শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঈদ-পরবর্তী স্বাস্থ্য সতর্কতা

ঈদ-পরবর্তী স্বাস্থ্য সতর্কতা

রমজান মাস ও ঈদ সামাজিক জীবনে একটা বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল। আমাদের জীবনধারা, চালচলন, কর্ম সম্পাদন, খাওয়া-দাওয়া, এমনকি ঘুম /বিশ্রামেও আমূল পরিবর্তন বয়ে এনেছিল। ঈদের ব্যস্ততা এবং বেড়ানো ও উপভোগ্যতা দিয়ে তা শেষ হলো। এখন সময় আবার নতুন করে স্বাভাবিক পুরনো রীতিনীতিতে ফেরত যাওয়ার। রমজান মাসে ঐতিহ্যগতভাবেই ভালো ভালো খাবারের প্রতি ঝোঁক বেড়ে গিয়েছিল, ভাজাপোড়া, অধিক চর্বিজাতীয় খাবার, অধিক ক্যালরিসম্পন্ন খাবার খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। পরিবর্তন এসেছিল খাবার গ্রহণের পরিমাণের ওপরও। প্রায় ক্ষেত্রেই খাবারের মাধ্যমে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ আগের তুলনায় হয়তো বেড়ে গিয়েছিল, এটাই স্বাভাবিক। যারা ডায়েট করতেন তারাও অনেকে হয়তো তা ধরে রাখতে পারেননি। অনেকের হয়তো রমজান ও ঈদ মিলে শারীরিক ওজন বৃদ্ধি ঘটেছে। যারা নিয়মিত হাঁটতেন অথবা ব্যায়াম করতেন তারাও সবাই তা ধরে রাখতে পারেননি। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। যাদের রক্তের কোলেস্টেরল বৃদ্ধিজনিত সমস্যা ছিল তাদেরও এসময় রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। উপরে বর্ণিত পরিবর্তনের ফলে উচ্চ রক্তচাপের ও হার্টের রোগীদের সমস্যা বা জটিলতা খুবই বেড়ে যেতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের ও হার্টের রোগীদের জটিলতা প্রশমনের জন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি। যারা রমজানের আগে নিয়মিত হাঁটতেন/ ব্যায়াম করতেন/ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন কিন্তু রমজানে ও ঈদে তা বজায় রাখতে পারেননি তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার পুরনো অভ্যাসের পরিচর্যা শুরু করুন। তবে প্রাথমিক অবস্থায় তা ধীরে ধীরে চালু করা উচিত। হাঁটতে/ব্যায়াম করতে যদি কোনোরূপ অসুবিধা অনুভূত হয় (যেমন- সহজে হাঁপিয়ে যাওয়া ও বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়া) তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের সমস্যা ছিল তারা ঈদ-পরবর্তী কর্মব্যস্ত হওয়ার আগে তা চেক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ভুলবেন না। যাদের বয়স ৪০ অথবা আরও বেশি তারা সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই বছরে অন্তত একবার প্রেসার, ব্লাড সুগার এবং রক্তের কোলেস্টেরল ও হার্টের অবস্থা চেক করে নেবেন। মনে রাখবেন, চেকআপ করার জন্য এ সময়টাই সবচেয়ে ভালো, কারণ এ সময়ে আপনার এসব সমস্যা সহজেই শনাক্ত করা যাবে এবং এ সময় আপনার কর্মব্যস্ততাও অনেক কম হবে তাই এ সময়টাকে বার্ষিক চেকআপের সময় হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। পরবর্তীতে কর্মব্যস্ততা বাড়লে স্বাস্থ্য পরিচর্যার সুযোগ পাওয়া দুষ্কর হবে। মনে রাখবেন আগামী এক বছর কর্মদক্ষতা ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এসব চেকআপ আপনাকে সর্বোত্তমভাবে সাহায্য করবে। যারা ওজন বৃদ্ধিজনিত সমস্যায় ভুগছেন গত এক মাসে হয়তো ওজন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, তারা অতিদ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে, খাবার ও জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর তৎপরতা চালাতে ভুলবেন না। যারা হৃদরোগে ভুগছেন তাদের হার্টের অসুখের বর্তমান অবস্থা নির্ণয় ও জটিলতা নিরূপণের জন্য ECG, Echo-cardiogram, রক্তের Lipid profile এবং ক্ষেত্রবিশেষে ETT করার প্রয়োজন হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল

কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর