শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ক্ষণিকের ব্যথা এনজিনা

ক্ষণিকের ব্যথা এনজিনা

আপনার বয়স ৪০ এর উপরের কিছুদিন যাবৎ খেয়াল করছেন, কাজকর্ম করতে গেলে আগের চেয়ে বেশি হাঁপিয়ে উঠছেন। যাচাই করার জন্য আগের মতো পরিশ্রম করার চেষ্টা করলে আরও বেশি হাঁপিয়ে যাচ্ছেন এবং শরীর বেশি ঘেমে যাচ্ছে। যদি একটু তাড়াহুড়া করে হাঁটতে বা অন্য কোনো কর্ম সম্পাদন করতে যান, তাহলে আপনার বুকে চাপ দেওয়ার মতো ব্যথা অনুভব করছেন, কখনো কখনো বুকে চাপ এত বেশি হচ্ছে যে, আপনি তাৎক্ষণিকভাবে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। একটু ঘেমে গেলে বা বসে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে চাপটা কমে যাচ্ছে। অনেক সময় পেট থেকে ঢেঁকুর তুলে গ্যাস বের করলে বা পানি পান করলে চাপ কমে গিয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছেন। কারও কারও বুকে চাপ অনুভূত না হয়ে বুকের মধ্যখানে বা ডানে-বামে ব্যথা অনুভূত হয়, তার সঙ্গে নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসা ও বুক ধড়ফড় করা বা তার সঙ্গে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো এসব উপসর্গের সঙ্গে মাথাঘোরা বা চোখে অন্ধকার দেখা বা চোখে শর্ষেফুল দেখার মতো অনুভূত হতে পারে। তবে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই পানি খেলে, গ্যাসের ওষুধ খেলে বা গ্যাস বের করলে বা শুধু বিশ্রাম নিলেই এ ধরনের অসুবিধাগুলো সম্পূর্ণভাবে উপসম হচ্ছে এবং পরবর্তীতে আবার পরিশ্রম করতে গেলে আগের মতো একই ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। তবে কখনো কখনো একই মাত্রার পরিশ্রম অনায়াসেই করতে পারছেন কোনোরূপ উপসর্গ ছাড়াই, আবার কখনো তা পারছেন না। এসব কিছু বিবেচনা করে অনেকেই এর জন্য পেটের গ্যাসকে দায়ী করে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের মেডিসিন গ্রহণ করছেন। অনেকে গ্যাসের আরও পাওয়ারফুল মেডিসিন খুঁজতে গিয়ে অনেকবার গ্যাসের ওষুধ বদল করেছেন কিন্তু তাতে খুব ভালো ফল পাচ্ছেন না। অনেকের পরিশ্রম করার সময় বুক ব্যথা বা বুকে চাপ অনুভূত করার সময় ঘাড়ে, চোঁয়ালে বা পিঠে ব্যথা ধরে থাকার মতো অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন।  উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলোকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এনজিনা বলা হয়। যার উদ্ভব এবং নিরাময় খুবই তাৎক্ষণিক হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি এ নিয়ে অনেক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকেন এবং বিভিন্ন জন এর কারণকে  বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করে থাকে। তাৎক্ষণিক উদ্ভব ও তাৎক্ষণিক নিরাময় হওয়ার জন্য বেশির ভাগ মানুষই একে গ্যাসের উৎপত্তিকে দায়ী করে থাকেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই আরোগ্য লাভ করার ফলে মানুষের ধারণা আরও পরাভূত হয় যে এটা গ্যাসের জন্যই হচ্ছে এবং গ্যাসের ওষুধ নিয়মিত সেবন করতে থাকেন কিন্তু গ্যাসের ওষুধ সেবন করেও এর থেকে মুক্তি পান না। হৃৎপিন্ডে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ফলে পরিশ্রমকালীন বা তাড়াহুড়া করে স্বাভাবিক কর্মসম্পাদনের সময়ে হৃৎপিন্ড প্রয়োজনীয় পরিমাণে রক্ত সরবরাহ না পাওয়ার ফলে এনজিনার অনুভূত উপলব্ধি হয়ে থাকে এবং কাজ বন্ধ করলে বা বিশ্রাম গ্রহণ করলে হৃৎপিন্ডের রক্ত সরবরাহের চাহিদা কমে যাওয়ায় এনজিনার ব্যথা দূরীভূত হয়ে যায়। আপনি গ্যাস বের করেন অথবা না করেন, আপনি গ্যাসের ওষুধ সেবন করেন বা না করেন, পানি পান করেন অথবা না করেন তাতে কিছু যায় আসে না, বিশ্রাম গ্রহণ করলে কাজ বন্ধ করে দিলে অতিদ্রুত এ ব্যথা বা অস্বস্তি দূরীভূত হবে এটাই এনজিনার স্বাভাবিক আচরণ। এনজিনা হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ। এমন হলে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে  চিকিৎসা গ্রহণের ফলে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবেন।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর