বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ত্বক ফর্সা করার আগে ভাবুন!

ডা. এম আর করিম রেজা

ত্বক ফর্সা করার আগে ভাবুন!

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই অপেক্ষাকৃত গাঢ় বর্ণ বা কালো ত্বকের মানুষের মধ্যে ফর্সা হওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। বাহ্যিক সৌন্দর্য বিচারে সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্বকের রং নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত। গবেষণায় প্রমাণিত যে, সৌন্দর্য নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকা সুস্থ মানুষ ফর্সা হওয়ার চেষ্টা করে থাকে। মজার বিষয়, কালো বর্ণের মানুষের চেয়ে মিশ্র বর্ণ বা শ্যামলা বর্ণের মানুষের মধ্যে এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষ রং ফর্সা করার চেষ্টা করে থাকে সবচেয়ে বেশি। বাজারে ত্বক ফর্সা করার প্রসাধনী ক্রিম বা সাবান যেমন রয়েছে, তেমনি বিউটি পার্লার এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসকরাও ত্বক ফর্সার  জন্য সেবা দিয়ে থাকেন।

কিভাবে কাজ করে : ত্বকে মেলানিন নামে এক ধরনের রঞ্জক থাকে যা ত্বকের বর্ণ নির্ধারণ করে থাকে। মেলানিনের ঘনত্ব যত বেশি ত্বক ততটাই গাঢ় বর্ণের হয়ে থাকে। প্রসাধনী বা ওষুধ এ মেলানিনের ঘনত্ব এবং উৎপাদন কমিয়ে দেয়, ক্ষেত্রবিশেষে ধ্বংস করে।

প্রসাধনী : ক্রিম বা সাবান হিসেবে ত্বক ফর্সা করার অনেক প্রসাধনী বাজারে পাওয়া যায়। বিশ্বের নামিদামি কোম্পানি থেকে শুরু করে অনেক ভেষজ কোম্পানিও নানা ধরনের ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধনী প্রস্তুত করে থাকে। এসব প্রসাধনীতে কজোয়িক এসিড, আলফা হাইড্রোক্সি এসিড, গ্লুটাথিয়ন, মারকারি, হাইড্রোকুইনন ইত্যাদি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন এসব প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারে ত্বক অপেক্ষাকৃত ফর্সা করতে সাহায্য করে থাকে।

বিউটি পার্লার : প্রশিক্ষিত বিউটিশিয়ানদের ফেসিয়াল ক্লিনজিং করার জন্য ৫% এর নিচে গ্লাইকোলিক বা স্যালেসাইলিক এসিড ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে। এর চেয়ে বেশি ঘনত্বে শুধু চিকিৎসকরাই প্রয়োগ করেন।

চিকিৎসক : ত্বকের দাগ বা রোগের কারণে সৃষ্ট গাঢ় রং দূর করতে সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞরা রোগীর অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন ঘনত্বের গ্লাইকোলিক বা স্যালেসাইলিক এসিড পিলিং এবং লেসার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আধুনিক সময়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির নামে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেই ত্বক ফর্সা করা হয়ে থাকে।

জটিলতা : নানাবিধ অনাকাক্সিক্ষত জটিলতার কারণে বিভিন্ন দেশে এসব ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধন সামগ্রীর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। প্রসাধনীর গায়ে সম্ভাব্য ঝুঁকি উল্লেখ করে সাবধান বাণী দেওয়া থাকে। প্রসাধনীতে থাকা মারকারি ত্বকের অসাড়তা থেকে উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ু রোগ বা কিডনি নষ্ট করার মতো নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।  আক্রান্তদের ব্রণ বাড়িয়ে দেয় বা তৈরি করে।

সাবধানতা : ত্বকের বর্ণ নিয়ে হীনমন্যতা দূর করুন, নিজের ত্বকের রং নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার চেষ্টা করুন। ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধনী ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রসাধনী কেনার আগে গায়ে লেখা উপাদান এবং সতর্কতা দেখে নিন।

লেখক : জাকার্তা প্রবাসী ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ।

সর্বশেষ খবর