শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শারীরিক যোগ্যতা

শারীরিক কাজকর্ম কমে যাওয়ায় মানুষ ছোটখাটো দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে মানুষ অধিকহারে ক্যান্সার, বাতব্যথাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে

শারীরিক যোগ্যতা

আপনি হাঁটতে পারেন, দৌড়াতে পারেন, সাঁতার কাটতে পারেন, গাছে চড়তে পারেন, ডুব দিয়ে পানির নিচে চলতে পারেন, লাফঝাঁপ দিতে পারেন, বৈরী আবহাওয়া-গরম-শীত-রৌদ-বৃষ্টি-ঝড়-তুফান মোকাবিলা করতে পারেন, কারও আক্রমণ প্রতিহত করতে পারেন, প্রয়োজনে বিপদ থেকে বাঁচার জন্য পলায়ন করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারেন, এ ধরনের আরও হাজার হাজার কর্মকান্ড  সম্পাদনের যোগ্যতাকে শারীরিক যোগ্যতা হিসেবে গণ্য করা হয়। মানবজাতি যখন বনে জঙ্গলে বাস করত, তখন তাদের বৈরী পরিবেশে টিকে থাকার জন্য শারীরিক যোগ্যতার খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। প্রাগৈতিহাসিককালে যাদের শারীরিক যোগ্যতা কম ছিল, তারা প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে বাধ্য হতো, কারণ তারা প্রাকৃতিক বৈরী পরিবেশ মোকাবিলা করে বেঁচে থাকতে পারত না। বৈজ্ঞানিকরা এ অবস্থাকে ন্যাচারাল সিলেকশন বলে অভিহিত করে থাকেন। ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে দুনিয়াতে সুস্থ সবল প্রাণীকুল টিকে থাকত আর অসুস্থ দুর্বল প্রাণীকুল পৃথিবী থেকে বিদায় নিত। দীর্ঘদিন যাবৎ এই প্রক্রিয়া চলমান থাকার ফলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমেই সমস্ত প্রাণীকুলের যোগ্যতম প্রজাতি ও যোগ্যতম ব্যক্তি/প্রাণী দুনিয়াতে রাজত্ব করতে থাকে এবং এই ধারা সর্বকালে বিরাজমান ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও বহাল তরিয়তে টিকে থাকবে। এই ধরাতে যে কোনো প্রাণীকে টিকে থাকার জন্য যে সব জরুরি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে অন্যতম শারীরিক যোগ্যতা। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তার বদৌলতে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থানের ব্যবস্থা, শীতবস্ত্রের সংস্থান, চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধার মতো মৌলিক চাহিদার বিষয়গুলোকে পরিপূর্ণ করার মাধ্যমে মানুষের বেঁচে থাকার মতো উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে মানুষকে অনেক বৈরী পরিবেশ মোকাবিলা থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মানে কি বর্তমান সময়ে মানুষের শারীরিক যোগ্যতার প্রয়োজন কমে গেছে, না তা মোটেও কমেনি। মানুষ জন্মগতভাবেই কিছু শারীরিক যোগ্যতা বা দক্ষতার অধিকারী হয়ে থাকে তবে জন্মগতভাবে প্রাপ্ত যোগ্যতার উৎকর্ষ সাধনের জন্য মানুষকে অনেক ধরনের যোগ্যতা ও দক্ষতা পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। আগেই আলোচনা করেছি যে, অনেক ধরনের শারীরিক যোগ্যতা, পরিশ্রম ও অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জন করতে হয় এবং নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে সে সব যোগ্যতা বজায় রাখতে হয়। বর্তমান সময়ে দিনে দিনে শারীরিক কাজকর্মের অভাবে মানুষের শারীরিক যোগ্যতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলের মানুষের পরিশ্রমের মাধ্যমে শারীরিক যোগ্যতা বৃদ্ধির সুযোগ খুবই সীমিত হয়ে পড়ায় মানুষের শারীরিক যোগ্যতা কমে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে বর্তমান সামাজের মানুষ জীবনধারাগত অসুস্থতায় আক্রান্ত হচ্ছে- যেমন উচ্চরক্তচাপ বা হাইপ্রেসার, রক্তে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া মানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া, শারীরিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি।

এসবের ফলশ্রুতিতে মানুষ মারাত্মকহারে হৃদরোগের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শারীরিক কর্মকান্ড ও যোগ্যতা কমে যাওয়ার ফলে মানুষ ছোটখাটো দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে মানুষ অধিকহারে ক্যান্সার, বাতব্যথাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই বলব, সুস্থ থাকার প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো শারীরিক যোগ্যতা।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর