সন্তান প্রসবের পরে থায়রয়েড গ্রন্থির প্রদাহ এরূপ একটি সমস্যা। এটি খুব বেশি হয় তা নয়, কিন্তু যখন হয় তখন শনাক্ত করা অনেক ক্ষেত্রেই জটিল হতে পারে। গর্ভকালের আগে বা গর্ভকালীন সময়ে যাদের থায়রয়েড ফাংশন ভালো ছিল, তারাও এতে আক্রান্ত হতে পারে। লক্ষণগুলো দুপর্যায়ের হতে পারে; প্রথম পর্যায়ের লক্ষণগুলো হলো : বুক ধড়ফড় করা, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, ঘন ঘন পায়খানা হওয়া, উত্তেজনা, আবেগ প্রবণতা, মানসিক বিষাদগ্রস্ততা; হাত পা কাঁপা, গরম সহ্য করতে না পারা। এ লক্ষণগুলো প্রসবের পরের এক থেকে চার মাসের মধ্যেই সাধারণত দেখা দেয়। পরবর্তী পর্যায়ের লক্ষণগুলো হলো শারীরিক দুর্বলতা, শীত সহ্য করতে না পারা, ত্বক শুকনো লাগা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অবষণœতা ও ওজন বৃদ্ধি পাওয়া। এ লক্ষণগুলো পরবর্তী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয়ে ১২ মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। এর সঠিক কারণটি এখনো পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। তবে এদের প্রায় সবারই রক্তে এন্টিথায়রয়েড, এন্টিবডি থাকে। যা এ ঘটনাটি ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টাইপ-১ ডায়াবেটিস, প্রসব-পরবর্তী থায়রয়েড গ্রন্থির প্রদাহের আগের ইতিহাস পরিবারের আর কারও থায়রয়েড গ্রন্থির রোগের ইতিহাস ইত্যাদি থাকলে প্রসব-পরবর্তী থায়রয়েড গ্রন্থির প্রদাহ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

অনেক সময়ই রোগ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়ে যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে থায়রয়েড ও হরমোনের পরীক্ষা (TSH, FT4) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে এন্টিথায়রয়েড, এন্টিবডি, থায়রয়েড গ্রন্থির আল্ট্রাসনোগ্রাম দরকার হতে পারে। খুবই কম ক্ষেত্রে থায়রয়েড গ্রন্থির রেডিও আয়োডিন আপটেক টেস্ট দরকার হতে পারে। প্রসব-পরবর্তী থায়রয়েড গ্রন্থির প্রদাহের অধিকাংশ রোগীই ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে থাকে। তাই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।

 সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রা-ইনোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।