রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

উচ্চ রক্তচাপের সাতকাহন

উচ্চ রক্তচাপের সাতকাহন

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন অত্যন্ত পরিচিত একটি রোগ। পূর্ণবয়স্ক মানুষের শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। সমস্যা হলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা কোনো লক্ষণ বোধ করেন না। অর্থাৎ কোনো উপসর্গ বা শারীরিক অসুবিধা বোধ করেন না। সুতরাং জটিলতা না হলে তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না এবং চিকিৎসাও নেন না। কিন্তু জটিলতা যখন দেখা দেয় ততদিনে রোগটি অনেক দূর গড়িয়ে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতিসাধন করে ফেলে।

উচ্চরক্তচাপ কখন বলব : অনেকে মনে করেন অতিরিক্ত টেনশন থেকে হাইপারটেনশন সৃষ্টি হয়। উচ্চরক্তচাপের সঙ্গে টেনশনের একটি দূরবর্তী সম্পর্ক থাকলেও তা সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। প্রথমত আসি হাই প্রেসার আমরা কখন বলব? আমরা যদি ব্যায়াম করি, সিঁড়ি ভেঙে চার-পাঁচতলায় উঠি বা কোনো কারণে রেগে যাই, উত্তেজিত হই তাহলে আমাদের প্রেসার সাময়িক হলেও বেড়ে যেতে পারে। নিরিবিলি পাঁচ-দশ মিনিট বিশ্রাম নিলে প্রেসার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। এটা কি তবে হাইপারটেনশন? না। হাইপারটেনশন হলো দিনের বেশিরভাগ সময় ধরে প্রেসার ওপরে উঠে বসে থাকা (persistent elevation of blood pressure)। এ জন্য আমরা যেটা করি কিছুদিনের ব্যবধানে অন্তত দু-তিনটে মাপ নেই। তাতে যদি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রেসার বাড়তি পাই অর্থাৎ ১৪০/৯০ বা তার বেশি পাই তাহলে বলব যে, তার উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হয়েছে। তবে আবার বলি হাইপারটেনশন রোগ বলার আগে ভালোভাবে নিশ্চিত হতে হবে। সঠিক পরিবেশ ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিয়ে চাপ পরিমাপ করতে হবে। যদি ওপরের প্রেসার (systolic) ১৩০-এর ওপরে কিন্তু ১৪০-এর নিচে এবং নিচের প্রেসার (diastolic) ৮০ থেকে ৯০ এর মধ্যে থাকে তাহলে তাকে ঘন ঘন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কেননা এদের প্রেসার যে কোনো সময় হাইপারটেনশনের সীমায় প্রবেশ করতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপের অসুবিধা কী?

হার্টে সমস্যা হলে রোগী সহজেই বুঝতে পারেন, কেননা রোগী বুকে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া শ্বাসকষ্ট এসব লক্ষণের মুখোমুখি হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো উচ্চরক্তচাপের রোগীদের প্রায় নব্বই শতাংশ রোগীর কোনো উপসর্গ বা লক্ষণ থাকে না। সাধারণত কোনো রুটিন চেকআপ করতে গিয়ে এটি ধরা পড়ে। মাত্র দশ শতাংশ রোগীর মাথাব্যথা, মাথা ঘুরানো, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট হওয়া ইত্যাদি উপসর্গের কথা বলে থাকেন। অর্থাৎ বিপুল অধিকাংশের কোনো উপসর্গ না থাকায় তারা চিকিৎসা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেন। তাছাড়া চিকিৎসা ব্যয়ও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে রোগের কোনো লক্ষণই নেই তার জন্য জীবনভর চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার যুক্তি তারা খুঁজে পান না। এটি একটি সমস্যা। চিকিৎসকদের ধৈর্য নিয়ে রোগীদের বুঝাতে হবে যে, প্রেসার নিয়ন্ত্রণ না করলে শরীরের ভাইটাল অঙ্গসমূূহ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। হার্ট উচ্চ রক্তচাপের বিপরীতে পাম্প করতে থাকলে তার দেয়ালগুলো অস্বাভাবিক রকম মোটা হয়ে যাবে। তার নিজস্ব রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে। করোনারি রক্তনালিতে ব্লক দেখা দিবে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে পড়বে, হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কমে গিয়ে ফুসফুসে পানি আসবে, শুতে ঘুমোতে চলতে ফিরতে রোগীর কষ্ট হবে। অর্থাৎ হার্ট ফেইল্যুর দেখা দেবে। তেমনিভাবে কিডনি ধীরে ধীরে অকেজো হবে, ডায়ালাইসিস লাগবে, কিডনি বদল করতে হবে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন অসম্ভব করে তুলবে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপে ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে, প্যারালাইসিস হয়ে জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। এছাড়া রেটিনা ধ্বংস করে দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারে। পায়ের বড় বড় ধমনীতে ব্লক সৃষ্টি করে গ্যাংরিন তৈরি করতে পারে।

 

ডা. মাহবুবর রহমান, সিনিয়র কনসালটেন্ট, কার্ডিওলজিস্ট ও সিসিইউ ইন-চার্জ, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর