শিরোনাম
রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
অস্টিওপরোসিস দিবস আজ

নীরব ঘাতক হাড় ক্ষয়

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

নীরব ঘাতক হাড় ক্ষয়

বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস আজ। পৃথিবীর অনেক দেশে একই প্রতিপাদ্যে প্রতি বছর অস্টিওপরোসিস দিবসটি পালন করে। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো, ‘হাড়ের প্রতি যত্ন নিন’। গতবাবের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘ভঙ্গুর অস্থি স্বাধীনতা কেড়ে নেয়’। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা বিশ্বে ৫০ বছরের অধিক বয়সের প্রতি তিন নারীর মধ্যে একজন এবং প্রতি পাঁচ পুরুষের মধ্যে একজন অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ নারীদের মধ্যেই এ রোগের ঝুঁকি বেশি।

রহিমা বেগম (ছদ্মনাম), বয়স ৭৫। হঠাৎ গোসলের সময় বাথরুমে পড়ে গেলেন। এক্সরে রিপোর্টে দেখা গেল তার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। পরীক্ষায় জানা গেল তার শরীরের হাড়গুলোর অধিকাংশই অনেক ভঙ্গুর। এ অবস্থাটাকেই অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় বলে। এটি একটি নীরব ঘাতক, যে রোগে শরীরের হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, হাড়ের গঠন অনেকটা মৌমাছির চাকের মতো হয়ে যায়, হাড়গুলো ঝাঁজরা বা আলগা হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে সামান্য আঘাতে বা পড়ে গেলে অতি দ্রুত হাড়গুলো ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রায় সবার শরীরে দানা বাঁধে, যা মানবদেহের বিভিন্ন হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে ফেলে। শরীরে সব সময় ব্যথার অনুভূতি বাড়িয়ে স্বাভাবিক হাঁটাচলা, কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটিয়ে জীবনের ভোগান্তি বাড়ায়।

হাড় গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ৫০ বছর বয়সের আগে হাড়ের বৃদ্ধি বেশি হয় আর ক্ষয় কম হয়। এরপর থেকে হাড়ের ক্ষয় বেশি হয়, বৃদ্ধি কম হয়। হাড় ক্ষয় নির্ভর করে হাড়ের ঘনত্বের সঙ্গে সঙ্গে ক্যালসিয়াম, ফসফেট, কোলাজেন ফাইবারের উপস্থিতির ওপর। এগুলোর পরিমাণ অল্প বয়স থেকেই কম থাকলে অস্টিওপরোসিস ত্বরান্বিত হয়। তাই স্বাস্থ্যসম্মত হাড়ের ঘনত্বের সঙ্গে পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম, ফসফেট, কোলাজেন গ্রহণ করলে বুড়ো বয়সে অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

কাদের ঝুঁকি বেশি : সাধারণত বয়স্ক পুরুষ এবং মেনোপজ-পরবর্তী নারীদের হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, উচ্চতা অনুসারে যাদের ওজন কম, যারা নিয়মিত পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক ও ভিটামিন ডি ইত্যাদি গ্রহণ করেন না, ধূমপান ও মদপান করেন এবং মেনোপজ-পরবর্তী মহিলাদের ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা বাড়ে। তাছাড়া বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন দীর্ঘমেয়াদে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই, লিভার ও কিডনি রোগে হাড় ক্ষয়ে ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া জিনগত ত্রুটি, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা, অপারেশনের কারণে ডিম্বাশয় না থাকা, অন্যান্য হরমোন জনিত রোগ যেমন থাইরয়েড ও প্যারাথাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেশি হলে, হায়পোগোনাডিজম, কুসিং সিনড্রম, ডায়াবেটিস, এক্রমেগালি, অ্যাডিসনস রোগ ইত্যাদি। মহিলাদের মাসিক বন্ধ হওয়ার পরবর্তী সময়ে হাড়ক্ষয়ের গতি বেগবান হয়। এছাড়া অনেক কারণ বা স্বাস্থ্যঝুঁকি হাড় ক্ষয়ের আশঙ্কা বৃদ্ধি করতে পারে।

কি কি উপসর্গ দেখা দেয় : প্রথমত কোনো শারীরিক লক্ষণ নাও থাকতে পারে। কোমরে, পিঠে বা শরীরের অন্য কোনো হাড়ে ব্যথা যা ব্যথানাশকে উপশম হয় না। কারও কারও শিরদাঁড়ার হাড় ভেঙে বা স্থানচ্যুতি হয়ে দৈহিক উচ্চতা কমে, ফলে কুঁজো হয়ে যায় বা সামনে ঝুঁকে থাকে।

প্রতিরোধে করণীয় : হাড় ক্ষয় রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাটা উত্তম। নিয়মিত হাঁটাচলা এবং ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়ামে হাড়ের শক্তি বাড়ে, হাড়ের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে জয়েন্টগুলো সচল রাখে এবং শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে হাড় ক্ষয় কমায়। হাড়ের প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি। ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিত মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। ভিটামিন ডি-এর ৯০ ভাগ উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। তাই প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকুন, পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ খান। এতে হাড় ভালো থাকবে। ধূমপান ও মদপান ত্যাগ করুন। কারণ এতে হাড়ের ক্ষয় বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। হাড়ভাঙা রোধে বাথরুমের পিচ্ছিল ভাব দূর করুন। রাতে ঘরে মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখুন। অন্ধকারে চলাফেরা করবেন না। অতিরিক্ত ওজন বহন করবেন না। হাড় ক্ষয় রোগের প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হবে ঝুঁকি শনাক্তকরণ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়া কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখতে হবে, প্রতিকার নয় প্রতিরোধ উত্তম।

লেখক : ইউজিসি অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর