অনেক মানুষ ঘুমের মধ্যে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট অনুভব করে থাকেন, ফলশ্রুতিতে ঘুম ভেঙে যায়। আবার একটু পরে ঘুমাতে যান। কারও কারও এ অবস্থা বেশ ঘন ঘন হতে থাকে। হৃদরোগ, উচ্চ-রক্তচাপ, হার্ট-ফেইলুর, অত্যাধিক ওজন বৃদ্ধি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দনকে এ অবস্থার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। নারীর চেয়ে পুরুষ ব্যক্তিদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তবে মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে এর প্রবণতা পুরুষদের মতো বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সাধারণভাবে এ সমস্যায় আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ মানুষের শারীরিক ওজন বেশি থাকে। তবে স্বাভাবিক শারীরিক ওজন সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যেও এ সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। গলায় অধিক পরিমাণে চর্বি জমা হওয়া, পানি জমা হওয়া, স্নায়ু তরঙ্গের বৈদ্যুতিক সংকেতের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া এবং মেডিসিনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবেও এ ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হতে পারে। ঘুমন্ত অবস্থায় রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস, শারীরিক প্রয়োজনমতো কম-বেশি হয়ে থাকে। যা মানুষের মস্তিষ্ক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে ঘুমের মধ্যেও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা বৃদ্ধি ঘটিয়ে তার ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। এ সমস্যায় আক্রান্তদের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বৃদ্ধির সময় কণ্ঠনালিতে অত্যধিক চর্বি জমা হওয়ায়, কণ্ঠনালির মধ্যে পানি জমা থাকায়, প্রদাহ দেখা দেওয়ায় অথবা কণ্ঠনালি নিয়ন্ত্রণ করে এমন মাংসপেশির কার্যকারিতায় ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগী পর্যাপ্ত বাতাস গ্রহণে ব্যর্থ হয়। কারও কারও শারীরিক ওজন বৃদ্ধির জন্য ফুসফুসের আকার ছোট হয়ে যাওয়া এবং অনেকের ফুসফুসে পানি জমা হওয়ায় প্রয়োজনের সময় পর্যাপ্ত বায়ু গ্রহণে বাধার সৃষ্টি হয়, ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে অক্সিজেনের অভাব প্রকট আকার ধারণ করে, তখন ঘুম ভাঙ্গে।
লক্ষণ : ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট বয়স্কদের মধ্যে কম-বেশি সবার আছে। তবে এ কষ্ট যদি প্রায়ই দেখা দেয়, খুব বেশি সময় বিদ্যমান থাকে, কষ্টের মাত্রা খুব বেশি বৃদ্ধি পায় তখনই এ অবস্থাকে অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এর জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। অনেকেই বুঝতে পারেন না, এ সমস্যার জন্য কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন, যেহেতু হৃদরোগজনিত কারণে এ ধরনের সমস্যা বহুলাংশে দেখা দিয়ে থাকে, তাই প্রাথমিক অবস্থায় হৃদরোগ অথবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত। রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে রোগী প্রায়ই এ ধরনের কষ্টে আক্রান্ত হন। মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেলে প্রতি রাতেই রোগীর কষ্ট দেখা দেয়। কেউ কেউ ঘন ঘন শ্বাসকষ্টের জন্য বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করে থাকেন। দিনের বেলায় প্রায়ই রোগী তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। কখনো অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে পড়েতে পারেন। রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে এ সমস্যা বেশি পরিলক্ষিত হয়। এর সঙ্গে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট-ফেইলুরের উপসর্গও ক্ষেত্রবিশেষে এসব রোগের জটিলতার লক্ষণ হিসেবে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
চিকিৎসা : এটা বেশ কিছু অসুস্থতার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনায় আসে। তাই রোগের কারণ নির্ণয় করে উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নিরূপণ করা উত্তম। মনে রাখবেন প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।