মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নাক ডাকার স্বাস্থ্যঝুঁকি

নাক ডাকার স্বাস্থ্যঝুঁকি

ঘুমের মধ্যে নাক ডাকাই হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠতে পারে। ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা একটি প্রকট সমস্যা। মধ্যবয়স্ক পুরুষদের ৪০ ভাগ এবং নারীদের ২০ ভাগ জীবনের কোনো না কোনো সময় ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি বাচ্চাদেরও অনেক সময় ঘুমের মধ্যে নাক ডাকতে দেখা গেছে। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে যিনি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন তিনি তা টের পান না। কিন্তু তার পাশে যিনি থাকেন তিনি বিরক্ত বোধ করেন। এর ফলে অনেক সময় বৈবাহিক সম্পর্কে ফাটল পর্যন্ত ধরে। নাক ডাকা সমস্যার কিছু কারণ : ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিপথে কোনো বাধা পেলে বাতাস শ্বাসযন্ত্রে কাঁপুনির সৃষ্টি করে। এরই ফলে নাক ডাকার শব্দ হয়। * নাকে পলিপ থাকলে বা সাইনাসের সমস্যা থাকলে নাক ডাকা শুরু হতে পারে। * ওজন বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে গলার চারপাশের চর্বি জমা হয়। * বাচ্চাদের নাকের পেছনে মাংস (Adenoid) বৃদ্ধি পাওয়া। * বয়সের সঙ্গে নাক ডাকার সম্পর্ক আছে। যত বয়স বাড়ে কণ্ঠনালি সরু হতে থাকে। ফলে নাক ডাকা শুরু হয়। * লম্বা টান টান হয়ে শুলেও নাক ডাকে অনেকে। গলার কাছে পেশিগুলো টেনে থাকে না। আলগা হয়ে যায়। গলা থেকে নিঃশ্বাস বেরুতে অসুবিধে হয়। * গলার পেশির নমনীয়তা কমে গেলে। * ধূমপান ও অ্যালকোহল এই সমস্যা বাড়ায়। নাক ডাকার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি :  নাক ডাকা রোগীদের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম উত্তেজিত থাকে। ফলে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার বেশি থাকে যা পরবর্তীতে স্থায়ী উচ্চরক্ত চাপে পরিণত হতে পারে। * নাক ডাকা রোগীদের হার্ট অ্যাটাক বেশি হয়, হার্ট ফেইলুরের ঝুঁকি বেশি হয়, এমনকি ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যুর কারণও হতে পারে নাক ডাকা। * নাক ডাকা রোগীদের হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে। * হার্টের অলিন্দ বড় হয়ে যেতে পারে। * নাক ডাকা রোগীদের  স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

এড়াবেন কীভাবে :  যারা নাক ডাকেন তারা চিৎ হয়ে না ঘুমিয়ে কাত হয়ে ঘুমাতে পারেন। চিৎ হয়ে ঘুমালে গলার পেশি শিথিল থাকে। ফলে নাক বেশি ডাকার আশঙ্কা থাকে। * ওজন কমালেও অনেক সময় নাক ডাকা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। * অ্যালকোহল ও নেশা জাতীয় দ্রব্য

পরিহার অবশ্যই করতে হবে।

* মাথার নিচে কয়েকটি বালিশ দিয়েও নাক ডাকা কমানো যেতে পারে। মাথার নিচে বালিশ দিলে বুকের চেয়ে মাথা বেশি উঁচুতে থাকে। এতে করে নাক ডাকার আশঙ্কা কিছুটা কমে যায়। * ধূমপান করলে শরীরের অক্সিজেন ব্যবহারের ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে বাতাস বের হওয়ার পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ কারণেও নাক বেশি ডাকতে পারেন অনেকে। তাই ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। * প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া। এতে করে ঘুমের সঙ্গে শরীরের এক ধরনের সামঞ্জস্য তৈরি হয়। ফলে অভ্যাসেরও পরিবর্তন হয়। * ্ব্যায়াম করলে রক্তের চলাচল বাড়ে, ফলে ঘুমও ভালো হয়। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। সবচেয়ে বড় কথা এসব বিষয়ে অবহেলা করা ঠিক নয়। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে অবহেলা করলে একটা সময় জটিলতা বাড়ে। মনে রাখবেন, এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ উত্তম।

অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু, বিভাগীয় প্রধান, নাক-কান ও গলা বিভাগ, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর