বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রেসক্রিপশন

ডেঙ্গু-প্লাটিলেট আতঙ্ক

অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী

ডেঙ্গু-প্লাটিলেট আতঙ্ক

ডেঙ্গুজ্বরে সাধারণত প্লাটিলেট কমে যায়। Simple dengue fever-এ (জটিলতাহীন ডেঙ্গু) প্লাটিলেট ১৫০,০০০-এর নিচে কমে আসে। কিন্তু Dengue hemorrhagic fever-এ (stage-1) প্লাটিলেট ১০০,০০০-এর নিচে নেমে আসে। অনেক সময় দেখা যায় প্লাটিলেট count কমতে কমতে ১০,০০০ এমনকি ৫,০০০-এর নিচে নেমে আসে। সাধারণত প্লাটিলেট count জ্বরের ৩-৬ দিনের ভিতর কমতে থাকে এবং ৬ দিন পর আবার বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে ৯-১০ দিনের মাথায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। প্লাটিলেট কমে যাওয়াটা জনগণের মাঝে আতঙ্ক এবং ত্রাসের সৃষ্টি করে। ২০০০ সালে যখন প্রথম ডেঙ্গু epidemic হয়, তখন থেকেই মানুষের মাঝে প্লাটিলেট আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এই আতঙ্কটা খুব যে একটা অযৌক্তিক তা বলা যাবে না। তার কারণ রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য প্লাটিলেটের ভূমিকা রয়েছে। প্লাটিলেট কমে এলে এক পর্যায়ে চামড়া এবং ঝিল্লির গায়ে ছোট ছোট ফোঁটা ফোঁটা রক্ষক্ষরণ হয়ে থাকে। এটাকে পিটিচি অথবা পারপুরা বলে। রক্তক্ষরণের কথা মনে করেই প্লাটিলেট কমে গেলে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। রক্ত দেওয়ার জন্য ছোটাছুটি শুরু করে এবং ডাক্তারের কাছে পীড়াপীড়ি শুরু করে। এমতাবস্থায় অন্য কোনো কারণে রোগী মারা গেলে রোগীর আত্মীয়স্বজন মনে করেন প্লাটিলেট কমে গেছে বলে রোগী মারা গেছেন। ডেঙ্গুর ব্যপারে এই ধারণা মোটেই ঠিক নয়। ডেঙ্গুর যে প্লাটিলেট কমে ওই কারণে রক্তক্ষরণ হয় না। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গবেষণা করে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালে ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে’ প্লাটিলেট ৫০০০-এর কম এরূপ লোকের উপরে একটি গবেষণা করে দেখা গেছে, যে গ্রুপে প্লাটিলেট দেওয়া হয়নি এবং যে গ্রুপে প্লাটিলেট দেওয়া হয়েছে তাদের মাঝে ফলাফলে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থাৎ যাদের প্লাটিলেট দিয়েছে তাদেরও Bleeding হয়নি এবং যাদের প্লাটিলেট  দেয়নি তাদেরও Bleeding হয়নি। অনুরূপ একটি গবেষণা ভারতের ব্যাঙ্গালোরে করা হয়েছে সেখানেও একই ধরনের ফল পাওয়া গেছে। পাঠকরা এবার আমাদের দেশের হাসপাতালের দিকে তাকান। অনেক রোগীর প্লাটিলেট ১০,০০০ এমনকি ৫,০০০-এর নিচে নেমে গেছে, তাদের কোনো রক্তক্ষরণ হচ্ছে না এবং তাদের প্লাটিলেট দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। যদি তাদের রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হতো তাহলে সমাজে এর প্রতিফলন ঘটত। আপনি বিভিন্ন জায়গায় দেখতেন রক্ত দেওয়ার বিজ্ঞাপন। ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রক্তের সংকট পড়ে যেত। পরিশেষে বলি, রোগীর প্লাটিলেট ৫,০০০-এর  নিচে  হলেও  আপনি  শান্ত  থাকুন। শুধু প্লাটিলেট কমার কারণে রক্তক্ষরণ হয় না। আপনার রোগী যে হাসপাতালে ভর্তি আছে তার ওপর আস্থা রাখুন। আপনার রোগীর শিরাপথে যে পানীয় দেওয়া হচ্ছে এটাই হচ্ছে ওই অবস্থায় ডেঙ্গু রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা। তবে ডেঙ্গুতে তখনই রোগীর অবস্থা অত্যধিক জটিলতা বা মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে যখন- * যদি রোগী ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলা করে, দৌড়াদৌড়ি করে, অফিস-আদালতে যায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে যায় অর্থাৎ বিশ্রাম না নেয়। * যথাসময়ে ডাক্তারের কাছে না যায়, হাসপাতালে না যায়। যথাযথভাবে শিরায় পানীয় না নেয়। * উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে যখন শক সিন্ড্রোম শুরু হয়। * ডেঙ্গু যখন হৃৎপিন্ডে আঘাত হানে। * যখন ব্রেনে আঘাত হানে। তাই এ বিষয়ে অবহেলা না করে আমাদের যথেষ্ট সচেতন ও যত্নবান হতে হবে।

লেখক : অধ্যাপক মেডিসিন বিভাগ (পিআরএল),

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর