রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুখের দুর্গন্ধ : বিব্রতকর অবস্থা

মুখের দুর্গন্ধ : বিব্রতকর অবস্থা

মুখের দুর্গন্ধের কারণে মানুষ জনসম্মুখে যেতে লজ্জাবোধ করে। মুখের এই দুর্গন্ধ কেন হয়, তা নিয়ে বিজ্ঞানের গবেষণা বহুকাল যাবৎ চলে আসছে। সে সব গবেষণা থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করা গেছে। দুর্গন্ধ বা দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস একটি বিরক্তিকর স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রায়শই  আক্রান্ত ব্যক্তি তার এমন অবস্থা সম্পর্কে খুব একটা অবগত থাকেন না। তবে সমস্যাটি আশপাশে অবস্থানকারীদের বিরক্তি ঘটায়। কেননা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় যখন দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু বেরিয়ে আসে তখন গোটা পরিবেশকে দুর্গন্ধময় করে  দিতে বাধ্য। শুধু পাশর্^বর্তী ব্যক্তিই যে এর নেতিবাচক প্রভাবে বিরক্ত হন তা কিন্তু নয়, ভুক্তভোগী ব্যক্তিও নানা স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হন দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস প্রশ্বাসের কারণে। তবে, কেউ কেউ হরেক ব্র্যান্ডের মাউথওয়াস/¯ন্ডেপ্র ইত্যাদি ব্যবহার করে বিরক্তিকর অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজেন, তাতে ফলাফল কতদূর পাওয়া যায়- তা বলতে পারবেন ভুক্তভোগীরাই। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বসে নেই, একের পর এক চালিয়ে যাচ্ছেন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তেমনি সম্প্রতি পরিচালিত সমীক্ষা শেষে একদল মার্কিন বিজ্ঞানী একটি নতুন তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তাদের ভাষায় দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস দূরীকরণে এবং সুগন্ধি শ্বাসের জন্য মিন্ট বা পারফিউম এর চেয়ে অধিক কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম ম্যাগনোলিয়া ফুল গাছের বাকল বা ছাল।

মুখের দুর্গন্ধ সম্পর্কে সবচেয়ে মজার তথ্যটি হলো, এটা ব্যক্তি নিজে বুঝতে পারেন না এবং অবলীলায় সবার সঙ্গে কথা বলে যান, কিন্তু অন্যরা বুঝতে পারেন যারা তার কাছাকাছি থাকেন, এটাই মুখের দুর্গন্ধের একটি বড় সমস্যা। এতে সহকর্মী এবং বন্ধু-বান্ধব ছিটকে যায়, কাছে ঘেঁষতে চায় না। অনেকেই বন্ধু ও প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হন এবং অপ্রিয় হয়ে যান। এ রকম অবস্থায় লাজলজ্জা ভুলে নিকটজন কাউকে জিজ্ঞেসে করা ভালো যে, তার মুখে কোনো দুর্গন্ধ আছে কিনা অথবা কি তার সমস্যা। সবার কাছে লজ্জা পাওয়ার চাইতে এক বন্ধুর কাছে একটু লজ্জা পাওয়া খারাপ নয় নিশ্চয় অথবা নিজের মুখের সামনে হাত রেখে জোরে হাঁ করে বাতাস বের নাকের দিকে ফিরিয়ে নিলে নিজেই বুঝতে পারা যাবে মুখে দুর্গন্ধ আছে কিনা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বন্ধু স্ত্রী হলে স্বামী অথবা স্বামী হলে স্ত্রীর পরামর্শ নেওয়া ভালো, সন্তান হলে মাকেও প্রশ্ন করা যায়। মুখের  দুর্গন্ধ (হ্যালিটোসিস) থেকে মুক্তি পেতে উপায় সমুহ বাজারে  অনেক ধরনের  মাউথ ওয়াশ পাওয়া যায় তবে ক্ষেত্রে  অ্যালকোহলযুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত নয়। এটা মুখ গহবরকে শুষ্ক করে তোলে।  যেহেতু এই পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া  বেশি  জন্মায়। অতএব  ওই সময়  মাউথ ওয়াশ  ব্যবহার না করে অল্প গরম লবণ মিশ্রিত পানি দিয়ে কুলকুচি করা ভালো। যে সব মানুষ মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে ভুগছেন তাদের উচিত প্রত্যেকবার খাবারের পর ভালোভাবে কুলকুচি করা। তাহলে মুখের ভিতরের জমে থাকা খাদ্যকণা বের হয়ে যাবে । সেক্ষেত্রে  ব্যাকটেরিয়া  জন্মানোর  কোনো সুযোগ পাবে না। বেশির ভাগ মানুষ শুধু তাদের দাঁত পরিষ্কার করেন কিন্তু  জিহবা পরিষ্কার  করেন না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে জিহবা পরিষ্কার করাটাও অনেক জরুরি। বিশেষ টাং ক্লিনার অথবা জিব ছুঁলার  সাহায্যে ‘জিহবা পরিষ্কার করা যায়। জিহবাতেও অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা দুর্গন্ধের জন্য দায়ী। যাদের মুখগহবর বেশি  শুষ্ক তারা মুখের দুর্গন্ধের সমস্যায় বেশি ভোগেন। তাই তাদের প্রচুর পানি পান করতে হবে। এক্ষেত্রে  অল্প অল্প করে  বারবার পানি খেতে হবে মুখের লালা নিঃসরণ বাড়াতে চিনিবিহীন চুইংগাম অথবা লজেন্স  বা  সুগারলেস  চুইংগাম  খেতে হবে। ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহলও মুখের শুষ্কতার জন্য দায়ী। তাই কফি, মদপান থেকে বিরত থাকতে হবে।  নিকোটিন হচ্ছে মানুষের শরীরের সবচেয়ে বড় শত্রু। দাঁত এবং জিহবাতে এই নিকোটিন জমে। ধূমপান মুখ গহবরকে অধিক পরিমাণে শুষ্ক করে তোলে, এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে লালাও তৈরি হয় না। তাছাড়া পান সুপারি জর্দা  ব্যবহার থেকেও  বিরত  থাকতে হবে। মুখে সব সময় একটি লং বা লবঙ্গ অথবা এলাচি দানা রাখলে ভালো। পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- আলসার, বদহজম, গ্যাস তৈরি হলে এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ  খাওয়া যেমন ভালো তেমনি কোষ্ঠ কাঠিন্য থাকলে রাতে ইসপগুলের ভুসি এক গ্লাস পানিতে খাওয়া ভালো। নাক, কান বা গলার কোনো ধরনের  প্রদাহ থাকলে ইএনটি বিশেষজ্ঞ দেখানো ভালো। এছাড়া মুখের ভিতরে দীর্ঘদিনের ঘা বা প্রদাহ থাকলে তা মুখ ও দন্ত রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরী, মুকুল ডেন্টাল

ক্লিনিক, গ্রীন স্কয়ার, গ্রীনরোড, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর