শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ভার্টিগো বা মাথা ঘোরা

ভার্টিগো বা মাথা ঘোরা

‘ভার্টিগো’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ঘূর্ণিরোগ বা মাথা ঘোরা। এটা আসলে এক ধরনের অনুভূতি, যে কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করে, সে নিজে ঘুরছে অথবা তার চারপাশের সব কিছু ঘুরছে। এর পেছনে কোনো শারীরিক ত্রুটি থাকতেও পারে, আবার নাও পারে। পুরো বিষয়টি শরীরের ভারসাম্যের সঙ্গে জড়িত।

ভারসাম্য যেভাবে রক্ষা হয় : দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণের জন্য মূলত অন্তঃকর্ণ, মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য কিছু অঙ্গ কাজ করে। অন্তঃকর্ণের দুটি অংশ হচ্ছে কক্লিয়া এবং ভেস্টিবিউল। কক্লিয়া হচ্ছে সামনের অংশ, যা শ্রবণ নিয়ন্ত্রণ করে। আর ভেস্টিবিউল হচ্ছে পেছনের অংশ, যা মাথা ও শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। * অন্তঃকর্ণের ঝিল্লির মধ্যে যে তরল পদার্থ থাকে, তাতে অতি সূক্ষ্ম এবং সংবেদনশীল চুলসদৃশ অঙ্গ থাকে, যাদের বলে হেয়ার সেল। এরা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্থানে মাথার অবস্থান সম্পর্কে প্রতি মুহূর্তে সংকেত পাঠায়। * মস্তিষ্কের কিছু অংশ যেমন-সেরিব্রাম, সেরেবেলাম, ব্রেইন্সটেম শরীর ও মাথার ভারসাম্য ও অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং এদের যে কোনো একটির কাজের ব্যাঘাত ঘটলেই মাথা ঘোরাতে পারে।

উপসর্গ : চামড়া, হাড়, মস্তিষ্ক ও চক্ষুজনিত কোনো রোগ হলে ভার্টিগোর সঙ্গে শারীরিক ভারসাম্যহীনতা, বমি ভাব, সংজ্ঞাহীনতা হতে পারে। * অন্তঃকর্ণের রোগের কারণে হলে, তীব্রভাবে মাথা ঘোরানোর সঙ্গে, বমি ভাব, বমি হওয়া, গ্যাসের সমস্যা, শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে।

কারণ : মনে রাখতে হবে, অন্তঃকর্ণের কিছু সাধারণ রোগ মাথা ঘোরা বা ভার্টিগো তৈরি করে। যেমন-

বেনিগন প্যারক্সিস্ম্যাল পজিশনাল ভার্টিগো : এ অবস্থায় মাথা একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে নিলে মাথা ঘোরার অনুভূতি হয়। অবস্থান পরিবর্তন করলে তা সেরে যায়। সাধারণত ক্যালসিয়ামযুক্ত কিছু পাথর সদৃশ ক্ষুদ্র কণা অন্তঃকর্ণের নালিতে ঢুকে গেলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। কণা সরে গেলে বা বের হয়ে গেলে ভার্টিগোর অনুভূতি থাকে না। তবে ক্যালসিয়ামের পাথর ছাড়াও বয়স্করাও বিপিপিভির শিকার হতে পারেন।

মেনিয়ার্স ডিজিস : মাথা ঘোরার আরেকটি সাধারণ কারণ মিনিয়ার্স ডিজিজ। এটা মধ্যকর্ণের অসুখ। এখানে কোনো কারণে তরল, পুঁজ বা পানি জমা হলে মাথা ঘোরার অনুভূতির সঙ্গে কানে ঝিনঝিন শব্দ হয় এবং শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে কমে যায়।

ভেস্টিবুলার নিউরাইটিস : কানের আরেকটি অসুখেও মাথা ঘোরে, যার নাম ভেস্টিবুলার নিউরাইটিস বা ল্যাবেরিন্থাইটিস। ভাইরাসজনিত ইনফেকশন থেকে এ ধরনের অন্তঃকর্ণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের ইনফেকশনে অন্তঃকর্ণের ভেতরে থাকা স্নায়ুর প্রদাহ হয়।

অন্যান্য : মাথা ঘোরানোর অন্যান্য কারণের মধ্যে ঘাড় বা মাথায় আঘাত, মাইগ্রেন, ব্রেনস্ট্রোক, কানের ভেতরে আঘাত ইত্যাদি হতে পারে।

চিকিৎসা : মাথা ঘোরানো অনেক কারণে হতে পারে বিধায় এর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।

*  বিশ্রাম নিলে সাময়িক সময়ের জন্য মাথা ঘোরানো সেরে যায়। অন্যথায় চিকিৎসা নির্ভর করে কারণের ওপর। * কিছু ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিও প্রয়োজন হতে পারে। * অনেক সময় অস্ত্রোপচারেরও দরকার হয়।

অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু

বিভাগীয় প্রধান, নাক-কান ও গলা বিভাগ

মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর