শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন

অধ্যাপক ব্রি. জে. মো. আজিজুল ইসলাম

প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ছিল গত ১০ অক্টোবর। এ বছর এই দিনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ’ (Mental Health Promotion and Suicide Prevention)। বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে এ দিনটি। মানসিক স্বাস্থ্য হলো স্বাস্থ্য ও সুস্থতার মৌলিক উপাদান এবং সত্যিকার অর্থে মানসিক সুস্থতা ছাড়া কোনো সুস্থতা সম্ভব নয়। তথাপি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব খুবই কম দিই বা এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি না। এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতা অত্যন্ত কম এবং সীমিত। কুসংস্কার এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞানের অপ্রতুলতা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্য মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি-সমৃদ্ধি।

গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হলো : মানসিক স্বাস্থ্য সম্বন্ধে জানতে হবে, বুঝতে হবে * মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কুসংস্কারকে ভেঙে দূর করতে হবে * সর্বস্তরের জনগণকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সজাগ করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে সবার মাঝে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

আরও যা করতে হবে : শিশু-কিশোর বয়স থেকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতনতা এবং প্রয়োজনে শিশু-কিশোরের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে শিক্ষা দেওয়া, প্রেরণা দেওয়া, তাদের মানসিক চাপ অতিক্রমের শিক্ষা দেওয়া, চাপ প্রতিরোধের সক্ষমতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করা। * নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিকরণ। নারীরা মানসিক অসুস্থতায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। * বয়োবৃদ্ধদের সামাজিকভাবে সহায়তা প্রদান। * ভঙ্গুর এবং যাদের মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ ও সম্ভাবনা রয়েছে তাদের সাহায্য করতে হবে এবং তা প্রতিরোধের চেষ্টা করতে হবে। * কর্মক্ষেত্রে সবার মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ হবে সহজ, সুন্দর, বন্ধুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলার পর্যাপ্ত সুযোগ ও পরিবেশ থাকতে হবে। * সামাজিক অস্থিরতা বিশেষ করে সহিংসতা, হিংস্রতা, হানাহানি বন্ধ করে শান্তি এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিটি সহিংসতা, হিংস্রতা মানসিক রোগকে ত্বরান্বিত এবং গভীরতর করে। * সামাজিক বৈষম্যকে দূর করতে হবে। এমনকি মানসিক রোগীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ না করে তাকে কাছে টানতে হবে এবং তাকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কাছে পৌঁছাতে হবে * মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল শিক্ষায় মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে এ সম্পর্কিত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়তে হবে। * প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় মানসিক স্বাস্থ্য সার্ভিস প্রদানকে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত ও সমন্বয় করতে হবে। * মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে আলাপ-আলোচনা, প্রকাশনা বাড়াতে হবে। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, একটি সুস্থ মনই পারে একটি সুস্থ, সুন্দর পৃথিবী গড়তে।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান ও উপদেষ্টা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও সিএমএইচ ঢাকা।

সর্বশেষ খবর