আবহাওয়ায় লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। দিনের বেলা গরম থাকলেও রাতের দিকে শীতল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ঋতুর এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন বা রোগব্যাধি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর প্রভাবে চারদিকে চলছে কিছু কিছু রোগ বালাই আর স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা। এগুলো থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের সবাইকে হতে হবে সচেতন, নিতে হবে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। এই সময় সাধারণ সর্দিকাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে শুরু করে নানা রোগব্যাধির প্রকোপ এ সময়টাতে বেশি দেখা যায়। বাতাসে ছড়ানোর কারণে এগুলো খুবই সংক্রামক বা ছোঁয়াচে, খুব দ্রুতই একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। দেখা যায় বাসায় একজন আক্রান্ত হলে অন্য সবাই ধীরে ধীরে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার আক্রান্ত ব্যক্তিটি অফিসে বা ছোট বাচ্চারা স্কুলে গিয়ে অন্যদের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেয়। ঋতু পরিবর্তনের সময় ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রায় সবাই সর্দিকাশি বা কমন কোল্ডে আক্রান্ত হয় বেশি বেশি। এই রোগে প্রায়ই দুই তিন দিন নাক বন্ধ থাকে, নাক দিয়ে পানি ঝরে, হাঁচির সঙ্গে সঙ্গে গলাব্যথা করে, শুকনা কাশি থাকে, জ্বরও থাকতে পারে। তবে শুকনা কাশিটা কয়েক সপ্তাহ ভোগাতে পারে। গরম গরম চা বা গরম পানিতে আদা, মধু, লেবুর রস, তুলসী পাতার রস ইত্যাদি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাসের পরপরই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। কাশির সঙ্গে হলুদ বা সবুজ রংয়ের কফ বের হলে এবং সঙ্গে জ্বর থাকলে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এই সময়টাতে আরও একটি ভাইরাস রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় যাকে বলে সিজনাল ফ্লু। এই রোগের লক্ষণগুলোও কমন কোল্ডের মতোই। এই সময় বাতাসে অ্যালার্জেন বেশি থাকায় হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিসসহ অন্যান্য অ্যালার্জিজনিত রোগের প্রকোপও বেড়ে যায়। তাই এই পরাগরেণু এড়িয়ে চলাই ভালো। প্রয়োজনে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা ভালো, বিশেষ করে যাদেরকে বাইরে বেশি কাজকর্ম করতে হয়। সাইনোসাইটিস এবং টনসিলাইটিস জাতীয় রোগগুলোও এই সময়ে দেখা দিতে পারে। টনসিলের সমস্যা যে কারও হতে পারে, তবে ছোট বাচ্চারাই বেশি আক্রান্ত হয়। বাতাসের আর্দ্রতা পরিবর্তন আর ধুলাবালির কারণে এ সময়টাতে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস বা শ্বাসজনিত অন্যান্য রোগের তীব্রতা আর আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে যায়। ফুসফুসের রোগ ছাড়াও এই সময়টাতে অনেকেই পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হন। সময়ের সঙ্গে আসবে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত আর বসন্ত। প্রকৃতি এক সময় অপরূপ, অন্য সময় বিরূপ। আর এর সঙ্গে একেক ঋতুতে একেক রোগব্যাধির প্রকোপও দেখা দেবে। তাই সুস্থ থাকার জন্য ঋতুভেদে কিছু সহজ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
লেখক : সাবেক ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধ
শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।