শিরোনাম
শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে চেনার উপায়

অধ্যাপক ব্রি. জে. মো. আজিজুল ইসলাম

আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে চেনার উপায়

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস ছিল গত ১০ সেপ্টেম্বর। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে দিবসটি। আত্মহত্যা মানে একটি সম্ভাবনা আর স্বপ্নের অকাল এবং অপমৃত্যু। পৃথিবীতে প্রায় এক মিলিয়ন (১০ লাখ) মানুষ প্রতি বছর আত্মহত্যার মাধ্যমে তাদের জীবনকে শেষ করে দেয়। শুনে স্তম্ভিত হবেন, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে পৃথিবীতে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। বাংলাদেশে প্রতি বছর আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মেয়েদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তিন / চার গুণ বেশি। তবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা চার / পাঁচ গুণ বেশি আত্মহত্যার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু আত্মহত্যা প্রতিরোধ যোগ্য। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করে একটি স্বপ্ন, একটি জীবন রক্ষা করা সম্ভব। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে প্রথমেই জেনে নিতে হবে কিছু সর্তক চিহ্ন (Warning Sign) যা আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এসব লক্ষণ/চিহ্ন দেখা গেলেই আমরা সতর্ক হতে পারি সেই ব্যক্তি আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। আর ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে রক্ষা করা সম্ভব।

আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে চেনার উপায় : ক। ব্যক্তিটি নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন, তিনি বলতে থাকেন সংসারে তার প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে। খ। ব্যক্তি আত্মহত্যার কথা বলেন, প্রকাশ করেন, হুমকি প্রদান করেন, অনেক সময় আত্মহত্যা সংক্রান্ত চিরকুট লিখেন। গ। ব্যক্তি আত্মহত্যার সরঞ্জাম খোঁজেন, কিনেন। যেমন- কীটনাশক, অনেক ঘুমের বড়ি, ছুরি ইত্যাদি। ঘ। নিজের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করেন না। ঙ। ব্যক্তি মনে করেন তিনি অবহেলিত, উপেক্ষিত। চ। অন্যদের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন, একা থাকেন, একা হয়ে পড়েন। ছ। অনেক সময় ছোটখাট বিষয় থেকে বেশি পরিমাণ অপরাধ বোধ করেন। জ। তিনি ঘন ঘন মৃত্যু চিন্তা করেন তা অন্যদের বলে বেড়ান। ঝ। জীবননাশের আগের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ গুছিয়ে ফেলেন জমি/জমা, ব্যাংকের/ইনস্যুরেন্সের কাগজ/হিসাব ইত্যাদি। ঞ। অনেক ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার নির্ণয় করেন এবং তাদের সব কিছু বুঝে নিতে বলেন। ট। ব্যক্তি আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন এবং কখনো কখনো সেই পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। ঠ। নিকটাত্মীয়, বন্ধু বান্ধবদের অপ্রয়োজন, অযাচিতভাবেই যোগাযোগ করে ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলেন- যেমন- “কে কখন মরে যায়” “মরে গেলে মাফ করে দিও”। জীবন অর্থহীন ইত্যাদি। ড। আগে নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন এমন ব্যক্তি। ঢ। হঠাৎ করেই একজন ব্যক্তির বেশি থেমে যাওয়া। ণ। মনোরোগ বিশেষ করে বিষণœতা, (ডিপ্রেসন) ব্যক্তিত্ব সমস্যা, ড্রাগ এডিকশন, সিজোফ্রেনিয়া রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রয়োজন সমন্বিত প্রয়াস। ব্যক্তি নিজে, তার পরিবার, কাছের বন্ধুরা, নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী, সহকর্মী, সহপাঠীরা এমনকি ধর্মীয় শিক্ষক আত্মহত্যা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রচেষ্টা হতে হবে আন্তরিক। আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে সহানুভূতি দিয়ে সহায়তা করতে হবে। তার কষ্ট বুঝতে হবে এবং আশার আলো দেখাতে হবে। পৃথিবীর সুন্দর, ইতিবাচক আর ভবিষ্যতের সুখী মুখটা দেখাতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কাছে পৌঁছাতে হবে। কারণ অধিকাংশ আত্মহত্যার কারণ মনোরোগ। তাই সঠিকভাবে মনোরোগের  চিকিৎসা করলেও আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্ভব।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান ও উপদেষ্টা

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও সিএমএইচ, ঢাকা

সর্বশেষ খবর