রবিবার, ৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

কোমর ব্যথার সহজ সমাধান

কোমর ব্যথার সহজ সমাধান

সারজিল রহমান (ছদ্মনাম), বয়স ৪৭। প্রখ্যাত ব্যাংকার। নিজেই গাড়ি চালিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল যান প্রতি কর্মদিবসেই। যানজটের কারণে প্রতিদিনই প্রায় ২/৪ ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকতে হয়। অফিসে গিয়েও বসে থাকার কাজ কমপক্ষে ৮/৯ ঘণ্টা। ফলে তিনি দিনের বেশির ভাগ সময় বসে কাটান। শারীরিক পরিশ্রম হয় না বললেই চলে। তিন চার সপ্তাহ ধরে সামান্য কোমর ব্যথা অনুভব করছিলেন। ব্যথা তেমন তীব্র না হওয়ায় ব্যথানাশক না খেয়েই সব সামলে নিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে গেছেন। তেমন সমস্যাও হয়নি। সম্প্রতি তার ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, খুব কম মাত্রার যদিও। গত মাসের এক সকালে উঠে গোসল সেরেছেন। পোশাকও পরেছেন। কিন্তু সামনে ঝুঁকে মোজা পরতে গিয়ে তিনি কোমরে তীব্র খিঁচুনি অনুভব করলেন। শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে না পেরে পড়ে গেলেন মেঝেতে। পরিবারের সদস্যরা ধরে তুললেন। এতক্ষণে ব্যথা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপায়ান্তর না দেখে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন। চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করে জানালেন; তিনি সম্ভবত ডিস্ক প্রল্যাপ্সে আক্রান্ত। এমআরআই রিপোর্টও একই বর্ণনা দিল। যদিও তার ডিস্কটি ছিঁড়ে যায়নি। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় protrusion বলে। কোমরের দুটি কশেরুকার মধ্যবর্তী চাকতিটি বের হয়ে স্নায়ুর গোড়ায় চাপ দিলেই সেটি ডিস্ক প্রল্যাপ্স। প্রল্যাপ্স মূলত দুধরনের-Protrusion and extrusion. প্রথম ধরনটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। যাই হোক, চিকিৎসক সারজিল সাহেবকে হাসপাতালে ভর্তি করে ইন্টিগ্রেটেড পেইন ম্যানেজমেন্টের আওতায় চিকিৎসা দিলেন। দুই সপ্তাহের কম সময়ে রোগী পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযাই সারজিল সাহেব এখন দিনে নিয়মিত ১ ঘণ্টা হাঁটেন, ব্যায়াম করেন। দিব্যি সুস্থ আছেন তিনি। 

দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে কি ঘটতে পারত? : - আমাদের দেশের রোগীরা অতি মাত্রায় ব্যথানাশকের ওপর নির্ভরশীল। ব্যথা হলেই রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ব্যথানাশক সেবন করে ব্যথাকে দমিয়ে ফেলেন। ফলে সামান্য সমস্যাই পরে গুরুতর আকার ধারণ করে। শারজিল সাহেব চিকিৎসকের পরামর্শ মতো বিশ্রাম পূর্বক সঠিক চিকিৎসা না নিয়ে ব্যথানাশক খেয়ে নিজের কাজ চালিয়ে গেলে বিপদে পড়তে পারতেন। তার বের হয়ে যাওয়া ডিস্কটি অধিক চাপে ছিড়ে গিয়ে (Extrution) সমস্যা আরও জটিল করে তুলতে পারত। সঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ায় তার ব্যথা দ্রুত কমে গেছে। ফলে তিনি অধিক চিকিৎসা খরচ ও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কোমর ঘাড় হাঁটুসহ সব শারীরিক ব্যথাই রোগীর উদাসীনতায় জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে পরিণত হয়। দ্রুত সঠিক চিকিৎসা সব সময়ই কম ব্যয়বহুল ও অধিক কার্যকরি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কখনই দ্রুত সমাধান দেওয়া সম্ভব নয়।  তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। অন্যতায় জটিরতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে।

ডা. মোহাম্মদ আলী, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ,

হাসনাহেনা পেইন রিসার্চ সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা।  [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর