শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দীর্ঘমেয়াদি কাশি ও হৃদরোগ

দীর্ঘমেয়াদি কাশি ও হৃদরোগ

ঘনঘন কাশিতে আক্রান্ত হওয়া ও দীর্ঘমেয়াদি শুকনো কাশির অন্যতম কারণ হৃদরোগ। যাদের দীর্ঘদিন যাবৎ উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎপিন্ডে  ভাল্বের সমস্যা আছে এবং বাতজ্বরজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত, তাদের মধ্যে এ ধরনের কাশির প্রবণতা অধিক হারে লক্ষ্য করা যায়। মাইওকার্ডাইটিস এক ধরনের প্রদাহজনিত অসুস্থতা যার ফলে শুকনো কাশি ও তার সঙ্গে জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং ক্ষেত্র বিশেষে হাত, পা ও মুখ ফুলে যায়, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাস কষ্ট হওয়ার মতো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। সাধারণভাবে ভাইরাস জ্বরের প্রভাবে মাইওকার্ডাইটিস হয়ে থাকে তবে অন্য অনেক কারণে মাইওকার্ডাইটিস হতে পারে। যেমন- কিডনি ফেইলুর, যক্ষ্মা, বাতজ্বরজনিত জটিলতা ও ক্যান্সারের ক্যামোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি ইত্যাদি।

কার্ডিওমাইওপ্যাথি হৃৎপিন্ডের মাংশপেশির এক ধরনের অসুস্থতা যার ফলে দীর্ঘমেয়াদি কাশি ও শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়, বুকে ব্যথা হয়ে থাকে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে মনে করতে হবে যে, রোগীর হার্ট বেশ দুর্বল হয়ে গেছে এবং জরুরি ভিত্তিতে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে, তা না হলে রোগীর জীবন বিপন্ন হয়ে যেতে পারে। কার্ডিওমাইওপ্যাথি অনেক কারণে হতে পারে। যেমন-হৃৎপিন্ডের রক্তপ্রবাহের স্বল্পতা বা করোনারি আর্টারি ডিজিজের (ব্লক), যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন বা উচ্চ রক্তচাপ জনিত অসুস্থতায় ভুগছেন অথবা হৃৎপিন্ডের ভাল্বের সমস্যায় ভুগছেন কিংবা জন্মগত হৃদরোগে ভুগছেন। এ ছাড়াও বার্ধক্য, বংশগত ও প্রসবকালীন অসুস্থতার ফলে কার্ডিওমায়োপ্যাথি হতে পারে।

সাধারণত হৃদরোগজনিত কাশি দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। কফ সিরাপ বা এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ এতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে না। কাশি শুকনো ধরনের হয়ে থাকে, কাশির সঙ্গে কফ খুব একটা বের হয় না। কখনো কখনো ফেনা ফেনা জাতীয় কফ বের হতে পারে। এ ধরনের কাশি বিশ্রামকালীন সময়ের চেয়ে পরিশ্রম করার সময় বেশি পরিলক্ষিত হয়। কারও কারও রাতের বেলায় কাশি বেশি বেড়ে যায়, ঘুম ভেঙে যায় এবং প্রায়ই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। অনেকের রাতে বিছানায় শুতে গেলে কাশি শুরু হয়ে যায় এবং উঠে বসলে তা প্রশমন হয়। এ ধরনের কাশি বেশি দিন থাকলে রোগীর বুকে, পেটে ও পিঠে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক সময় পেটে পিঠে খিল দিয়ে ধরার মতো অবস্থা হয়ে যায়। যা অত্যধিক কষ্টকর, অনেকের কাশির সময় কাপড় নষ্ট হওয়ার মতো প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। ক্ষেত্র বিশেষে কাশির সঙ্গে রক্ত দেখা দিতে পারে।

বাচ্চাদের ঘনঘন সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হওয়া তার সঙ্গে বয়স অনুপাতে ওজন বৃদ্ধি না পাওয়া এবং শারীরিকভাবে সমবয়সী বাচ্চাদের চেয়ে দুর্বল থাকা, জন্মগত হৃদরোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। জন্মগত হৃদরোগের বেশ কয়টি ধরন আছে তার মধ্যে হার্টে ছিদ্র (ASD.VSD.TOF.PDA) থাকার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।  হার্টে ছিদ্র থাকার প্রভাবে শিশুদের শারীরিক লক্ষণ সব সময় একই ধরনের হয় না। কোনো কোনো শিশুর জন্মের পরপরই হৃদরোগের লক্ষণ পরিলক্ষিত হতে থাকে। আবার কারও হৃদরোগের লক্ষণ ৫০-৬০ বছর বয়সে প্রথম দেখা দিতে পারে। এটা নির্ভর করে ছিদ্রের আকার, ছিদ্রের অবস্থান, ছিদ্রের ধরন ও শিশু পুষ্টি, স্বাস্থ্যগত পরিবেশ এবং অন্যান্য অসুস্থতার প্রভাবের ওপর। তবে যে সব শিশুদের (VSD.TOF) এরমতো ছিদ্র থাকে তারা শিশুকাল অথবা বাল্যবয়স থেকেই রোগের উপসর্গে ভুগতে থাকে। প্রাথমিক উপসর্গ হিসাবে অত্যধিক কান্নাকাটি করা, খাদ্য গ্রহণ করতে না পারা, কান্নাকাটি করার সময় বাচ্চার শরীরের রং পরিবর্তন হয়ে নীল বর্ণ ধারণ করা, কখনো কখনো বাচ্চার খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে। এসব বাচ্চা খুব ঘনঘন ঠান্ডা বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাল্য বয়সেও উপরের উপসর্গগুলো বিদ্যমান থাকে তার সঙ্গে তাদের ওজন বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়া, খেলাধুলায় আগ্রহ কমে যাওয়া বা শারীরিক দুর্বলতার জন্য খেলতে যেতে না চাওয়া, পরিশ্রম করতে গেলে সহজে হাঁপিয়ে ওঠা।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর