থলি অনভ্যস্ত তাই ঈদের দিন এসব খেয়ে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ঈদের দিন একটি সাধারণ সমস্যা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। একে তো রোজায় পানি কম পান করা হয়, সবজি কম খাওয়া হয়, ভাজাপোড়া খাওয়া হয় বেশি। উপরন্তু ঈদে মাংস, তেল, চর্বি বেশি খাওয়ায় পানির অভাব আরও বেশি দেখা দেয়। এতে অনেকেই, বিশেষ করে বৃদ্ধরা সমস্যায় পড়েন। এ ক্ষেত্রে ঈদের আগের রাতে বা ঈদের সকালে ইসবগুলের ভুসি পানিতে মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। এর সঙ্গে প্রচুর পানি পান করে নেবেন। ঈদের দিন দুপুর ও রাতে অবশ্যই সবজির একটি প্রকার রাখবেন। আর সব খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পানি বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পানীয় যেমন লেবুর শরবত পান করতে পারেন। বাজারজাত কোমলপানীয়গুলো এড়িয়ে চলাই উচিত। সেমাই ছাড়া ঈদ হয় না। সেমাই, পায়েস ক্যালসিয়ামের উৎস। কারণ এতে দুধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সেমাই-পায়েসের সঙ্গে বাদাম, কিশমিশ যোগ করলে পুষ্টিমান আরও বেড়ে যায়। তবে ডায়বেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সবজি বা টক ফল দিয়ে মজাদার খাবার আগেই বানিয়ে রাখুন। ঈদের দিন দুপুরে পোলাও বা হালকা মসলার খিচুড়ি থাকতে পারে মেন্যুতে। সেইসঙ্গে মাছের কোনো রেসিপি ও সবজি থাকলে ভালো। খাবার তালিকায় মাংস-পোলাও-বিরিয়ানির সঙ্গে রাখুন সবজি ও সালাদ। টক দই, সবজির সালাদ আপনার খাবার হজমে সাহায্য করবে। শসা, টমেটো, লেবু, গাজরের সালাদ এবং আঁশযুক্ত সবজি প্রতি বেলার খাবারের সঙ্গে যেন থাকে সে ব্যাপারে লক্ষ রাখুন। সালাদ আগে থেকে কেটে রাখবেন না। আগে কেটে রাখলে সালাদের ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং তৎক্ষণাৎ কেটে পরিবেশন করুন। সালাদ এবং আঁশযুক্ত সবজি খাবারের চর্বি শরীরে শোষিত হতে বাধা দেয়। পোলাও-বিরিয়ানি তৈরিতে যথা সম্ভব কম তেল বা ঘি ব্যবহার করুন। ঈদের দিন রাতের খাবার একটু হালকা হলেই ভালো। সারাদিন ভারি খাওয়ার পর মাছ বা মাংসের ভিন্নধর্মী রান্নার সঙ্গে ভাত খেলেও মেন্যুটা অনেক স্বাস্থ্যকর হবে। চাইলে লাল আটার রুটিও খেতে পারেন, সঙ্গে অবশ্যই ঝোল সবজি রাখবেন। এতে পেট ঠা-া থাকবে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ কিংবা ডায়বেটিস আছে, তারা অবশ্যই পরিমিত খাবার খাবেন। অতিরক্ত তেল মসলা এড়িয়ে যাবেন। পোলাও-বিরিয়ানি যে কোনো একবেলা খাবেন; অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- গরু খাসির মাংস এড়িয়ে যাওয়া ভালো; খাবারের সঙ্গে সালাদ, টক দই, লেবু খাবেন। দিনে একবার অবশ্যই ৩০ মিনিট হাঁটবেন। কিডনি রোগীরা প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণে সতর্ক হবেন। সারাদিনে ৪০-৫০ গ্রামের বেশি প্রোটিন খাবেন না। শিশুরা বড়দের তুলনায় বেশি যতেœর হকদার, ঈদের দিন তারা খেলার আনন্দে ঠিক সময়মতো খাবার খায় না। তাই পছন্দের খাবারগুলো পুষ্টিকরভাবে তৈরি করে তাদের খাইয়ে দিতে হবে। নাস্তায় সেমাই সঙ্গে অথবা মিক্সড ভেজিটেবল নুডলস দিতে পারেন। আইসক্রিমের পরিবর্তে দই দেওয়া যেতে পারে। তাই এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

লেখক : মাহফুজা আফরোজ সাথী, ডায়েটিশিয়ান, আজগর আলী হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর