শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

শিশুর খাদ্যনালি বা শ্বাসনালিতে কিছু আটকে গেলে

শিশুর খাদ্যনালি বা শ্বাসনালিতে কিছু আটকে গেলে

অসাবধানতাবশত খাদ্য ও শ্বাসনালিতে অনাকাক্সিক্ষত বস্তু প্রবেশ করে আটকিয়ে গেলে মারাত্মক জটিলতা হতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এ ঘটনা অহরহই দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ ঘটায়। স্বাভাবিকভাবে শিশুরা হাতের কাছে যা পায় তাই মুখে দেয় আবার মায়েরাও অনেক সময় অপরিণত বয়সে বাচ্চাদের মুখে আপেল, বাদাম ইত্যাদি দেয় । শিশুর শ্বাসনালি বা খাদ্যনালিতে মায়ের কানের দুল, নাকের ফুল থেকে শুরু করে ছোট খেলনা, চাবি, সেফটিপিন, বোতাম, পয়সা, বাঁশি এমন কোনো জিনিস নেই যা ঢুকতে পারেনা । বাদাম, বরই বা তেঁতুলের বিচি ইত্যাদি শ্বাসনালিতে প্রবেশ করলে শিশুর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। তসবি, পুঁতি, বোর্ডপিন, সেফটিপিন, জ্যাম ক্লিপ, বলপেনের মাথার অংশবিশেষ ইত্যাদিও ছোট শিশুদের শ্বাসনালিতে প্রবেশ করতে পারে। শ্বাসনালিতে এগুলো প্রবেশ করলে হঠাৎ করে কাশি এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তবে সব জিনিস আবার Xray তে ধরাও পড়ে না এবং অনেক সময় সঠিক ইতিহাসও পাওয়া যায় না। এমনকি ছোট বাচ্চারা বাবা মায়ের ভয়ে স্বীকারও করে না। আগে থেকে অ্যাজমা বা হাঁপানির ইতিহাস নেই অথচ ঠান্ডা জ্বর ছাড়া হঠাৎ করে বাচ্চা কাশি বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত, এমনটি হলে শ্বাসনালিতে অনাকাক্সিক্ষত বস্তুর সন্দেহ করতে হবে । বাসাতেই জীবন ঝুঁকির আশঙ্কা হলে বাচ্চার দুই পা ধরে উল্টিয়ে ধরে বুকে ঘনঘন থাবা দিয়ে চেষ্টা করা যেতে পারে বটে তবে এ জাতীয় ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া জরুরী। তাই আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে অযাচিত বস্তু যদি কন্ঠনালির নিচের অংশের শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে তবে ব্রঙ্কসকোপির (Bronchoscopy) মাধ্যমে বের করতে হয়। এক্ষেত্রে একবারের চেষ্টায় সম্ভব না হলে একাধিকবার ব্রঙ্কসকোপির প্রয়োজন হতে পারে । এবং তাতেও সম্ভব না হলে অপারেশনের মাধ্যমে বের করতে হয়। মনে রাখতে হবে এটি একটি মৃত্যুঝুঁকি সম্পন্ন মারাত্মক অবস্থা এবং চিকিৎসা সুযোগও সীমিত তাই ছোট বাচ্চারা যেন খেলনা, মার্বেল. তসবিহ, কলম ইত্যাদি মুখে না দেয় সেদিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখা জরুরি। বড়দের ক্ষেত্রে শ্বাসনালিতে অনাকাক্সিক্ষত বস্তু (foreign body)  তেমন একটা না ঢুকলেও মেয়েরা চুলের ক্লিপ (Hair pin) মুখে রেখে যখন খোঁপা করে বা মাথায় স্কার্ফ বাঁধে অথবা সেলাই মেশিনের সুচ মুখে রেখে মেশিন মেরামত করে তখন হঠাৎ হাসিঠাট্টা বা হাঁচি কাশির সময় সেটা শ্বাসনালিতে ঢুকে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে অনাকাক্সিক্ষত কোনো বস্তু ফুসফুসের ভিতর কোনো নালিতে আটকে তাৎক্ষণিক জীবনসংহারী শ্বাসকষ্ট বা কাশি না হলেও সেটা বের না করে বসে থাকার সুযোগ নেই, কেননা সেটা তিলে তিলে ফুসফুসকে নষ্ট করে দিতে পারে। অন্যদিকে খাদ্যনালিতে অনাকাক্সিক্ষত বস্তু (foreign body) তাৎক্ষণিক জীবনসংহারী না হলেও নানা জটিলতা ও ভোগান্তি হতে পারে। অনেক ছোটখাটো অযাচিত বস্তু (foreign body) ধীরে ধীরে পায়খানার সঙ্গে বেরিয়ে যায়। কিন্তু একটু বড় হলে খাদ্যনালিসহ নাড়ির বিভিন্ন অংশে আটকে জটিলতা দেখা দিতে পারে। আবার ব্যাটারি জাতীয় কিছু আটকে গেলে খাদ্যনালি ছিদ্র হয়ে যেতে পারে।

অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম, বিভাগীয়

প্রধান, থোরাসিক সার্জারি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর