রবিবার, ১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

মাথাব্যথার কারণ ও লক্ষণ

অধ্যাপক ডা. এমএস জহিরুল হক চৌধুরী

মাথাব্যথার কারণ ও লক্ষণ

মাথাব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সেই এই মাথাব্যথার প্রকোপ পরিলক্ষিত হয়। যেসব কারণে একজন মানুষের কার্যক্ষমতা এবং কার্যসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে এই ‘মাথাব্যথা’। ¯œায়ুরোগের মধ্যেও মাথাব্যথার হার সবচেয়ে বেশি। বারংবার মাথাব্যথার কারণে ভুক্তভোগীরা পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক এবং পেশাগত জীবনে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মাইগ্রেনের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ-

১। মাথার যে কোনো একপাশে ব্যথা হয়। একবার একপাশে ব্যথা হলে পরবর্তীবার অন্য পাশেও ব্যথা হতে পারে। ২। ৪ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যথা স্থায়ী হতে পারে। ৩। রক্তনালি (ধমনী/শিরা) সংকোচন/প্রসারণ বা টনটন প্রকৃতির ব্যথা অনুভূত হয়। ৪। ব্যথা অত্যন্ত তীব্র হয় এবং এ সময় কোনো কাজ করা যায় না। ৫। আলো বা শব্দে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়। ৬। ব্যথার সঙ্গে বমিভাব বা বমি হতে পারে। ৭। ব্যথা শুরুর আগে চোখের সামনে আলোর নাচানাচি, আঁকাবাঁকা লাইন ইত্যাদি দেখে রোগী মাইগ্রেন আগমন বুঝতে পারে। ৮। অন্ধকার ঘরে শুয়ে

থাকলে ব্যথার তীব্রতা কমে।

টেনশন টাইপ হেডেক : আমাদের জেনে রাখতে হবে শতকরা ৭০ ভাগ বয়স্ক মানুষের এ ধরনের মাথাব্যথা হয়ে থাকে। টেনশন টাইপ হেডেকও মাইগ্রেনের মতো কৈশরে শুরু হয় এবং মহিলাদের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়। মাথার মাংসপেশির সংকোচনের কারণে এই মাথাব্যথা হয়।

টেনশন টাইপ হেডেকের লক্ষণসমূহ নিম্নরূপ-  ১। পুরো মাথাজুড়ে ব্যথা হয়। ২। একটা চাপ-চাপ বা ব্যান্ড-এর মতো ব্যথা অনুভূত হয়। ৩। ব্যথা মাইগ্রেনের মতো ততটা তীব্র হয় না। রোগী ব্যথা নিয়ে সব ধরনের কাজকর্ম করতে পারেন বরং কাজের সময় ব্যথা অনুভব করা যায় না কিন্তু কাজ শেষ করলেই আবার মাথাব্যথা ফিরে আসে।

৪। সাধারণত মাথাব্যথার সঙ্গে বমিভাব বা বমি হয় না। ৫। এ মাথাব্যথা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। ৬। দুশ্চিন্তা, পারিবারিক বা পেশাগত বা মানসিক চাপের সঙ্গে এই মাথাব্যথার সম্পর্ক আছে।

ক্লাস্টার হেডেক : তুলনামূলকভাবে ক্লাস্টার হেডেক অনেক কম দেখা যায়। শতকরা ০.১ ভাগ মানুষের এ ধরনের মাথাব্যথা হয়। পুরুষ মানুষের মধ্যে এ ধরনের মাথাব্যথার প্রকোপ বেশি। আনুমানিক হার পুরুষ: মহিলা=৬:১। ক্লাস্টার হেডেক লক্ষণসমূহ নিম্নরূপ- ১। ক্ষণস্থায়ী বারবার হয়। ২। অত্যন্ত তীব্র ব্যথা হয়। ৩। চোখের চারপাশে বা পেছনে ব্যথা হয়। ৪। চোখ লাল হয়ে যায় এবং পানি পড়ে। চোখের উপরের পাতা পড়ে যেতে পারে। ৫। প্রতিদিন একই সময়ে বা দিনে কয়েকবার ব্যথা হয় এবং কয়েক সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী হয়। এরপর ব্যথা চলে যায় এবং কয়েক মাস/ বছর পর আবার একইভাবে ব্যথা আরম্ভ হয়।

সেকেন্ডারি হেডেক : শারীরিক বা মাথার বিভিন্ন রোগের করণে মাথাব্যথা হতে পারে। এসব মাথাব্যথাকে সেকেন্ডারি হেডেক বলে। যেমন- (টাইফয়েড, ভাইরাল), মস্তিষ্কের আবরনী প্রদাহ (ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়ার বা টিউমারফুলার মেনিন্জাইটিস), সাইনোসাইটিস, মাসটয়েডাইটিস, মস্তিষ্কের টিউমার, রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, (ঝঅঐ), মাথায় আঘাতজনিত কারণ ইত্যাদি।

রোগ নির্ণয় : এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনেক উন্নতির ফলে অতি সহজে মাথাব্যথার রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। সিটি স্ক্যান, এম আর আই বা পিইটি স্ক্যানের মাধ্যমে মাথার বিভিন্ন অংশের সুস্পষ্ট ছবি পাওয়া যাওয়ার মাথা ব্যথা কারণ উদ্ঘাটন সম্ভব হয়েছে। মাথাব্যথার ধরন বা কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়। এজন্য প্রথমে প্রয়োজন রোগ নির্ণয় করা। তাই অবহেলা না করে এ বিষয়ে যত্নবান হোন। মনে রাখতে হবে, প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম। অন্যথায় এ ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে।

লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি

বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর